মুরুব্বি যখন বিয়ের জন্য পাগল

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 3 Oct 2012, 06:53 PM
Updated : 3 Oct 2012, 06:53 PM

আমাদের মুরুব্বিদের জন্য দেশে মানসিক সেবা বলতে গেলে নেই বললেই চলে। বয়স্কজনকে বলতে গেলে আমরা কোন মূল্যই দেই না। তাদের মানসিক সুখ দুখ কোন পাত্তাই পায় না। আমাদের নানা পারিবারিক পরিমন্ডলে এ নিয়ে নানা অভিযোগ প্রায়ই শুনতে হয়। মুরুব্বিরা দরকারি মনোযোগই পান না।

বয়োজ্যেষ্ঠ স্বজনের মানসিক রোগ হলে আমরা ভাবি-এগুলো কোনও বিষয় নয়। বুড়ো মানুষ_তাই অমন কাণ্ডকারখানা বা পাগলামি করছেন। কেউ ভাবি-বুড়োর ঢং। অনেকে ভেবে থাকি-বুড়ো বয়সের এমন আচরণ খুবই স্বাভাবিক। এবার দেখি বুড়ো বয়সে কিকি রোগ হতে পারে। ডিমেনশিয়া; স্মরণশক্তির সমস্যা; বিষন্নতা এনজাইটি ডিসঅর্ডার;স্লিপ ডিসঅর্ডার বা ঘুমের সমস্যা।হতে পারে সেক্স জনিত নানা সমস্যা। বুড়ো বয়সে সেক্স নিয়ে বাড়াবাড়ি নিয়ে আমরা হাসিঠাট্টায় মেতে থাকি। কখনো ভাবি না – এটা বুড়োর বুড়োমি নয়_এটা একধরণের মানসিক রোগ; যার নিরাময় সম্ভব। আমাদের অনেক মুরুব্বি বুড়ো বয়সে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে ওঠেন। আমরা সামাজিক ভাবে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে; তাকে বুড়ো বলে নানা ভাবে হেনস্থা করে তার ইচ্ছাকে দমন করার চেষ্টা করি।

এমনও বলতে ছাড়ি না- কবরে দিয়েছে পা;মরার আগে আবার খায়েশ কত? আসলে ভেবে দেখি না_এটা একরকম মানসিক রোগই। তিনি একাকীত্বে ভুগছেন। ছেলে মেয়ে নাতি পুতি তাকে সময় দিচ্ছে না। তার শেয়ার করার কেউ নেই। তার কথা কেউ শুনছে না। তিনি নতুন যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না।আর তার পুরানা ধ্যানধারনা থেকে তিনি মনে করছেন_ একটা বিয়ে করলে মন্দ হয় না। বউ আর তাকে ছেড়ে যাবে না। ছেলে মেয়ে নাতি নাতকুরার সান্নিধ্য পাওয়া যতটা কঠিন; সে তুলনায় একটা বিয়ে করে এক মধ্যবয়সী রমনীর সঙ্গ পাওয়া সহজ। কেবল যৌন চাহিদা নয়; খুব রোমান্টিক রাতের স্বপ্নে নয়; তিনি নিতান্তই সঙ্গের জন্য এমনটা করতে পারেন তা আমরা ভেবেও দেখি না।

আমরা আলোচনা করে তার সমস্যাগুলো শুনে সমাধানের কথা ভাবি না। ভাবি বুড়ো খোকার খায়েশকে কেমন করে সাইজ করা যায়।

তাকে সময় দেয়া দরকার সেটা ভাবি না। ভাবি বুড়ো বিয়ে করতে চায় কেন। বয়সের জন্য তিনি স্লিপ ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, সেটার সমাধান করিনা। তার এনজাইটি; বিষন্নতা দুশ্চিন্তা নিয়ে ভাবি না। তার সঙ্গে সংসারের বিষয়গুলো শেয়ার করি না। তার মতামত নেই না। ভাবি মুরুব্বি সবকিছুই ভুলে যায়; তার আবার মত কি। এভাবে অবহেলা করে করে তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে ফেলি; তারপরও তাকে ডাক্তার দেখানোর দরকার মনে করি না। ভাবি-বুড়ো বিয়ে করতে চায়;এটা আবার কিসের রোগ। অথচ কাউন্সেলিং বোঝানোর মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।সঠিক শুশ্রুষার মাধ্যমে তাকে আরও সাবলীল করে তোলা সম্ভব।

ডা. সুলতানা আলগিন,এফসিপিএস,সাইকিয়াট্রি;সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়;চেম্বার শমরিতা হাসপাতাল; পান্থপথ, ঢাকা।