ঐক্যের মাধ্যমেই জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব

ওয়াসিম ফারুক
Published : 31 March 2017, 05:45 AM
Updated : 31 March 2017, 05:45 AM

এই মুহুর্তে আমাদের দেশের যে কোন সচেতন মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয় দেশের প্রধান সমস্যা কি? বিনা দ্বিধায় তিনি উত্তর দিবেন জঙ্গিবাদের আগ্রাসন। উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান শক্তি সঞ্চয় ও একের পর এক ভয়াবহ হামলা আজ সমগ্র জাতিকে স্তব্ধ করে ফেলেছে। সারা বাংলাদেশই আজ কেমন জানি এক শুনশান নীরব রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশের মানুষই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, উৎকণ্ঠিত। বিশেষ করে সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ও ঢাকার আশকোনাতে পর পর দুইটি আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা আমাদের এই দুশ্চিন্তা কয়েক গুনে রাড়িয়ে দিয়েছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানার জঙ্গিরা যে ধৃষ্টতা, সাহস ও শক্তি দেখিয়েছে তা এক প্রকার তাদের বাস্তব রূপই। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো এর চেয়েও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে এসব উগ্র জঙ্গিরা। আমাদের দেশে বর্তমানে জঙ্গিরা আগের চেয়ে যে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী তার প্রমাণ মিলে সিলেটে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর। যখন পুলিশ-র‌্যাব-সোয়াত সহ নানা বাহিনী মিলেও অভিযান সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তখনই তলব করা হয় সেনাবাহিনীকে। আপরেশনে অংশ নেয়ার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদিকদের বিফ্রিংকালে একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন জঙ্গিরা এতটাই প্রশিক্ষিত যে সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বারবার তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর ছুড়ে দেয়া গ্রেনেড কুড়িয়ে নিয়ে জঙ্গিরা ফের সেনাবাহিনীর দিকেই নিক্ষেপ করে। তার এমন মন্তব্যই জঙ্গিদের শক্তি ও সাহসের কথা আমাদের জনান দেয়।

আমাদের দেশের উগ্র জঙ্গিরা যে আত্মঘাতী পন্থা অবলম্বন করেছে তা হয়তো নতুন নয়, যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে হামলা, ঢাকার মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভায় বোমা হামলা, ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জের বানিয়ার চর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলা, পহেলা বৈশাখে রমনার বটমুলে বোমা হামলা- এগুলির প্রায় সবই ছিল জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলা। এরপর আমরা দেখেছি জঙ্গিদের চায়ের ফ্লাক্স আতংক। সাধারণ চা বিক্রেতার চায়ের ফ্লাক্স দেখেও অনেক পুলিশ সদস্য নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ভোঁ-দৌড় পর্যন্ত দিয়েছেন।

আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাম্প্রতিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান গুলোতে আমরা মোটামুটি একই চিত্র দেখেছি। তা হলো প্রতিটি অভিযানই শেষ হয়েছে প্রায় সব জঙ্গিদের হত্যার মধ্য দিয়ে। যদিও দুয়েকটি অভিযানে দুয়েকজনকে আহত অবস্হায় ধরা গেছে, তবে তাদের কাছ থকে কতটুকু নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে প্রতিটি অপারেশনের পরপরই আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তি সহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে শুনেছি এ অভিযানে নেতৃত্বে থাকা জঙ্গিদের নির্মূল করা হয়েছে। তবে তাদের এমন বক্তব্য যে শুধুমাত্র আমাদের জন্য শান্তনা স্বরূপ তার প্রমাণ একের পর এক জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পাওয়া ও সেসব আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে মিলছে।

সিলেটের জঙ্গিআস্তানার অভিযান আমাদের নতুন বিষয় শিক্ষা দিয়েছে যে, জঙ্গিরা শুধু নির্দিষ্ট কোথাও আস্তানাই করছে না, তাদের আস্তানাকে পাহারা দেওয়ার জন্য বাইরেও আছে তাদের বিশাল শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সেনাবাহিনী সহ সকল বাহিনীর একযোগে লড়ছে ভিতরে থাকা জঙ্গিদের গুটিকয়েক জঙ্গির বিরুদ্ধে।আর বাইরে থেকে জঙ্গিদের সহযোগিরা বোমা মেরে হত্যা করলো দুই জন পুলিশসহ ছয় জন মানুষকে, আহত হতে হলো অরো অর্ধশত মানুষকে। এ থেকেই স্বাভাবিক নজরে আমাদের দেশের জঙ্গিদের শক্ত অবস্হান আমাদের জানান দেয়।

তবে বেদনার হলেও সত্যি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির এই নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে আমার মনে হয় না। জঙ্গিবাদের মত একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আমাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গুলির ভূমিকাও আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ, উৎকণ্ঠিত করেছে। আমার কাছে মনে হয় কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর কেউ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই জঙ্গিবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে আমাদের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ আর সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি বর্তমান সময়ের আলোচিত ও চিন্তিত এই ইস্যু নিয়ে একে অপরের গায়ে যে কাঁদা ছুড়ছে তা কখনোই একটি সুস্থ্য রাজনৈতিক ধরা হতে পারে না। জঙ্গিবাদ আজ আওয়ামীলীগ সরকারের সময় যেমন আছে তেমনই বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও ছিল। বাংলাদেশে জঙ্গিদের আজ যে শক্ত অবস্থান তাতে মনে হয় না খুব তাড়াতাড়ি জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব। তবে আমাদের সকল রাজনৈতিক শক্তিগুলি যদি ক্ষমতার মোহ ভুলে যেয়ে সুস্থ্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা বজায় রেখে জনগণকে সাথে নিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূলে কাজ করে তাহলে অবশ্যই অবশ্যই জঙ্গিবাদের অপশক্তি বাংলার মাটি থেকে নির্মূল হবেই হবে।