ভারতীয় টেলি-সিরিয়াল ও আমাদের কন্যা-জায়া-জননী

জাকির হোসেইন
Published : 28 Feb 2016, 01:07 AM
Updated : 28 Feb 2016, 01:07 AM

ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতির দাপটে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আজ হুমকির সম্মুখীন। বিশেষ করে বাংলা ও হিন্দী টেলিভিশন সিরিয়ালগুলো এদেশের নারী দর্শকদের চুম্বকের মত আকৃষ্ট করে রেখেছে। কখনো কখনো শোনা যায় বাংলার নারী সমাজ তার পছন্দের সিরিয়ালটি শুরু হওয়ার আগেই ঘরের কাজ দ্রুত শেষ করে রিমোট হাতে টিভি সেটের সামনে বসে যান। ঐ সময় তারা পায়খানা- প্রস্রাবের মতো অতি জরুরী কর্মটি সারেন কিনা, সন্দেহ। কোন কোন সচ্ছল পরিবারে সিরিয়াল দেখার জন্য আলাদা টেলিভিশন রয়েছে। এতে ঐসব ফ্যামিলির কর্তাব্যক্তি ও ছোট্ট শিশুটি রেহাই পেলেও, অধিকাংশ ফ্যামিলিতে চলে রিমোট কাড়াকাড়ি খেলা। ছোট্ট শিশুটির প্রিয় কার্টুন অনুষ্ঠান সিরিয়াল-সূচীতে মিলে গেলে তার মন ভার করে বসে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

কন্যা-জায়া-জননীরা সিরিয়াল দেখে যা শিখছে, তার কিছুটা হলেও প্রভাব আমাদের উপর পড়তে শুরু করেছে। পারিবারিক দ্বন্দ-সংঘাত, স্বার্থপরতা, আড়িপাতা, অবৈধ সম্পর্ক এসব সিরিয়ালের প্রধান উপজীব্য হলেও এগুলোই যেন বঙ্গ-নারীর ব্যবহারিক আচরণের উপাদান হয়ে উঠছে। আবার এগুলো প্রাকটিস ও মুক্ত আলোচনার জন্য এদের সমাবেশ হচ্ছে – কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ওয়েটিং জোন, কোচিং সেন্টারের মত স্থানে। যেন একদিকে সন্তানদের ক্লাস চলছে, অন্য দিকে মায়েদের। সিরিয়ালের বদৌলতে আমরা মা ও মেয়ের পোশাকের পার্থক্য করতে পারছিনা, সম পর্যায়ের বিউটিফিকেশন ধান্ধায় ফেলে দেয় মা-মেয়ে নাকি দুই বোন?

ভারতীয় সিরিয়ালগুলো এদেশের ব্যবসায়ীদেরও করেছে কৌশলী। যেমন-পোশাকের কাটতি বাড়াতে সিরিয়ালগুলোর প্রধান নারী চরিত্রের নামে ডিজাইনের নামকরণ করা। এ সব ড্রেস না পেয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজটিও ঘটছে। আজ এক ফেরিওয়ালাকে দেখলাম–কিরনমালা নামের একটা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল বেঁচতে। আলোচনা করে জানতে পারলাম, জনৈক ফেরিওয়ালা কিরনমালা নামের ছাই বেঁচেন। সত্যি ফেরিওয়ালার বউ বড়ই ভাগ্যবতী। সিরিয়ালের বদৌলতে তার ছাই ব্যাচা স্বামীর তিনিই কিরনমালা।

সিরিয়াল কেড়ে নিয়েছে বঙ্গ-নারীর বই, পত্র-পত্রিকা,ম্যাগাজিন পড়ার সময়, স্বামী সন্তানের আদর মাখা অবসর, বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের অভ্যাস আর রোমান্টিক পুরোনো দিনের গানের গুনগুনানি।
এ জন্য দায়ী আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি-পোষক, দেশীয় চ্যানেলের কর্তাব্যক্তিগণ। নিম্নমানের অনুষ্ঠান আর বিরক্তিকর বিজ্ঞাপণ বিরতি মূল কারন।

এখনো সময় আছে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাজার থেকে " কিরনমালা নামের বলদ" কিনে ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে।