সুখী হওয়ার জন্য কি আবার বয়সসীমা আছে!সুখী হওয়ার উপায় কি_ এনিয়ে নানা মুনীর নানা মত। অনেকে আবার এজন্য বয়স কোড হাজির করছেন। বলছেন-অমুক বয়সসীমায় পৌছলে সুখী হওয়ার শুরু। মনোরোগ শাস্ত্র ও মনোবিজ্ঞানে সুখী হওয়ার নানা উপায় বাতলে দেয়া আছে। সুখী হওয়া কোন রোগ নয়-সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। কিন্তু অসুখী থাকা ও অসুখী বোধ করা ;অসুখী হওয়া এটা মনোরোগের আলামত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত যাওয়ার আগে একটি বিদেশী গবেষনা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করছি। পত্রিকায় খবর আকারে বিষয়টি এসেছে। বলা হচ্ছে __
৩৭-এ সবচেয়ে সুখী হয় পুরুষ। এ বয়সে পেশাগত পরিচয় দেওয়ার মতো পদমর্যাদা গড়ে ওঠে, সংসার তৈরি হয়, বেশির ভাগ পুরুষ বাবা হন, পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে তাঁদের অনেক স্বতঃস্ফূর্ত দেখা যায়। পুরুষদের পোশাক বানায় এমন একটি প্রখ্যাত ব্রিটিশ ব্র্যান্ডের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এক হাজার ব্রিটিশ নাগরিকের ওপর জরিপ চালায় প্রতিষ্ঠানটি। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, ৩৭ বছর বয়সে পুরুষরা পারিবারিক জীবন নিয়ে সবচেয়ে সুখী থাকেন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সুষ্ঠু সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করেন। এ সময় পুরুষদের প্রাণশক্তি থাকে অফুরান, মধ্য বয়স আরো বছর দশেক দূরে থাকায় জীবন থাকে মোটামুটি জটিলতা মুক্ত। আর তারুণ্যে যে কঠোর জীবন সংগ্রামের শুরু এই বয়সে তার সুফল ভোগ করতে শুরু করেন তাঁরা। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ডেইলি মেইল গত শুক্রবার জরিপের ফল-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
জরিপ থেকে জানা গেছে, এ সময়ে বেশির ভাগ পুরুষের সন্তান থাকে। আর বাবা হওয়া পরবর্তী জীবনকে সবচেয়ে সুখের সময় হিসেবে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৪৩ ভাগ পুরুষ। এই সুখের সামগ্রিক প্রভাব পড়ে তাঁদের জীবনে। আবার ৩৭ বছরে পড়া ৩৫ ভাগ পুরুষ মনে করেন বিয়ের পরের সময়গুলো জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর অন্যতম। এ ছাড়া বাড়ি কেনাকে জীবনের অন্যতম সুখের মুহূর্ত মনে করেন এ বয়সের ১৭ ভাগ পুরুষ, গাড়ি কিনে সুখী হয়েছেন সাত ভাগ পুরুষ এমনকি খেলায় প্রিয় দল জিতলে নিজেকে ভীষণ সুখী মনে হয় ১৮ ভাগ পুরুষের। এ ছাড়া ১৩ ভাগ নতুন জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেয়ে এবং ৯ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে সুখী হন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ৩৭ বছর যে কী সুখের, তা বোঝেন যাঁরা ৩৭ অতিক্রম করেছেন কেবল তাঁরাই!
ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাইকোথেরাপির গবেষক ফিলিপ হাডসন জরিপটিকে সমর্থন করে জানান, ৩৭ বছর বয়সে পুরুষরা স্বাস্থ্যগত বিষয়ে এবং জীবন চলার পথে সাধারণত সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বৃটিশ পত্রিকার খবর বলছে_এই বয়সভিত্তিক সুখের ঠিকানাকে ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাইকোথেরাপি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে এধরনের রিপোর্ট ও গবেষনা আমরা মাঝে মধ্যে দেখে থাকি। তাতে সমর্থনের আয়োজন থাকে। বিষয়টি মন্দ নয়। ৩৭ বছরের পুরুষ সুখী নয় এমনটি বলার কোন কারণ দেখি না। যে কারণ গুলো এখানে বলা হয়েছে তাও যোক্তিক। তবে সাধারণ প্রশ্ন হল সুখী হতে হলে তবে কি ৩৭ বয়স ক্রম একমাত্র ঠিকানা। খুবই হাস্যকর প্রশ্ন। কেননা বয়স তো আর ৩৭এ থেমে থাকবে না। আবার যাদের বয়স ৩৭ এর কম; কিংবা ৩৭ থেকে বেশ দুরে তাদের কে তো আর বলা যায় না যথার্থ সুখের জন্য ভাইয়া ৩৭ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করো।তার আগে সুখ চাইলেও পাবেনা। না, মনোরোগ শাস্ত্রর ছাত্র ও মনোবিজ্ঞানী হিসেবে এমনটা আমরা বলতে পারি না। আবার অনেক রোগী আমাদের কাছে আসেন অসুখী মনের রোগ নিরাময়ে। তাদের বয়স কারো ৩৭ এর কম; কারো বেশী। এদরকে আমরা কি প্রেসক্রিপশন দেব।
তাহলে এবার সহজভাবে বলি_সুখের কোন বয়স নেই। সুখী হতে চাইলে কোন বয়সের অপেক্ষায় থাকলে চলবে না। হ্যা, এটা ঠিক যে ৩৭ বছর বয়সে এস্টাবলিস্ট মেন্টসহ নানা সহযোগে সুখের ঠিকানা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সবার জন্য তা নয়। যার কাঙ্খিত এস্টাবলিস্টমেন্ট হয় নি-সে ৩৭ কেন ৪৭-৫৭তেও সুখী হবে না। সুতরাং এই সুখের বয়সকোড কেবল বলার জন্য বলা। সুখের কোন বয়স নেই। সুখের প্রধান মন্ত্র হল সুখী হতে চাওয়া। এই আকাঙ্খা। এই আকাঙ্খা করতে হবে সরল মনে। সাফ দিলে। মন সাফ থাকলে সুখ সেখানে বাসা বাধবে এমন সম্ভাবনা ৯৯ পার্সেন্ট।
মন সাফ রাখার কথাটি কি খুব ভাববাদী বা সুফিয়ানা হয়ে গেল কি!সহজ করে বললে বলা যায়_টেনশন যত কম; সুখ তত বেশী। পাগলের সুখ মনে মনে _ কথাটা কি তাই বলা হয়!পাগল মনে মনে সুখী কিনা জানি না_ অসখী রোগে ভুগে যে অনেকে পাগলপারা হয়ে ওঠেন; তেমন রোগীর মুখোমুখি মাঝেমধ্যে হয়ে থাকি। তাদের সিমটম অনুযায়ী ওষুধ দেই কম বেশী। তবে যে পরামর্শটি একদম বিনা মূল্যে দেই তাহল টেনশন ফ্রি থাকার পরামর্শ। অনেকে এমন পরামর্শ তো যে কেউ চাইলেই দিতে পারে সেজন্য মনোরোগ ডাক্তারের কথা শুনবো কেন!
শুনবেন এজন্য যে আর দশ জন যেমন বলছেন;পিতা মাতা ভাই বোন যেমনটা বলছেন আপনাকে আমিও সেই একই কথা বলছি। বিশেষজ্ঞ হিসেবেই বলছি। এটি মানলে আপনাকে কষ্ট করে ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালে যেতে হবে না। এমনিতে ডাক্তারদের নিয়ে কত সমালোচনা; তারা মোটা অঙ্কের ফিস নেন। সময় নিয়ে রোগী দেখেন না। এমন ডাক্তারকে সহজেই এভয়েড করা রাস্তা হল টেনশন ফ্রি থাকার পরামর্শটি মেনে নেয়া। টেনশন ফ্রি থাকার চেষ্টা একধরনের নিরন্তর প্রাকটিস। এটা প্রতিদিনই চালিয়ে যেতে হয়। প্রতিদিনই সকালবেলা উঠে নিজেকে বলতে হবে-টেনশন করবো না। নিজেকে শান্ত রাখবো। উত্তেজিত হব না। নিজেকে কনট্রোল করবো। রাগ করবো না। রেগে গেলেই হেরে যাব। এমনটা প্রাকটিস করলে অবশ্যই সুফল পাবেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটা নিয়মিত প্রাকটিস করলে অনেক বড় বড় রোগ থেকে বেচে যাওয়ার আশাবাদ আপনি অবশ্যই পোষন করতে পারেন।