৫ দিন ঈদের ছুটি: মনোজগতের ফজিলত

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 5 Oct 2012, 04:33 PM
Updated : 5 Oct 2012, 04:33 PM

ঈদের ছুটি ৫ দিন করার চমৎকার ও গ্রহনযোগ্য প্রস্তাব দিয়েছেন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার।

আমি একজন মনোবিজ্ঞানের ও মনোরোগবিদ্যার ছাত্র হিসেবে মানুষের মনোস্বাস্থ্যের সার্বিক ভালমন্দের বিবেচনায় বিষয়টিকে সমর্থন করছি। যে কোন বয়সের যে কোনও মানুষের সবল সুস্থ সাবলীল মনোস্বাস্থ্যের জন্য ছুটি বা অবকাশ বা টেনশন ফ্রি অবস্থায় একান্ত কিছু সময় যাপন খুবই জরুরী; খুবই দরকারী।

আমরা সবাই জানি আগের দিনের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগন রোগীদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য অবকাশকেন্দ্রে পাহাড়ের কাছে; কিংবা সমুদ্র সৈকতে কিংবা চাবাগানে যাবার জন্য পরামর্শ দিতেন। পুরনো দিনের ছবি গুলোতে আমরা তেমনটা অনেক দেখেছি। তখন ছুটি যাপন অনেকটা বিলাস বলে ধরে নিতাম আমরা। সবার পক্ষে সাগর বা পাহাড়ে যাওয়ার সঙ্গতি ছিল না। এখনও যে সবাই ছুটি অবকাশে গিয়ে স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে পারছি তা সমান ভাবে বলা যায় না। কেননা সবার অর্থনৈতিক সাধ্য-সঙ্গতি নেই। কিন্তু আগের দিনের মহান চিকিৎসকদের ধারা অব্যাহত রেখে এখনও আমরা নগন্য চিকিৎসকরা যাদের সঙ্গতি আছে তাদের স্বাস্থ্য সুস্থতার জন্য অবকাশে যাবার পরামর্শ আমরা দেই।

সত্যি কথা বলতে কি ধনী বা নির্ধন; পয়সা অলা বড় চাকুরীজীবি কি স্বল্প আয়ের চাকুরিজীবি _ সকলের সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য অবকাশ বা ছুটি বড় দরকার। বিষয়টি আমরা কম বেশী সবাই মনের ভেতর থেকে যেমন অনুভব করি; তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিষয়টি সু-স্বীকৃত। আমরা যে অনেক কষ্ট করে বাড়ি যাই;অনেক ঝুকি স্বীকার করে_ তার পেছনে নাড়ির প্রতি টান যেমন আছে;গ্রামে থাকা মাবাবা আত্মীয় স্বজনদের প্রতি টান যেমন আছে; তেমনি আছে মন ও শরীরকে ফ্রেশ করার একান্ত চাহিদাও। শরীরই তার সুস্থতার জন্য চায় এই ছুটি। আর মনের টানে সাড়া না দিয়ে উপায় কি!সবার তো আর পাহাড়ের কাছে ; সমুদ্রের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই; টাকাপয়সার টানে সবাই যাবার ইচ্ছাটাও করতে পারেন না। এই যে বিশাল জনগোষ্ঠী লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষ তাদের মনোস্বাস্থ্যের বিষয়টিও অতি গুরুত্ব ও সহৃদয়তা মমতার সাথে দেখতে হবে সরকারকে।

আইজিপি মহোদয় যে দৃষ্টিকোন থেকে ছুটির বিষয়টি বিবেচনা করেছেন; তার গুরুত্ব তো রয়েছেই ; পাশাপাশি এই মনোস্বাস্থ্যের অতি দরকারী বিষয়টিও বিবেচনা করতে আহবান জানাবো সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে। সরকার ঠকবেন না। মনোবিদ্যার একজন ছাত্র হিসেবে বুঝি- ছুটি কতটা দরকার একজন মানুষের। ইওরোপ আমেরিকায় গিয়ে জেনে ও দেখে অবাক হয়েছি সেসব দেশে মানুষের সুস্থ্যতার জন্য ভ্রমণকে উৎসাহিত করার মহৎ তাগিদে বয়স্কজনের জন্য বাস-ট্রেন-ট্রামে বিনে পয়সায় ভ্রমণের সুযোগ অবারিত রাখা হয়েছে। আর তাই বয়স্ক মানুষেরা সুযোগ পেলে বেড়িয়ে পড়েন। অনেকে অনেক দূরে চলে যান। তাতে তাদের মন চাঙা হয়। ফ্রেশ হয়। তারা আরও সুস্থ হয়ে ওঠেন। মানসিক সবলতা ফিরে পান। এটা বয়স্কদের জন্য যেমন সুফলদায়ক; তেমনি ছোটবড় সবার জন্য অতি সুফল দায়ক। আমাদের মত গরীবদেশে অত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থাপনা কঠিন কাজ। সম্ভবও নয় হয়তো সার্বিক বিবেচনায়; তাই অমন মহৎ পরিকল্পনার প্রস্তাব রাখছি না। কিন্তু আইজি মহোদয় যে প্রস্তাব রেখেছেন_সর্বসাধারণের জন্য ইদে ৫ দিনের ছুটি_ সেটি সরকারের পক্ষে চাইলে সম্ভব। এতে অনেকরকম সুফল পাওয়া যাবে। যেমন যাতায়াত সুগম হবে তেমনি এই গরীব দেশে মানুষ সাধারণ মানুষ তাদের সীমিত সাধ্যে মন ও শরীরকে চাঙা করার সুযোগও পান। ৩ দিনের ছুটিতে গিয়ে যেটা আদৌ সম্ভব হয় না। ১ দিন যায় যেতে; ১দিন যায় আসতে; আর একদিন মাত্র থাকার অবকাশ।

২/৩ দিন হয়তো তারা বাড়তি বাগিয়ে নেন_কিন্তু দিনগুলো কাটে নানা টেনশনে। অবকাশ নয়; মনকে ফ্রেশ করা নয়; উল্টো টেনশন নামক রোগে কুঁড়ে কুঁড়ে যায় মন। আমি মানুষের মনোস্বাস্থ্যের জন্য শুধু ৫দিন তারও ২/১ দিন বেশি ছুটির পরামর্শ রাখবো। সকলে ভাল থাকুন। যে যে অবস্থায় যে পরিমান ছুটিই পান না কেন; সেগুলো খোলামনে এনজয় করার চেষ্টা করুন। টেনশন ঝেড়ে ফেলুন। ছুটিতে গিয়ে যদি টেনশনে থাকেন; তাহলে তা খুবই ক্ষতিকর। সবার মনই যেতে চায় পাহাড়ে ; সমুদ্রে বা সবুজ সুন্দর গাওয়ে_ যেখানে সুস্থ নিশ্বাস নেয়ার অবকাশ আছে। খোলা হাওয়াআছে। ধুলা মুক্ত বাতাস আছে। চল মন পালাই পালাই-এমনটি যদি সুস্থতার জন্য হয়- সেই মনের ডাকে সাড়া দিতে ভুল করবেন না।