সরকার ও বিরোধীদল, ইতিহাস হতে কেউ শিক্ষা নেয়না

আমিন আহম্মদ
Published : 26 Sept 2011, 05:47 AM
Updated : 26 Sept 2011, 05:47 AM

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ আবার সংঘাতের দিকে ক্রমস অগ্রসর হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এর আশু কোন সমাধান হবেনা। ববং তা আরোও ব্যাপক সংঘাতের দিকেই ধাবমান।

আমাদের দেশের অনেক সমস্যা আছে। আপনি যদি সাধারণ কোন নাগরিককে জিজ্ঞাসা করেন দেশে এখন প্রধান সমস্যা কি ? কেউ বলবেন দ্রব্যমূল্য সমস্যা, কেউ বলবেন রাস্তা-ঘাটের সমস্যা, কেউ বলবেন সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, কেউ বলবেন ব্যবসা-বানিজ্যের সমস্যা ইত্যাদি।

উপরের সবগুলোই আসলে আমাদের দেশের সমস্যা। এতে আমার কোনই দ্বিমত নেই। কিন্তু ওগুলোই যে প্রধান সমস্যা, তা আমি মানতে রাজী নই। আমাদের দেশের আসলে প্রধান সমস্যা হলো রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক ভাবে সহাবস্থান নেই্। নেই একদলের প্রতি অন্য দলগুলোর সহোযোগীতা ও সহ-মর্মিতার কোন নুন্যতম সৌজন্যবোধটুকও। যে যার অবস্থানে অনড়। জনগন তা সমর্থন করুন আর নাই করুন তাতে তাদের আসে যায়না কিছুই। কারন জনগন (!!!???) তাদের সাথেই আছেন !!!!??? জানিনা কোন্ জনগনদ্বয় তাদের সাথে আছেন। হ্যাঁ আছে তা আমরা সবাই জানি। তারা হলো গুন্ডা-শান্ডা-পান্তা ও প-চাটার দল। এরা অপেক্ষায় থাকে কখন তার প্রভু বা তার দল ক্ষমতায় যাবে আর কখন শুরু হবে তাদের রাজত্ব। কখন তারা হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

কিন্তু সাধারন জনগন কি আদৌ তাদের মানে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমগুলোকে সমর্থন করেন ? আমার অভিজ্ঞতায় বলে মোটেই না। তারা চায় শান্তিতে বাস করতে, দু-বেলা দু-মুঠো ভাল খাবার ক্ষেতে, সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ ও অবৈধ দখন মুক্ত রাস্তা-ঘাট ও ফুট-পাথ এবং সরকারী ও দুর্বল-অসহায় মানুষদের জমি-জমা দখল, সরকার নিয়ন্ত্রিত ও সিন্ডিকেট মুক্ত বাজার, দ্রব্যমুল্য সকল মানুষের নাগালের মধ্যে থাকুক, চাঁদাবাজ ও মান্তানের দৌরাত্ব মুক্ত সমাজ, ইভ-টিজিং মুক্ত সমাজ, দুর্নীতি মুক্ত সকল মন্ত্রনালয়, সুস্থ্য ও সহনশীল পরিবেশে ভারসম্য ও স্থিতিশিল রাজনীতি, সুষ্ঠ ও কারচুপিমুক্ত ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন ও নির্বাচনী পরিবেশ, ক্ষমতাশীলদের অবৈধ ক্ষমতার দাপট মুক্ত রাজনীতি ও রাষ্ট্র, যান-ঝট মুক্ত সড়ক, দুর্ঘটনা মুক্ত সড়ক ও দুর্ঘটনারোধে সরকারী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া, সুন্দর ও খানা-খন্দমুক্ত সড়ক, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি, পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ, লোডশেডিং মুক্ত নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবাহ, নিরাপদ সড়ক, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা ইত্যাদি সাধারন ও ফেয়ার চাহিদা। কিন্ত কোন সরকারই এইসব চাহিদাকে সত্যিকার ভাবে ও আন্তরিকতার সাথে কার্যসূচীতে নেয় না্‌ই। যার প্রমাণ আজ স্বাধীনতা ৪০ বছর পরও আমাদের এ অবস্থা।

গতকাল আমাদের দেশে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সূত্র ধরেই মুলত আমার আজকের লেখা। গতকাল সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন বিরোধী নেত্রীর সাথে তিনি কোন আলোচনায় বসবেন কিনা ? তিনি বললেন,"কার সঙ্গে বসবো? চোর, বাটপার, দুর্নীতিবাজ, হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারকারী, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যাকারী এবং একাত্তরের ঘাতকদের রক্ষায় যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে কিভাবে বসবো? শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি তার সঙ্গে বসি তাহলে প্রথমেই তো শর্ত দেবে যে, ওই ধরনের কুকর্মে লিপ্তদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, যারা এতিমদের অর্থ চুরি করে তাদের সঙ্গে বসা উচিত হবে কি? যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে যারা আন্দোলনের হুমকি দেয় তাদের সঙ্গে কিসের মধ্যস্থতা? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর এখন একটাই দাবি- তার দুর্নীতিগ্রস্ত ছেলেদের মুক্তি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং দুর্নীতি ও বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মামলা প্রত্যাহার। তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্যও অভিন্ন। তাই তাদের সঙ্গে বৈঠকে কোন সুফল পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না।" (সূত্র: মানবজমিন।)

উপরোক্ত আলোচানার সারমর্ম হতে এটা ষ্পষ্ট যে, আসলে ইতিহাস হতে কেউই শিক্ষা নেয়না। নেয়নাই। যে যার মত করে চলছে। আর মাঝখান হতে আমরা সাধারন জনগণ শুধু ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আমরা এ হতে স্থায়ী পরিত্রান চাই। ক্ষমতায় যাওয়ার বা ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি আর দেখতে চাইনা। সরকার ও বিরোধীদলকে বলব, "প্লিজ বন্ধ করুন এসব ভন্ডামী, আমাদের স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে দিন, আমরা প্রকৃত নাগরিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই।"