মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এবার জনগণের দিকে নজর দিন

আমিন আহম্মদ
Published : 8 July 2011, 05:03 AM
Updated : 8 July 2011, 05:03 AM


গত ২০০৮ এর নির্বাচনে মহাজোটকে বড় আশা করে মানুষ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তারা মহাজোটকে বিজয়ী করার কতগুলো প্রধান প্রধান কারন ছিল। যে গুলোর কারনেই মানুষ তৎকালীন জোট সরকারের প্রতি তিক্ত-বিরক্ত ছিল।

কারন গুলো হল : ১। সু-শাসনের অভাব ২। স্বজনপ্রীতি গনহারে ৩। দলীয় ভাব ধারা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রশাসন গড়ে তোলা, ৪। তৃণমূল পর্যন্ত সন্ত্রাসের অভয়ারন্য ও রাজত্ব, ৫। সরকারের প্রধান প্রধান ব্যাক্তিবর্গের অসংলগ্ন কথাবার্তা, ৬। রাজাকার তথা যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পলন করা, ৭। জঙ্গীবাদের উত্থান ও লালন-পালন করা, ৮। শিক্ষাঙ্গনে দলীয় ছাত্র রাজনীতির নামে ভর্তি বানিজ্য, হল দখল, ছাত্রী লাঞ্ছিত এবং সর্বস্তরে দলীয় ষ্টাইলে সব কিছুর প্রতিষ্ঠা করা, ৯। দ্রব্য মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে থাকা এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়া, ১০। বিদ্যুৎ সমস্যা এবং ১১। সরকারী বিভিন্ন টেন্ডার ও প্রকল্প দলীয় ও দলের সমর্থকদের মধ্যে বন্টন করা। এছাড়া আরও নানাবিধ সমস্যতো ছিলই।

আপনি ক্ষমতায় আসার আগে আপনার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি জনগণ বিশ্বাস করেছিল। তাই তারা আপনাকে বিপুল ভোটে সংসদের সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের মর্যাদা দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছিল। অনেক বড় আত্মবিশ্বাস ও বুক ভড়া আশা নিয়েই জনগন ভোট দিয়েছিল। ভেবেছিল তাদের মুক্তি আসবে। তারা শান্তিতে থাকতে পারবে। বাজার থেকে হাসি মুখে ঘরে ফিরবে। রাস্তা-ঘাটে নির্বিঘ্নে চলা-চল করবে। পরিবহনের নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পাবে। দলবাজী-টেন্ডার বাজী থাকবেনা। ঘুষ-দুর্নীতি থেকে মুক্ত হবে দেশ। বিদ্যুৎএর সমস্যার পুরোপুরি সমাধান কারোও পক্ষেই সম্ভব না, কিন্তু একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে লোড শেডিং।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঘায়েল ও স্থানীয় পাতি মাস্তানের উৎপাত থেকে মুক্ত থাকবে দেশ। পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে, সেটা আশাতীত না হোক অন্তত সন্তোষ জনক থাকবে। বৈদেশিক শ্রমবাজার বৃদ্ধি ও তার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, দালাল মুক্ত ও নির্ভেজাল প্রক্রিয়ায় দেশের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো দেশের জন্যই বিদেশে যেতে পারবে। মানুষ ভাবতে পারবে যে তারা সত্যিকার তাদের নিজেদের মাতৃভূমিতে বাস করছে, স্বাধীন দেশে বাস করছে। যে দেশকে নিয়ে বিদেশে আমরা গর্ববোধ করতে পারব ইত্যাদি হাজারো আকাঙ্খা ও স্বপ্ন নিয়ে আপনাকে ও আপনার দলকে ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করেছিল।

কিন্তু আজ এই আড়াই বছরে মূল্যায়নে কি পেয়েছে দেশের জনগন ? উপরের উল্লেখিত প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কোন মিল আছে কি ? আমি জানি দেশের প্রায় প্রতিটি জনগন বলবে নেই।

কারন আজও দেশের মানুষ বাজারে গিয়ে সকল বাজার না করেই খালি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন, বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং এর যন্ত্রনায় মানুষ এখনও অতিষ্ঠ, স্থানীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাতে মানুষ এখনও জিম্মি, বিদেশী বিনিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ইত্যাদি এখনও আশানুরুপ নয়, রাজনীতির দুর্বৃত্যায়ন এখনও চলছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা বেড়ে গিয়েছে, সংসদ কার্যকর হয়নি, বিরোধীদলের প্রতি সেই আগের মনোভব চলমান, এখানে অবশ্য বিরোধীদলই বর্তমানে বেশী ব্যর্থ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ হয়নি, ঘুষ-দুর্নীতি চলছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, দলীয় ছাত্র সংগঠন ও ক্যাডারদের হাতে ছাত্র-ছাত্রী ও দেশবাসী জিম্মি হয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ও শ্লথ গতি মানুষকে সন্দিহান করেছে, অনের খুনী সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ায় তা নিয়ে জনমনে অস্বস্তি ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সেই আগের মত কিছু নেতা, এমপি ও মন্ত্রীর কাছে পুরো দেশ আজ অসহায়, রাজনৈতিক মামলা ও হয়রানি বন্ধ হয় নাই ইত্যাদি।

সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে মানুষ বড় কিছু আশা করেছিল। যেমন সকল দলের মতামতের আলোকে হবে সংবিধান, সেখানে কোন বিতর্ক থাকবেনা। অবশ্য এও মানি যে সকল দল সব বিষয়ে একমত হতে পারবেনা কিন্তু সিংহভাগের ক্ষেত্রে অবশ্যই একমত থাকবে। যেখানে আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করতে বলেছে, এবং আগামী ০২ বছর অন্তত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এ পদ্ধতি রাখতে বলেছিল, প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করে। তা না করার কারনে দেশ আবার ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়াল। এটা কেউ আপনার সরকারের কাছে আশা করে নাই। আশা করি আপনি এর একটা সর্বজন গৃহীত পদ্ধতি ঘোষনা করবেন এবং প্রয়োজনে সংবিধানের এ ধারাটির একটু পরিবর্তন করে তা বাস্তবায়ন করবেন। এতে আপনার সংবিধান লংঘন বা আদালতের অবমাননার কোন সম্ভাবনাই নেই।

মোট কথা মানুষের চাহিদা ও প্রাপ্তির মাঝে অনেক ব্যবধান। এই ব্যবধান যদি আপনি স্ব-উদ্যোগী হয়ে সমাধান না করেন, তাহলে জনগণ আপনাকে আবার কি চাইবে ? মোটেই না। আপনার অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী অহেতুক ও গুরুত্বহীন কথাবার্তা বলে আপনাকে বিতর্কিত করছে, আপনার সরকারকে বিতর্কিত করছে, যুদ্ধাপরাধ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটা মোটেই আপনার জন্য মঙ্গল জনক নয়। এদের লাগাম টেনে দিন। একটা কথা আমরা সবাই জানি "অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ"। এই অতি ভক্ত প্রকৃতির নেতা, সমর্থক, এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, প্রশাসনের আমলা তথা বুদ্ধিজীবীদের তোষামোদীতে আপনি গা ভাসালে এর পরিণতি আপনাকে বহন করতে হবে, সাথে সাথে দেশকেও দিতে হবে বড় খেসারত।

তাই আপনার নিকট বিশেষ অনুরোধ, প্লিজ সময় বড়ই কম, দেশের জন্য ও দেশের জনগনের জন্য এবার কিছু করুন, এবার আমাদের হতভাগাদের প্রতি একটু নজর দিন।

ধন্যবাদ।
আমিন আহম্মদ
সিঙ্গাপুর, ০৮/০৭/২০১১।