ধর্ষক কারা?

জহিরুল হোসাইন খান
Published : 22 May 2017, 08:38 AM
Updated : 22 May 2017, 08:38 AM

আপনার আমার অতি আদরের ছেলেরাই ধর্ষক। ওরা ধর্ষক হয়ে জন্ম নেয়নি। কিন্তু আমাদের ধার করা পাশ্চাত্য কালচার, বাবা-মা এর সঠিক পর্যবেক্ষণ না থাকা, সমাজের অস্থিরতা, সর্বোপরি ধর্ষকের যথা সময়ে সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার কারণেই ধর্ষকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ধর্ষকের পরিবার। প্রত্যেক পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই যদি প্রথম থেকেই সেই ভিন্ন চরিত্রের মানুষটিকে দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায় রাখতে পারতো, তাহলে হয়তো ধর্ষক খেতাবটি সেই সন্তানের বহন করতে হতো না কিংবা বাবা-মা, ভাই-বোন এর মাথা নিচু করে সমাজে চলতে হতো না।

ধর্ষণ কথাটা শুনলে এখন আর তেমন আঁতকে উঠিনা বা আশ্চর্যও হইনা। যে দেশে প্রতিনিয়ত মেয়েরা ধর্ষিতা হচ্ছে, যার কোন যথাযথ বিচার হচ্ছেনা বরং মজবুত খুটির জোরে ধর্ষক পার পেয়ে যাচ্ছে, সেই অপরাধী পুনঃশ্চ একই কাজ করে যাচ্ছে, সমাজ দেখছে কিন্তু নীরব ভূমিকা পালন করছে। সমাজও আজ কলুষিত। এখনকার সমাজ সৃষ্টি করেন তারাই, যাদের অর্থ, সম্পদ আছে, লাঠির জোর আছে, আছে রাজনৈতিক প্রতিপত্তি।

যে দেশের মন্ত্রী মহোদয়গণ, জনগণের  ভোটে নর্বাচিত হয়ে মন্ত্রীসভায় বসার সুযোগ পান, যদিও এ দেশে জনগণের ভোট দেয়ার জন্য সরাসরি ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না, ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের পোষ্য মাস্তানরাই ভোট সংগ্রহের কাজটি  ছলে, বলে, কৌশলে করে থাকেন। যে দেশে মিথ্যাবলা আর হিংসার রাজনীতি সার্বক্ষণিক চলছে, সে দেশ থেকে আমরা কতটুকুই বা সুষ্ঠু বিচার আশা করতে পারি? যে দেশে অপরাধীকে কোন প্রভাবশালীর নির্দেশে আড়ালে রাখার চেষ্টা করা হয়, সে দেশে প্রশাসন থেকে আমরা কি আশা করতে পারি?

মন্ত্রী মহোদয়গন জনগণের প্রতিনিধি, যদিও জনগণ বলতে জনগণ নয় সেখানে রাজনৈতিক সমর্থকরাই জনগণ হয়ে দৃশ্যপটে অভিনয় করেন। মন্ত্রী মহোদয়গণ পুলিশ নিয়ে চলেন বলেই পুলিশের অন্যায় কাজগুলো মন্ত্রীমহোদয়দের আশীর্বাদপুষ্ট  হয়ে ন্যায় কাজে পরিণত হয়। ফলে সহজেই কেউ পুলিশের টিকির কাছেও যেতে পারেন না।

কিছুদিন যাবৎ দেশজুড়ে গুঞ্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষিতা দুই শিক্ষার্থী, তাদের ন্যায্য বিচার পাবে তো? এমন মনে করার কারণও আছে। এ সুযোগটি পুলিশই করে দিয়েছেন। ধর্ষিতাদের মামলা বিলম্বে নেয়া, ধর্ষককে গ্রেপ্তার এর ব্যাপারে কচ্ছপ গতিতে চলা, এ সবই পুলিশের প্রতি আস্থা হারানোর কারণ। যখনই সামাজিক আন্দোলন শুরু হলো, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, সুধীজন সহ এক হয়ে গেলো, তখনই উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শাফাত ও শাকিফকে গ্রপ্তার করা হলো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ তিন আসামীই থাকলো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

আশ্চর্য  হতে হলো, একজন ধর্ষক আসামির কথা শুনে, মিডিয়ার সামনে পুলিশকে বলে কিনা (পত্রিকার ভাষায়) আপনারা আমার কিছুই করতে পারবেননা। এ ধৃষ্টতা কোথায় পেলো? বিত্তবানের ছেলে বলে? না প্রভাবশালী কারো মদদ পুষ্ট হয়ে?  বিত্তবান হলেই যে ভদ্রলোক হবে এ কথাটি ঠিক নয়। এর প্রমাণ তো দিয়েই দিল। কতটুকু নির্লজ্জ আর প্রভাবশালী হলে এমন কথা বলতে পারে? অন্য এক অপরাধীর বাবা বলেন (পত্রিকার ভাষায়) এ বয়সে ছেলেরা এমন কিছু করেই থাকে। কতটুকু নিকৃষ্ট ও নির্লজ্জ হলে এ কথাগুলো কোন বাবার মুখ থেকে বের হয়ে আসে তা পাঠকগণ নিশ্চই অনুধাবন করতে পেরেছেন ?  তারমানে দাঁড়ালো তিনি এ বয়সে এমন কাজই করে এসেছেন। এমন বাবা পরিবারের, সমাজের তথা দেশের  বিষফোঁড়া।

যে দেশে সাত বছরের শিশুও ধর্ষিত হয়, সে দেশের মানুষদের নৈতিক অবস্থান যে কী তা কারও বুঝতে বাকী নেই। ১৪/৫/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত হলো। মা'কে নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন পত্র পত্রিকায় দিয়েছেন। ঐ দিনের প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম পাতায় " সংবাদ বিশ্লেষণ " শিরোনমে জনাব আনিসুল হক লিখেছেন " আমরা মা দিবস পালনে অযোগ্য "। তিনি যথার্থই বলেছেন। উনার লেখার সাথে আমি একমত পোষণ করি। যে দেশে সাত বছরের শিশু ধর্ষিত হয়, যে দেশে পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে না পেয়ে কষ্টে, যন্ত্রণায় সন্তানকে নিয়ে রেলগাড়ির নিচে ঝাঁপ দিয়ে মারা যেতে হয় । যে দেশে প্রতিনিয়ত মা, বোন, স্ত্রী ধর্ষিতা হচ্ছে, সে দেশে মা এর প্রতি যে খুব ভক্তি আছে কি করে বুঝব? যেখানে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষিতা হয় সেখানে কি মা এর সন্তানরা কেউ ছিলনা? ধর্ষকরাও কি মা'র ঘরে জন্ম নেয়নি? যে পুলিশরা ধর্ষিতার মামলা নিতে চায়নি তাদেরও কি মা ছিলনা? এ নিয়ে আমি আর কোন বিশ্লেষণে যেতে চাইনা।

জনগণের একজন হয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ধর্ষকদের কী বিচার হবে?   না বিচারের কালক্ষেপণ করে, মামলার সমস্ত তথ্য আলামত লোপাট করা হবে?   এমন তো নয় এক সময় জানতে পারবো তথ্য ও আলামতের  অভাবে, আসামীকে বেখসুর খালাস দেয়া হলো। এমন হলে জনগণ পুলিশের প্রতি ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস হারাবে। ধর্ষকের শাস্তি আইনানুযায়ী যা হবার হোক কিন্তু ধর্ষিতা কি পাবে? সে তো সব দিকেই হারালো। এ ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত মতামত, প্রত্যেক মেয়েকে এক কোটি করে টাকা দেয়া হোক। যদিও ধর্ষণ বিষয়টি টাকার অংকে মিটানো সম্ভব নয়, তবুও বলবো টাকার প্রয়োজন আছে । তাদের ভবিষ্যতে পথ চলার জন্য টাকার বিকল্প ও নেই। এ দেশে কতজন মহান ব্যক্তিত্ব  আছেন  যে একটি ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করবে?  মেয়ের পারিবারিক ও শিক্ষার স্ট্যাটাস মিল রেখে? তা ছাড়াও ধর্ষকের বাবাকেও শাস্তি দেয়া হোক, সু-সন্তান  গড়তে না পারার কারনে। এরা পরিবার, সমাজ তথা দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। আমার এ লিখাগুলো পাঠ করে যদি মনে হয়, আমার বক্তব্য যৌক্তিক, তা হলে পাঠকগন লাইক ও কমেন্ট করে  সমাজকে সচেতন করুন এবং ধর্ষকদের ঘৃণা করুন।