কাঁদছে বাংলাদেশ। কাঁদছে আকাশ-বাতাস। মিরেরসরাই ট্রাজেডি

আমিন আহম্মদ
Published : 12 July 2011, 07:42 AM
Updated : 12 July 2011, 07:42 AM

আর তারা কাউকে জ্বালাতন করবেনা, আর তারা সারাদিন একসাথে হৈ চৈ করে পুরো পাড়া-গ্রামের সবাইকে মাতিয়ে রাখবেনা। গতকালই ছিল তাদের শেষ ছুটির ঘন্টা। আজ তারা চলে গেছে আমাদের এ নশ্বর ধরা হতে দুর থেকে বহুদুরে। আর তারা কোনদিন তার মা-বাবাকে বিরক্ত করবেনা, পাড়া বা গ্রামের মানুষ আর তাদের নামে কোন বিচার নিয়ে আসবে না। তারা চলে গেছে সেই মহান বিচারকের কাছে। যেখান হতে কেউ আর ফিরে আসেনা। আসেনাই কোনদিন।

গতকাল সেই ভয়াল ট্রাজেডির দিন। বেলা ১ টার দিকে চট্রগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী গ্রাম এলাকায় প্রায় ৮০ জন স্কুলশিক্ষার্থী বহনকারী ওই মিনি ট্রাকটি (চট্ট মেট্রো-ড ১১-০৩৩৭) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের ডোবায় উল্টে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ট্রাকটি চালাচ্ছিল হেলপার। তার নাম জানা যায়নি। ঘটনার পর পর সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হতাহতরা সকলেই ওই এলাকার মায়ানী, সৈদালী ও আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। স্মরণকালের ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় ওই এলাকাসহ পুরো মিরসরাইয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে । ঘরে ঘরে চলছে শোকের মাতম। আকাশ-বাতাস যেন শোকে ভাড়ী হয়ে গেছে। সবাই বোবা হয়ে গেছে। কারও যেন কিছুই বলার নেই।

নিহতদের সবাই স্কুলের ছাত্র। তাদের বেশীর ভাগ বয়স ১৩-১৬ বছর। নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত জানা মতে ৫৩ ছাড়িয়ে গেছে।

বাবার কাঁদে পুত্রের লাশ নাকি পাহাড়ের সমান ভারী কিভাবে বহন করবেন বাবা তার পুত্রের লাশ ! কিভাবে মা খাবেন সেই রুইমাছ ! কচুরলতি খেলে ছেলের গলা চুলকাতে পারে, কিভাবে রান্না করলে তার ছেলে মনের আনন্দে খাবে সে নিয়ে মায়ের কত চিন্তা, আর তার গলা চুলকাবেনা ! সে আর রুইমাছ, কচুরলতি খেতে আসবেনা ! আর তার খাবারের চিন্তা করে হাত কেটে ফেলতে হবেনা মাকে ! মা কেমন করে বইবেন এই শোক !

নিহতদের পরিচয়: নিহত ৪৪ জনের মধ্যে ৪২ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো: মধ্যম মায়ানি গ্রামের রিয়াদ (১৪), পিতা নুরুল আফছার; জিল্লুর রহমান (১৫), পিতা মইনউদ্দিন; আরিফ (১৪), পিতা ছাদেকুল ইসলাম; তোফাজ্জল হোসেন (১৩), পিতা জহির আহমদ; তারেক (১৪), পিতা জয়নাল আবদিন; লিটন দাস, পিতা কেশব দাস; সুজন (১৩), পিতা রেদোয়ান; শামসুদ্দিন (১৪), পিতা নবী চাঁন; শরীফ (১৫), পিতা শিহাবউদ্দিন; সানি (১৪), পিতা বাহার; ইফতেখার (১৮), পিতা ফিরোজ; সাকিব (১৪), পিতা ওমর ফারুক; সুজন (১৪), পিতা জহির আহমদ; তারেক (১৪), পিতা আবুল কালাম; মঞ্জুরুল আলম (১৩), পিতা শামসুল হক; রনি (১৪), পিতা আমিরুল হক। পূর্ব মায়ানি গ্রামের সাজু (১৩), পিতা সন্তোষ; পারভেজ (১৫), পিতা ফজলুল করিম; ইমরান (১৪), পিতা আবুল কাশেম; শামসুদ্দিন (১৫), পিতা নূরুল আমিন; শাখাওয়াত হোসেন (১৪), পিতা আনোয়ার হোসেন; সাইফুল (১৩), পিতা নূরুল আলম; রাজীব ওরফে ননাই, পিতা আনোয়ার হোসেন; মইনউদ্দিন (১৩), পিতা মো. জাফর ও জাহিদুল ইসলাম (১৩), পিতা আবু জাফর। পশ্চিম মায়ানির আনোয়ার (৩০), পিতা বদিউল আলম; রুপম (১৩), পিতা ধণেশ চন্দ্র নাথ। পশ্চিম খৈয়াছড়া গ্রামের সাইফুল (১৪), পিতা কামাল উদ্দিন। সরকার টোলা গ্রামের বাসু (১৫), পিতা খোকন ও জাহিদুল ইসলাম (১৫), পিতা মীর হেসেন। শেখের তালু গ্রামের রকিবুল ইসলাম (১৫), পিতা আফতাব ও কামরুল (১৫), পিতা আলী হোসেন। কচুয়া গ্রামের মেজবাহ উদ্দিন (১৪), পিতা ফজলুল করিম; জুয়েল (১৪), পিতা হুমায়ুন করিব ও আমিন শরীফ রনি (১৫), পিতা মো. শাহজাহান। মাহান্দাবাদ মাস্টারপাড়া গ্রামের পবনাথ (১৭), পিতা বীরেন্দ্র নাথ; নূর মোহম্মদ রাহাত (১৪), পিতা কবীর মোহাম্মদ; জান্নাতুল ফেরদৌস, পিতা অজ্ঞাত ও আশরাফ (১৪), পিতা নেজাম মিস্ত্রি। দাসপাড়া গ্রামের আনন্দ দাস (১২), পিতা স্বপন দাস ও টিটু দাস (১৫), পিতা দুলাল দাস। মগাদিয়া গ্রামের শুভ (১৩), পিতা শ্রধাম; মিঠু (১৫), পিতা জগন্নাথ।

এর দায় কি জাতী মুক্ত হতে পারবে ? পারবেনা। কারন যে বাহনে ওঠার কারনে তারা আজ অকালে পৃথিবী থেকে চলে গেল তার সেই বাহনটি কি যাত্রী বহনের জন্য অনুমোদীত ? যে ট্রাকটি চালিয়েছিল সে ছিল হেলপার, মানে তার কোন ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিলনা। এর দায়ীত্ব কি সরকার ও প্রশান এড়াতে পারেন ? কেন ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহন হয় ? শুধু এইটিই নয় এভাবে অনেকে ট্রাক দুর্ঘনটা ঘটেছে যেখানে বহু মানুষ হতা-হয়েছে। এভাবে অবাধে চললে ট্রাফিক পুলিশ ও ট্রাফিক অফিসার তথা স্থানীয় প্রশাসনের দরকার কি ? তারা কি শুধু রাজনৈতিক লিডারদের প্রোটকল ও গোলটেবিল বৈঠক ও ফিতা কেটে মাস পার করে বেতন নেয়ার জন্য ? আমরা এর প্রকৃত জবাব চাই। সরকার আমাদরে কাছে এ জবাব দিতে বাধ্য। আমরা জাবাব চাই। আমরা এর সঠিক পদক্ষেপ চাই। আজকের ঘটনার দায় সরকার তথা স্খানীয় প্রশাসন মোটেই এড়াতে পারেনা, পারবেনা।

১২/০৭/২০১১।