বছরে ২০ হাজার শিশুর লাশের ওপর গড়ে উঠুক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’

জাহেদ-উর-রহমান
Published : 12 Nov 2014, 12:49 PM
Updated : 12 Nov 2014, 12:49 PM

এক সময়, যখন কাগজের ক্যালেন্ডারের খুব চল ছিল তখন একটা ছবি ক্যালেন্ডারে দেখতাম। খুব পরিচিত একটা ছবি – শিশুরা অল্প পানিতে নেমে হাতে করে শিউলি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাসছে। বলাই বাহুল্য গ্রামের দরিদ্র শিশুরা, উদোম গায়ে। ওদেরকে দেখতে ভীষণ ভাল লাগতো – হোক গরীবের, তবুও বাচ্চা তো!

আজকের খবরের কাগজের একটা খবর – কুষ্টিয়া শহরতলীর বারখাদা বিলে শিউলি ফুল তুলতে যায় তিন শিশু, বয়স ৪/৫ বছর। ক্যালেন্ডারের ছবির মত তাদের পরিণতি হাসিমুখ দিয়ে শেষ হয়নি, ফুল হাতে নিয়ে খুশিতে লাফাতে লাফাতে ফিরতে আর পারেনি, তারা মারা গেছে।

আজকের খবরের কাগজের আরেকটা খবর – আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সন্মেলন করেছেন। এই সেন্টারগুলো থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা রকমের সেবা দেয়া হয়। সাফল্যটা ভাল, আর সরকার দারুণ গলা চড়িয়ে এটা প্রচারও করছে – দেশ ক্রমাগত 'ডিজিটাল' হয়ে উঠছে।

কিন্তু এই 'ডিজিটাল' বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। হ্যাঁ ২০ হাজার। প্রতিদিন ৫৫ জন। শিশুদের মৃত্যুর একটা প্রধান কারণ এটা। সরকার আর কিছু এনজিওর দিক থেকে কিছু দায়সারা গোছের কাজ করা হয়, কিন্তু এটা এই মৃত্যুর মিছিল ছোট করতে পারেনি মোটেও। সংখ্যাটা বাড়ছেই প্রতি বছর।

দেশের দন্ডমুন্ডের কর্তাদের হাতে অনেক বড় বড় কাজ, চোখে অনেক স্বপ্ন – প্রকান্ড সেতু, বিরাট চওড়া রাস্তা, ফ্লাইওভার আর 'ডিজিটাল' বাংলাদেশ। দেশটা ডিজিটাল হোক, সফল হোক আমাদের সবার স্বপ্ন। আমরাও এই ডিজিটাল উন্নয়নে শরীক হই – থ্রি জি তে তো আর পোষাচ্ছে না, আরো গতি চাই। তাড়াতাড়ি ফোর জি চালু করার দাবী জানাই সরকারের কাছে। রকেট গতির ইন্টারনেট নিয়ে দারুণ মাস্তি হবে – ফেইসবুক, পর্ণ।

প্রতি বছর গরীব জন্মে লাখে লাখে, হাজারে হাজারেই তো মরবে। এটা নিয়ে আবার কথা কী?