বীরের ভঙ্গি:ক্যাম্প জীবনের গল্প

kaiser_haq
Published : 15 Dec 2013, 05:56 PM
Updated : 15 Dec 2013, 05:56 PM

বলা চলে যুদ্ধের সময় ঘটনাচক্রে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগ দেই। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকে আমি আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা হই। অসাধারণ এক ট্রেন ভ্রমন শেষে কলকাতা পৌঁছে কয়েকজন ঢাকার বন্ধুর দেখা পেয়ে যায় সেখানে। ওরা সেক্টর ৭-এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে জেনে ওদের সঙ্গেই সেখানেই যাব মনস্থির করি। জুনের শুরুর দিকে একদিন সকালে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জ সদরদপ্তরে গিয়ে শুনি যে সেই সন্ধ্যাতেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার পদের নিয়োগপরীক্ষা হবে সেখানে। নির্বাচিত ক্যাডেটরা প্রশিক্ষণ শেষে নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা হিসেবে যুদ্ধে যোগ দেবে।

আমার বন্ধুদের সাথে আমার তর্ক শুরু হলো এ সুযোগ আমাদের নেয়া উচিৎ কিনা সেটা নিয়ে। কেই-বা পেশাদার সৈন্য হতে চায়? শেষমেষ আমরা ইন্টারভিউ দেয়া মনস্থির করি। লে কর্ণেল নুরুজ্জামান আমাদের আশ্বস্ত করেন যে যুদ্ধ শেষ হলেই আমরা দায়িত্ব থেকে ছাড় পাবো। দেখা গেলো, তিনিই বোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তি এবং আমাকে সব প্রশ্ন তিনিই করছিলেন। আমার বুদ্ধি যাচাই করার জন্য কিছু প্রশ্ন করেই তিনি আমার কাছ থেকে বার্টান্ড রাসেল আর লিয়ার প্যারাডোক্স শুনলেন আর শুনলেন সার্ত্রের টিকে থাকার মূলসুত্র।

নির্বাচিত হয়েছি কিনা জানা যাবে কিছুদিন পর। ততদিন সেক্টর কমান্ডারের বাংলোর একটা রুমে আমদের থাকার অনুমতি দেয়া হলো। কিন্তু সেক্টর সদরদপ্তর সেখান থেকে সরে যাবে, সেজন্য আমরা পাশের একটা ইয়ুথ ক্যাম্পে অবস্থান নেয়।

এ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা প্রায়- তরুণ এই দুজন ব্যক্তি শিক্ষিত মানুষের সঙ্গ পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। আমরা তাই বিশেষ অতিথির মর্যাদায় বড় একটা রুমে জায়গা পেয়ে যাই যার পুরোটাই কেবল আমাদের থাকার জন্যই বরাদ্দ। পরদিন সকালে অনুশীলনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আমাদের। তারপর ধীরে-সুস্থে সকালের নাস্তা। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা দু'জনের একজন যৌনতা বিষয়ে অপার জ্ঞানী। আর আমরা চাই বা না চাই আমাদের সেসব শুনিয়েই যাচ্ছিলেন। তারপরই ঠিক একই রকম বিজ্ঞের ভঙ্গীতে শুরু করলেন হ্যারল্ড রবীন'স আওড়ানো আর নারী আকর্ষনের বর্ণনা। আমাদের দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ালো বিদ্ঘুটে এক অভিজ্ঞতা।

এদিকে দেশে গেরিলা যুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনীর একজন অফিসারের কথা শুনলাম যিনি তাঁর অপরিসীম দক্ষতা আর সাংঘাতিক রণকৌশলের জন্য জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। লে: ইদ্রিস খান পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বাঙালিদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করায় তার একজন উর্ধ্বতনকে আঘাত করেছিলেন। সেই অপরাধে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। যুদ্ধ যখন শুরু হয় তিনি তখন জয়পুর চিনি কলে ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। সেই সময় তিনি কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে অস্ত্র যোগাড় করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক যুদ্ধ শেষে জয়পুরহাটে ফেরত আসার সময় তিনি জানতে পারেন যে পাকিস্তানি সৈন্য জয়পুরহাটে ঢুকে পড়েছে। তখনই তিনি তার লোকদের সাথে নিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন। নিজের পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পর, এক শরনার্থী শিবিরে তিনি তার পরিবারের লোকজনদের আবিষ্কার করেন। এক সকালে আমরা লে: ইদ্রিসের ক্যাম্পের দিকে রওনা হই। ক্যাম্পে আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা জানান তিনি। তখন তিনি বাংলাদেশের ভিতরে যাওয়ার ব্যাপারে একটা বিশৃঙ্খল দলকে প্রস্তুত করছিলেন। ছোটখাট হলেও মানুষটি শক্তপোক্ত গড়নের। তিনি তার লোকদের কঠিন পরিস্থিতিতেও খুব সাধারণ যুদ্ধকৌশল দিয়ে শত্রুদের প্রায়ই হতচকিত করে দিতেন। একবার তার কানে আসলো যে এক কুখ্যাত ডাকাত, পাকিস্তানি দোসর তার সম্পর্কে খুব খারাপ কোন একটা মন্তব্য করেছে। তিনি তার দলবল নিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীর ছদ্মবেশে সরাসরি সেই ডাকাতের আস্তানায় হাজির হন আর সেই বিশ্বাসঘাতকের গালে এমন এক চড় মারলেন যে মরার সময়েও সে স্বীকার করলো যে এত জোরে চড় সে জীবনে আর কখনো খায়নি।

ইন্টারভিউর প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলো, অথচ তখনো কোন খবর আসছিলো না। আমরা তাই ঠিক করলাম কলকাতা গিয়ে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের চলে যাবার সিদ্ধান্তে ইয়ুথ ক্যাম্পের কর্তা দুজন মুষড়ে পড়লেন। তবে পথের খরচ হিসেবে ক্যাম্পের ফান্ড থেকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে ১০০রুপি করে দেয়া হয়। সেখান থেকে আমরা ৮নং থিয়েটার রোডের (সেক্সপিয়ার সরণী) নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের দপ্তরে গিয়ে শেখ কামালের সাথে দেখা করি। আনন্দের সাথে আবিষ্কার করলাম যে শেখ কামালের সাথে সাথে আমার আর দিপু'র (কাইয়ুম খান) নামও নির্বাচিতের তালিকায় আছে। অলীক গুপ্ত নামে দক্ষিণপশ্চিম প্রান্তের আরেকজনকেও সেখানে দেখলাম। আমাদের চারজনকেই তক্ষুণি সেনাবাহিনীর হাসপাতালে পাঠানো হলো প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য। তারপর সেখান থেকে সোজা প্রশিক্ষণ স্কুল। যদি ইয়ুথ ক্যাম্পে বসেই আরো কিছু অশ্লীল গল্প শুনতে থাকতাম তাহলে পুরো সুযোগটাই আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যেত।

মেডিকেল চেকআপ শেষে রেলষ্টেশনে যাবার পথে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলাম। গাড়ি চাপায় মৃত একটা শিশু পথের উপর এমনভাবে পড়েছিল যেন সে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। কেবল তার মাথার খুলিটা বিচ্ছিন্ন হয়ে বাটির মতো উল্টে পড়ে আছে।

শিলিগুড়ির ট্রেন ধরে তারপর অন্য এক রেললাইন দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম নিউ মাল নামের পাহাড়ঘেঁষা ছোট্ট এক ষ্টেশনে। সেই প্লাটফর্মে নামতেই দেখা হয়ে গেল কিছু পরিচিত মানুষের সাথে – সামাদ ভাই, যিনি সেন্ট গ্রেগরিতে আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন, আর ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের দু'বছর সময়ের মধ্যে জোগাড় হয়ে যাওয়া বন্ধুদের হাফ ডজন। সেখান থেকে ভারতীয় সেনা ট্রাকে করে পাহাড়ি পথ বেয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম মুরতিতে। এই সেনা ক্যাম্পে মুক্তিফৌজের জন্য বসানো হয়েছিলো প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। শতশত গেরিলা যোদ্ধা তখন সেখানে প্রশিক্ষন নিচ্ছিল। দুই সপ্তাহের নিবিড় প্রশিক্ষণ শেষে তাদের পাঠানো হবে নিজনিজ সেক্টরে। আমাদের অফিসারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প একদম শেষে, আমি যেমন কল্পনা করেছিলাম তার থেকে একদম আলাদা। সেখানকার বাঁশের কিছু ছাউনিই আমাদের ৬১ জনের পরবর্তী ১৫ সপ্তাহের আবাস। আমাদের সাথে পরবর্তীকালে পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমি থেকে আসা আরো তিনজন যোগ দিয়েছিল।

আমাদের জন্য বরাদ্দ হলো বিছানা, পুরোনো ডিজাইনের সস্তার সুতি পোশাক যার কেবল অর্ধেকটাতে বোতাম আছে, নিজের দিকটা ঢেউ খেলানো, দু'পাশে কুর্তার মতো পকেট, আর সেই সাথে ঢোলাঢালা লম্বা ধরনের সর্ট প্যান্ট। আলো নিভে গেলে আমরা খালি সিমেন্টের মেঝেতে আমাদের বিছানা পেতে হ্যারিকেনের আলো নিভিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে পড়তাম সেখানেই। একসময় খাকি পোশাক বদলে আমরা স্বাভাবিক পোশাক পরা শুরু করলাম। আমাদের অবস্থার উন্নতির অংশ হিসেবে আমাদের জন্য বাঁশের খাট বরাদ্দ হলো যেটার সরু কঞ্চি গায়ে ফুটতো।

এখানে আমাদের সকাল শুরু হয় অর্ধেক মগ দুধ-মিষ্টি দেয়া চা-এর জন্য লাইন ধরে। তারপর বিয়ারের ক্যান দিয়ে ড্রাম থেকে পানি নিয়ে দূরের মাঠে কাঁচা বাথরুমের দিকে ধাওয়া করতাম। এরপর পিটি শেষে পুরি-ভাজি আর চা দিয়ে নাস্তা। পোশাক পাল্টে রাইফেল নিয়ে মিলিটারি ড্রিল আর অস্ত্র প্রশিক্ষণ। এর মাঝেই চলতো যুদ্ধ কৌশল নিয়ে লেকচার। বিকেলে খেলাধুলা। সপ্তাহের কয়েকবার রাতের প্রশিক্ষণ। কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের কেবল দৌঁড়ে বেড়াতে হলো।

তার ফলও ফললো। আমাদের কয়েকজন পায়ের ব্যাথায় খোঁড়াতে লাগলো, কিন্তু কিছুতেই নিস্তার পাবার জো নেই। রাতের বেলায় আমরা মাটিতে ছেঁচড়ে ঝোপের ফাঁকে ফাঁকে যুদ্ধ প্রশিক্ষন শেষে রক্তচোষা জোঁক গায়ে নিয়ে ক্যাম্পে ফেরত আসতাম। এ কঠিন সময়ের মধ্যেও থেমে থাকতো না মজা, একজন অন্যজনের পিছনে লাগালাগি এমনকি সামান্য পড়াশুনাও। বাসা থেকে পালিয়ে আসার সময় খুব ভেবেচিন্তে তিনটা বই নিয়ে এসেছিলাম আমি। জন ওয়েন এর An Anthology of Modern Poetry, The Age of the Guerilla নামে একটা বই আর Concise Oxford Dictionary । বইগুলো সে সময়কার অত্যাচারে ছিন্নভিন্ন কিন্তু এখনো অমুল্য সম্পদ। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাত থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর একটা সংকলন আর ইংরেজী কবিতার উপর ১৯৩৩ সালের একটা ম্যাগাজিন কিনেছিলাম।
আমার দুই কোর্সমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম ভালোবাসার গল্প আর ড: জিভাগো

আরেকটা বই যেটা আমাকে যুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলো তা হলো ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল সংঘাতের উপর লিখিত মোসে দেয়ান-এর স্মৃতিকথা। বইটা আমার কোর্সমেট সায়েদকে (এখন মেজর জেনারেল) দিয়েছিল চিফ ইনস্ট্রাকটর মেজর থাপা। সায়েদ আমাদের উয়ং লিডার ছিলো। মেজর থাপা ওকে বলেছিলো বইটা পড়ে উনাকে মৌখিক একটা রিপোর্ট দিতে। সায়েদ বইটা পড়ার সময় পাবে না বলে আমাকে বললো পড়ে ব্যাপাটা বুঝে নিতে। আমি খুশি হয়েই রাজী হয়েছিলাম। এই বইটার ব্যাপারে সেনা আগ্রহের মূল কারণ ছিলো রণকৌশল, যেখানে উল্লেখ ছিলো শত্রুর কিছু কিছু বাধা উপেক্ষা করে মোক্ষম জায়গায় আঘাত করা, যাতে পরাজয় নিশ্চিত করা যায়। আমি আমার বন্ধুকে বলেছিলাম, যুদ্ধের সময় ভারতীয় রণকৌশল এমনটিই হবে। আমার আন্দাজ ছিল ওরা শীতকালে চীন সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে। সময়ে আমার আন্দাজ ঠিক প্রমাণিত হয়েছিল।

বিচিত্র মানুষের সমাহার আমাদের ঐ ক্যাম্পে, এরকম অ-সাধারণ যুদ্ধেই কেবল এমনটা দেখা যায়। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। আমিন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাডেট ছিলো পরে আমাদের সাথেই অফিসার হয়ে ৭ নং সেক্টরের হামজাপুর সাব সেক্টরে ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আর ছিলো ইআরপি সিগন্যাল থেকে আসা আওয়াল চৌধুরী যার বিশাল ব্যাগে ছিলো মশারি, বদনা, বাংলা-ইংরেজী ডিকশনারী। আওয়াল তার অদ্ভুত আচরনের জন্য সারা ক্যাম্পে মজার খোরাক ছিলো।

আওয়ালের অভ্যাস ছিলো বিশেষ ঘটনা উপলক্ষে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া তৈরি। যখন দিপু তাকে তার বদনা নিয়ে ক্ষেপাতো , তখন ও বলতো "Mr Dipu, you are not only rotten but also pungent." আরেকদিন যখন আমাদের নিয়মিত খাবারের চেয়ে একটু ভালো খাবার দেয়ার দিন ছিলো, ও বললো, "The nomenclature of this food is good."
শুধু এসবই নয়, বিভিন্ন ঘটনা উপলক্ষে ইংরেজীতে ছড়া রচনা করতো ও। যখন আমরা দলের নেতা ক্যাপ্টেন সাজান সিং কে ওর এই অভ্যাসের ব্যাপারে জানাই, তখন তিনি ওকে কিছু একটা আবৃত্তি করতে বলেন। অবিচলিত আওয়াল উঠে দাঁড়িয়ে পুরো দলের দিকে তাকিয়ে সুর করে বলতে শুরু করলো ………
What a thunder!
Yahya has committed a blunder!
Now he will wonder.
O brave Mukti Fouj,
Strike a heroic pose….
আরো বেশ কিছুটা ছিলো, বাকিটা ভুলে গেছি। আওয়াল দুই লাইনের অর্থপূর্ণ শ্লোক লেখায়ও সিদ্ধহস্ত ছিলো। একবার ও আমাকে বললো "You must study art, To learn about the human heart." আরেকদিন দিপু ওকে বাথরুমে বলতে শুনেছিল "It is tight!" একটু পর আনন্দিত গলায় "Now it is right!"

বিনোদনের তেমন কিছু ছিলো না আমাদের ক্যাম্পে। এরই মধ্যে কোন কোন সপ্তাহে হাতখরচ বাঁচিয়ে কাছের বাজারে 'রাম' খেতে যেতাম আমরা। বর্ষার শেষে মাঠগুলো শুকনো খটখটে হয়ে গেছে। একদিন রাতে আমাদের ক্যাম্পের পিছনে পাকা শস্যের ক্ষেতে হাতির পাল নেমে এসে আমাদের তাড়া করে। সেনাধ্যক্ষ কর্ণেল দাশগুপ্ত (যার আদি বাড়ি ছিলো ময়মনসিংহ) ঐ বিশাল প্রাণীগুলোর মাথার উপরে গুলি ছুঁড়েন। ক্যাপ্টেন যাদব নামের আরেকজন সৈন্য, যার প্রিয় শব্দ ছিলো সবাইকে জোকার ডাকা। (এমনকি আমাদের মধ্যে সাহসী যারা তারাও তার কাছে জোকার, সবচেয়ে বড় জোকার আমাদের নেতারা) । হাতি দেখে আমাদের ডেকে বললো, " একমাত্র এ্যান্টি ট্যাংক মাইন হাতিকে থামাতে পারে। আমাদের সাথে যেহেতু তা নেই, কাজেই, জোকাররা, হাতির পায়ের নিচে না পড়তে চাইলে সবাই দৌঁড়ে গিয়ে পিছনের উঁচু জায়গায় চলে যাও।"

হাতিগুলো অবশ্য সেদিন শেষ পর্যন্ত আমাদের উপর হামলা করেনি। দ্বিতীয়বার তাদের দেখা পাওয়ার আগেই আমরা সফলভাবে ট্রেনিং শেষে পাসিং আউট প্যারেডে অংশ নিলাম। সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদের কয়েকজন সদস্য এবং কর্ণেল ওসমানি যার চোখে পড়ার মতো গোঁফ আর কথাবার্তা শুনে ভারতীয় সৈন্যরা বলাবলি করছিল, "তিনি কর্ণেল হতে পারেন না, তাঁর তো জেনারেল হওয়া উচিৎ"। খুব বেশিদিন যেতে না যেতেই তিনি অবশ্য জেনারেল হয়েছিলেন। আর সেদিন আমরা হলাম সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এর কিছুদিনের মধ্যেই আমরা রওনা হই আমাদের নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে। তার পর? তার পরের গল্প তোলা রইলো আরেক দিনের জন্য।

ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন রেশমী নন্দী