মওদুদের সত্য কথন, রিজভীর নেত্রীভক্তি বচন এবং কিছু প্রশ্ন

আমিন আহম্মদ
Published : 18 August 2011, 10:17 AM
Updated : 18 August 2011, 10:17 AM

গত ১৫ আগষ্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি সরকারের সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, "জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের অবস্থান জিয়াউর রহমানের চেয়ে অনেক উপরে। জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তার চেয়ে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা অনেক বেশী। তার (বঙ্গবন্ধুর) সাথে জিয়ার তুলনা মানায় না। যার যা অবদান তা স্বীকার করা উচিত। সবাইকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক না।"

জনাব মওদুদের কথায় প্রকৃত সত্য প্রকাশ পেলেও এ সত্যই তার জন্য এখন বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দলের বিভিন্ন স্তরে। বিশেষ করে হাই কমান্ড এ ব্যাপারে খুবই নাখোস। বিএনপি চেয়ারপারসনকে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনও ক্ষুব্দ, তবে তিনি মওদুদের বক্তব্য নিয়ে এখনও কোন কিছু মন্তব্য করেন নাই বলে জানা যায়। অন্যান্য সকল নীতি নির্ধারকরা এ বিষয়টি নিয়ে মওদুদের উপড় খুবই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। বগুরায় তার নির্বাচনী এলাকায় তাকে ইতিমধ্যে অবাঞ্চিত তাকে ঘোষনা করেছে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদল।

ঐ বক্তব্যের পর সারাদেশে বিএনপির নেতা কর্মিরা যে যাই বলুক। এবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত জনাব রুহুল কবীর রিজভী এ জাতীয় চরিত্রকে সরাসরি পাতিতাদের সাথে তুলনা করলেন। তিনি পাকিস্তানের বংশভুত লেখ তারেক আলীর "ফাইটিং ইয়ার" নামক একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, "পতিতাদের দেহ বিক্রির চেয়েও রাজনীতিবিদদের আত্মা বিক্রি মারাত্মক।"

সাথে সাথে তিনি এ বক্তব্যকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের (?) অভিযোগে তার বিচার দাবী করলেন এবং দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দলীয় কাঠামো মেনে বক্তব্য দেয়ার পরামর্শও দেন।

তিনি আরও বলেন, "দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা যে বক্তব্য দেবেন- তা অবশ্যই দলের শৃঙ্খলার মধ্যে থাকা এবং দলীয় নীতির সম্পূরক হতে হবে। যদি শৃঙ্খলা ভেঙে বক্তব্য দেন- তবে তিনি দলের যেই হোন না কেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।"

এখানে প্রশ্ন হলো এ বক্তব্যে কিভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলো ? তার মানে দলের নীতি মালায় তাহলে মওদুদের বক্তব্যকে তীরস্কার করার বিধান আছে ? সত্য কথা বলা অপরাধ ? মওদুদতো অনেক উল্টাপাল্টা কথার মাঝে এই সত্যকথাটা মুখ ফসকে হোক আর মন থেকেই হোক বলেছেন। তাতে দলের শঙ্খলা ভংগ হবে কেন ? তাহলে বিএনপি কি বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করতে রাজী নয় ? বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার না করলে কিভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানবে ঐ দলটি ? তাহলে কি এটা প্রমান হয়না যে বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতাও মানেনা ? কারন যার কারনে, যার আহবানে দেশের সকল আপমর জনতা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করা বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়ে গেল ! এ দলের সাথে আর জামাতের সাথে তাহলে কি পার্থক্য ?

রিজভী সাহেব বলেছেন, "দলের এই রকম একটি পর্যায়ে থেকে তার এ ধরনের বক্তব্য দেয়া উচিত হয়নি। জাতীয় ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্যের আগে তার অবশ্যই দলের শীর্ষ নেতাদের ও চেয়ারপারসনের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত ছিল।"

তার মানে কি ? চেয়ারপার্সনকে বললে তিনি বলতে দিতেন না ? কেউ যদি নিজের মত প্রকাশ করতে চায়, তাও নেত্রীর অনুমতি নিয়ে বলতে হবে ? তাহলে দল কিভাবে গনতন্ত্র চর্চা করছে ? এ আবার কেমন গনতন্ত্র ? আবার ওনারা বলে বেড়ান ওনারা নাকি গনতন্ত্রের চর্চা করেন, মানেন এবং ক্ষমতায় আসলে তারা দেশের মানুষকে সত্যিকারের গনতন্ত্র উপহার দিবেন (?), এই কি সেই গনতন্ত্রের ডেমো ভার্সন ! এই কি তার নমুনা ?

রিজভী সাহেব বলেছেন,"পতিতাদের দেহ বিক্রির চেয়েও রাজনীতিবিদদের আত্মা বিক্রি মারাত্মক।" তো এখন ওনার কথায় কি প্রমাণ করেনা যে উনি নিজেই ঐ বিক্রেতা ? কারন মওদুদ একথা বলে তার আত্মার সন্তুষ্টি নিয়েছেন, সত্য প্রকাশ করেছেন, আর এই রিজভীরা তা গোপন রেখে, মিথ্যা বলে, নেত্রীর ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা মেনে নিয়ে কি তার নিজেদের আত্মা বিক্রি করছেন না ? তাহলে ঐ পতিতাদের চেয়ে কে বা কারা বেশী বড় পতিতা ? রিজভী সাহেব উত্তর দিবেন কি ?

বিএনপির মওদুদ সাহেবই কেবল দলের বিরোধী বক্তব্য দেন নাই। সম্প্রতি গয়েশ্বর রায় সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন,"ভারতের প্রধান মন্ত্রী মনমোহন সিং-এর আগমনের আগে বিরোধী দলীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হতে পার।" যা নিয়ে দলের মধ্যে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়। আবার অন্য এক সভায় হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন যে, " ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হরতালের মাধ্যমে বরন করা হতে পারে।" এটা তার আশংকা প্রকাশ করেছেন আবার হুশিয়ারীও দিয়েছেন। এতে হয়ত দলের ভিতরের খবরই আগে-ভাগেই প্রকাশ পেয়ে গেছে। তাই এটাও তার অপরাধ। শাস্তির দাবীও উঠেছে।

আবার বিএনপির আর নেতা নাজমুল হুদা ১৪ আগষ্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, "বড় দুই দলের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও আওয়ামীলিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে জাতী আজ জিম্মি।" নিশ্চয়ই কথাটা তিনি ভুল বলেন নাই। এটাইতো আসলে সত্য ও সঠিক বলেছেন। এটাতো তিনি সাধারণ জনতার কথা বলেছেন। এটাও অপরাধ হয়েছে।
উপরের দুই নেতাকেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ। আর গয়েশ্বর রায়কেতো রীতিমত তীরস্কার করেছেন। [সূত্র: ইনকিলাব।]

বঙ্গবন্ধু ও জিয়া কোনদিনই এক কাতারে আসতে পারবেনা। কারন জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন অনেকটা বাধ্য হয়ে। তিনি বঙ্গবন্ধর দেয়া বক্তব্যটি পাঠ করেছিলেন। তাও আবার তৃতীয় ব্যাক্তি।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজীবন সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে জাতীকে মুক্তি এনে দিয়ে গেছেন। তাই তিনি বঙ্গবন্ধু, বাঙালী জাতীর পিতা।

তাই বিএনপি-জামাতীরা মানুক আর নাই মানুক তাতে কিছু যায় আসেনা। কারন সত্যকে কোনদিন ইতিহাস হতে মুছে ফেলা যায়না, যায়নাই। হিটলারের মত শক্তিশালীরাও তা পারেন নাই। আমেরিকার সেই কিসিঞ্জার আজ ফেরারী, শুধু ইতিহাসের স্বাক্ষীর কারনেই। গাদ্দাফীর মত চরিত্রহীন লম্ফটরা আজ বিশ্ববাসীর কাছে উম্মক্ত। এটাই চরম সত্য, সত্য এবং সত্য।

বিস্তারিত খবর দেখুন: ইনকিলাব, আমাদের সময়, আরটিএনএন এবং জনকন্ঠ।