রাষ্ট্রের ধর্ম অথবা ধর্মের রাষ্ট্র

জাকির হোসেইন
Published : 2 March 2016, 02:29 PM
Updated : 2 March 2016, 02:29 PM

সমাজ বিজ্ঞানী ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানী স্বীকৃত একটি বিধিবদ্ধ কাঠামো হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি উপাদান আছে। এখানে ধর্মের কোন স্থান নেই। জনসংখ্যা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য উপাদান। ধর্ম হচ্ছে রাষ্ট্রের জনসমষ্টির সংস্কৃতি। যখন ধর্ম সৃষ্টি হল বা মানুষ ধর্মকে সৃষ্টি করল তখন রাষ্ট্র ছিল না । আধুনিক ভৌগোলিক রাষ্ট্র সাম্প্রতিক ধারণা। এর বহু আগে ধর্ম সৃষ্টি হয়েছিল। ধর্ম কখনোই রাষ্ট্র সৃষ্টিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেনি, দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। ব্যতিক্রমী ঘটনা গুলোতে কায়েমী স্বার্থ বিদ্যমান ছিল।

মানুষের ব্যবহারিক আচার-আচরণ, বিশ্বাস তার সংস্কৃতির অংশ। এর মধ্যে তার ধর্ম বিশ্বাসও অন্তর্ভূক্ত। এগুলো একান্তই ব্যক্তিগত। ব্যক্তিগত বিষয়াবলী রাষ্ট্রের উপাদান হতে পারেনা। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক প্রথা, রীতি-নীতি ও ঐতিহ্য রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।

ধর্ম মানবিকীকরণের একটি সর্বত্তোম উপায়। মানুষের ব্যক্তিগত, পারস্পরিক , সামাজিক ও আত্মিক পরিমন্ডলে ধর্মের বিচরণ। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্ম সকল মানবিক গুণাবলী বিস্তার ও বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। ধর্মগুলোরও ক্রমবিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসে দেখা গেছে, কোন কোন রাষ্ট্রের রাজা বা বাদশাহ ধর্মের বিকাশে দারুণ পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এটি ছিল মহারাজের একক মর্জির বিষয়। প্রকৃতপক্ষে তা ব্যক্তিগত ভাললাগা। ফলে ব্যক্তির একান্ত ভাললাগা বিষয়গুলো রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে না।

একটি রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। এর কেবলমাত্র রাজনৈতিক চরিত্র থাকা উচিত। ধর্মীয় লেবেল যুক্ত রাষ্ট্রগুলো অনেক বেশি সংবেদনশীল। যেমন ধরুন ইরান, সেখানে একই ধর্মের ভিন্ন সম্প্রদায় ( সুন্নী) দারুণ অবহেলিত। অথবা কোনঠাসাগ্রস্ত। অথচ একটি রাষ্ট্রে সকল মানুষের সম অধিকার থাকা উচিত ছিল। আবার ভারত ধর্ম-নিরপেক্ষ তকমা সেঁটে দিয়ে, সংখ্যা লঘুদের পিটিয়ে মারছে, উপাসনালয় ভাঙছে। এসব হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে। ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে জাত-প্রকরণ প্রকট। এ ধরণের ধর্মীয় রীতি মানবতা বিরোধী, সংকুচিত-মতবাদ। এ থেকে দেখা যাচ্ছে, ধর্ম ত্রুটি-বিচ্যুতি মুক্ত নয়। সুতরাং এগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ামক হতে পারে না।

একটি রাষ্ট্রের পরিচয় তার সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্ম দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রের পরিচয় হবে তার জাতীয়তাবাদ দ্বারা। এটি রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর পরম্পরাগত ঐতিহ্য।
আসুন ধর্মীয় লেবাসটি রাষ্ট্রের গা থেকে খুলে নিজের গায়ে চাপাই। আর রাষ্ট্রকে থাকতে দিই –নিরপেক্ষ ভূমিকায়।