পদ্মা সেতুঃ বিশ্ব ব্যাংকের পিছিয়ে যাওয়া কি অবধারিত ছিল না ?

জামান বাবু
Published : 2 July 2012, 04:21 AM
Updated : 2 July 2012, 04:21 AM

একটি বহুজাতিক কোম্পানির তরুন পোর্টফলিও ম্যানেজার ইশতিয়াক আহমেদ । প্রচণ্ড ব্যাস্ত সেলস রিভিউ নিয়ে । মোবাইল ফোন বেজে উঠল…………
– হ্যালো ।
– ………..স্যার …………… ব্যাংক থেকে বলছি।
– বলুন ।
– স্যার আমাদের ব্যাংক থেকে আপনাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দিতে চাচ্ছি ।
– থ্যাংক ইউ, লাগবেনা । আমার অলরেডি দুটো ক্রেডিট কার্ড আছে ।
– স্যার আমাদেরটা ও নিন প্লীজ , ভালো অফার আছে ।
– স্যরি আর নিতে চাচ্ছিনা ।
– স্যার কার লোন……।
– না ভাই । অফিসের গাড়ি ব্যাবহার করছি ।
– স্যার ম্যাডামের জন্য ……।
– আমি ম্যারেড আপনাকে কে বলল ?……
– স্যরি স্যার । স্যার আমাদের হোম লোন এর ইন্টারেস্ট রেট কিন্তু বেশ অ্যাটরাকটিভ ।
– হোম লোনও লাগবেনা প্লীজ ।
লোভনীয় ক্লায়েন্ট ফোন রেখে দিলেন ।
এই দুপক্ষ যদি বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক হয় সেটা নিশ্চয়ই মিলবে না । তবে বাংলাদেশ সরকারের ভাবসাব সেরকমই । গত অক্টোবরের শেষের দিকে বিশ্বব্যাংক সহ বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থাগুলোর পদ্মা সেতুর ঋণ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা আসে । কারণ দুর্নীতির অ্যান্তার অভিযোগ ।

সরকারের বড় গলা । তারচেয়ে ও বড় গলা মাননীয় সরকার প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর – বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমান দিতে না পারলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হবেনা। ( ভাবখানা এমন যেন সেই মূল্যবান ক্লায়েন্ট অথবা বড় কোন ব্যবসায়ী, তাঁকে কিছু লোন গছাতে পারলেই টার্গেট এর অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে বিপনন কর্মকর্তার )। যদিও মন্ত্রী বদলি, সচিব বদলি র লোক দেখানো কিছু খেলা হয়। দুদক মাঠে নামে । নাঃ কো…থা…ও দুর্নীতির গন্ধ মাত্র নেই…খামাখা……।

গলাখান আরও লম্বা হয় যখন মাঠে আসে মালয়েশিয়া । ( হয়তো আরও আগে থেকেই দৃশ্যপটে আসতে চাচ্ছিল )। গত ১০ এপ্রিল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় । বিদ্রূপের দৃষ্টি আর তাচ্ছিল্যের হাসি বিশ্বব্যাংকের দিকে, " দেখ ব্যাটা টাকার অভাব আছে নাকি দুনিয়ায় ? আরও অনেক মক্কেল খাড়া আছে । আওয়াজ দিলেই চইলা আইব । একটা শিক্ষা দেওয়া গেল । আমাগো সমালোচনা !! ''।

এর মধ্যে কিছু ছোট ছোট দৃশ্য । বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি আসেন-যান । বিকল্প প্রস্তাব দেন । এসএনসি লাভালিনের মামলা কানাডার আদালতে। আর এদিকে মালয়েশিয়া ও সক্রিয়, ৩৯ বছরের জন্য ভালো একটা ব্যাবসার ধান্দা । শেষমেশ চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ২৮ জুন খসড়া প্রস্তাব দিয়ে ফেলল মালয়েশিয়া । ৩০ জুন আসল অবধারিত ক্ষণ – বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রস্তাব বাতিল ।

সবাই অবাক । এটা কি হল ! বড় বড় অর্থনীতিবিদগণ আশ্চর্য হবার ভান করেন । ভাব খানা এমন যে, – বাংলাদেশ না হয় বিশ্বব্যাংকের কথা আমলে নেয় নি। দুর্নীতির ব্যাপারটা কে এত গুরুত্ব দেয়ার কি আছে । তারা না হয় কোন এক সময় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু তৈরিতে প্রধান সমন্বয়ক ছিল । তাই বলে তাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গুলোকে এত গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই।

কেউ কি কখনো ভাবেনি যে দাতা সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মালয়েশিয়ার সাথে চুক্তি এগিয়ে নিলে তারা ব্যাপারটাতে সহজে ছাড় দেবেনা ? বিশ্ব ব্যাংক কর্তারা অবজ্ঞা ও সহ্য করবেন উপরি পাওনা ও যেখানে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশ সরকার ব্যাপারটা জানে না বললে পাগলের প্রলাপ হবে। এর পেছনের কারণ খুবই স্থুল । এক পক্ষ কে ব্যাবসা দেয়া হবে, কোন খবরদারি থাকবে না । দুটি লাভ হল, নিজেদের অহমিকা বজায় রইল সাথে উপরি পাওনা নগদ কিছু ।

মূলত চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্র সে দিনই তৈরি হয় যে দিন মালয়শিয়ার সাথে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয় । নিজেদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার নমুনা দেখাতেই বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়ে কালক্ষেপণ করেই চুক্তি বাতিল করে । বাংলাদেশ সরকার বলছে অন্যান্য ঋণ দাতা সংস্থা এডিবি, আইডিবি, জাইকা ' র সাথে ঋণ সমন্বয়ের কথা যেটা তারা নিজেরাই বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই ।

পরিশেষে বলা যায়, এই জাতি আবার মূল্য দেবে । বেশি ব্যয়ে হয়তো সেতু তৈরি হবে । ( বর্তমান প্রকল্পটি বাতিল না হলেও কালক্ষেপণ, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি আর অনিয়মের বেড়াজালে পড়ে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রায় ৩ থেকে ৫ শতাংশ !!! ) । যে কোন প্রকল্পে বিশ্ব সংস্থা গুলো এখন দুর্নীতির গন্ধ খুঁজবে ।

যে কথাটি বলতেই হবে , বিশ্বব্যাংক এখানে ধোয়া তুলসী পাতা নয় । দুর্নীতির বিভিন্ন নজির তারা রেখেছে এর মধ্যে অনেক কাজে । সুতরাং দুই দুর্নীতিবাজ পক্ষের মাঝখানে পড়ে নাভিশ্বাসে এই সোনার বাংলা । মাঝখানে ফায়দা লুটছে মালয়েশিয়া !!!