একটি পোস্টার ও কিছু কথা

ওয়াসিম ফারুক
Published : 4 March 2017, 05:13 PM
Updated : 4 March 2017, 05:13 PM

পোস্টার প্রচারনার একটি বিশেষ মাধ্যম । জনসচেতনতা, প্রতিরোধ, প্রতিবাদ পণ্যের প্রচারনা কিংবা নির্বাচন প্রায় সব প্রচারনার মাধ্যম পোস্টার। আমাদের দেশে পোস্টার আজ এক আতংকের  নামও বটে। নগরীর সৌন্দর্য বিনষ্টের সাথে সাথে আমাদের মানবিকতা বিনষ্টের ও অন্যতম প্রধান কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পোস্টার। একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন সংগঠনের নানা ধরনের পোস্টার দেখে অনেকটাই আতংকিত হতাম। তবে আমি আজ তেমন কোন পোস্টার নিয়ে বলবো না আজ আমি বর্তমান সময়ের পোস্টার নিয়ে এমন কিছু কথা বলবো যা সত্যিকারেই আমাদের ভাবিয়ে তুলবে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টার ভাইরাল হয়েছে। পোস্টারটি দেখলেই প্রথম ঝলকে মনে হয়তে পারে এটা হয়তো কোনো জাতীয় নির্বাচন কিংবা স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের পোস্টার। দৃষ্টি কাছে গেলেই আপনার চোখ কপাল ছেড়ে মাথার তালুতে উঠে যাবে। কেননা এটা কোন জাতীয় কিংবা স্হানীয় এমন কি অন্য কোন নির্বাচনের পোস্টার নয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন হতে পারে তাহলে কোন নির্বাচনের পোস্টার যা দেখলে চোখ মাথার তালুতে উঠে যাবে? কারণ পোস্টারটিতে আছে একটি শিশু প্রার্থীর ছবি।

ছোটবেলায় যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি বইয়ের দোকান থেকে মা নতুন ক্লাসের বই কিনে এনে দিলে গন্ধ শুকতে কি যে আনন্দ তা কি আর বোঝানো সম্ভব। তারপর স্কুলে যেয়ে শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করে প্রথম ক্লাসে ঢোকা। এরপর স্যার বা ম্যাডাম অবশ্য আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষিকা ছিলেন তাকে কখনোই বর্তমানের ম্যাডাম বা মিস বলে ডাকিনি সব সময় আপা বলেই ডাকতাম। তিনিও আমাদের ঐ ভাবেই আদর করতেন। প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক ক্লাশে ক্লাশ নেয়ার সময় ক্লাসে এক ও দুই রোলধারিকেই ক্লাস ক্যাপ্টেন প্রথম ও দ্বিতীয় করতেন। সেই সাথে প্রথম-দ্বিতীয়তে মেয়ে না থকলে মেয়েদের থেকে একজনকে ক্লাস ক্যাপ্টেন নিযুক্ত করতেন।

এই কথাগুলি বলার কারণ, যে পোস্টারটি ফেসবুকসহ নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে সেটা হলো মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের আব্দুল বারী খান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচনের জন্য এক শিশু প্রার্থীর পোস্টার, যা ঐ বিদ্যালয় ও তার আশেপাশের দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে। বর্তমান সময়ে যে কোন উপলক্ষ্যেই আমাদের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার পাতিনেতাসহ নানান ব্যক্তির পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায় সারা দেশ। অনেক ক্ষেত্রেই ভুলে ভরা নানান পোস্টারও ঝুলতে দেখা যায় দেয়ালে দেয়ালে যা আমাদের লজ্জিত করে। আবার যখন দেখি পাড়া-মহল্লাসহ সমাজের কোন চিহ্নিত অপরাধী বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে নানান জাতীয় নেতার ছবিসহ পোস্টার সাঁটিয়ে নিজেকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে জাহির করে তখন রীতিমত শংকিত হয়ে যাই।

আমাদের রাজনীতিতে এখন যতটা না মেধার মূল্যায়ন হয় তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যায়িত হয় পেশি শক্তি ও টাকা। হয়তো সেই কারনেই রাজনীতি আজ বাণিজ্যে পরিনত হয়েছে। তথাকথিত অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছেই কেন জানি মনে হয় রুপকথার আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ আছে। তাদের দেখাদেখি প্রায় প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতাই নেমেছেন আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপের খোঁজে। নীতি যেখানেই যাক অর্থ-সম্পদই আজ অনেকের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই বোধকরি প্রচার ও ক্ষমতার লোভ আজ শিশুদের মনে ও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সেই লোভেই হয়তো নিজের প্রচারের প্রতি ঝুঁকেছে কোমলমতি ঐ শিশুটি। শুধু আব্দুল বারী খান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ঐ শিশুটিরই নয় ঢাকার শহরের অনেক এলাকায়  ঘুরলে দেখা যায় নবম কিংবা দশম শ্রেনীর অনেক শিশু-কিশোরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র কিংবা রাজনৈতিক আর্শীবাদপুষ্ট কোন সংগঠনের ইউনিক নেতা কর্মী হিসেবে প্রচার করা পোস্টার ও ফেস্টুন। শিশু-কিশোরদের মনের ভিতর এ ধরনের আকাংখাই আজ শিশু কিশোরদের মনের ভিতর অপরাধ প্রবনতার জন্ম দিচ্ছে। আর সেই অপরাধ প্রবনতার প্রয়াস থেকেই অনেক শিশু-কিশোর আজ অপরাধের অন্ধকার জগতে পা রাখছে। তাই শিশু-কিশোরদের মনের ভিতর এ ধরনের আকংখা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কতটুকু মঙ্গল বয়ে আনবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের আজ কর্তব্য হবে শিশুদেরকে শিশুদের মতই থাকতে দেয়া তা না হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না ।