অবহেলায় অতিশীপর আনোয়ার হোসেনের জন্মবার্ষিকী

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 7 Nov 2012, 06:48 PM
Updated : 7 Nov 2012, 06:48 PM

নীরবে নিভৃতে আশিতম জন্মবার্ষিকী পেরুলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অবিসংবাদিত নবাব আনোয়ার হোসেন। স্যার আপনাকে স্যালুট। আনোয়ার হোসেন যেন জীবন্ত ইতহাস। মহান চলচ্চিত্র অভিনেতা তিনি। সিরাজউদদৌলাকে তিনিই বাঙালির মানসপটে চির জীবন্ত করে রেখেছেন। পত্রিকান্তরে পড়ে জানলাম_নিতান্তই পারিবারিকভাবে খুব কাছের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে নিভৃতেই পালিত হলো বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের শক্তিমান অভিনয়শিল্পী আনোয়ার হোসেনের ৮১তম জন্মদিন। বাংলা চলচ্চিত্রের এই অভিনেতার জন্মদিনে তাঁর পাশে ছিলেন না চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কেউই।

তবে চলচ্চিত্রশিল্পের কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাসিমা আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, 'কে এলো বা গেলো তা নিয়ে আমরা ভাবি না। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দুঃখবোধ নেই। মাঝে মধ্যে আনোয়ারের দু-একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ফোনে খোঁজ-খবর জানতে চান। তখন খুব ভালো লাগে।'

নাসিমা আনোয়ার এও বলেন, 'আনোয়ার তো এখন সেভাবে কথা বলতে পারে না। তবে সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করে। এবারের জন্মদিন পালনের বিষয়টি যখন তাঁকে জানালাম তখন বেশ খুশি হয়েছিল। কথাটি শোনার পর তাঁর মুখে হাসি ফুটেছিল। তারপর পরিবারের সবাই মিলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজনটা করি।'

জানা গেছে, গতকাল বিকেলে স্ত্রী, পুত্রবধূ, কন্যা, কন্যার জামাতাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে আনোয়ার হোসেন তাঁর জন্মদিনের কেক কাটেন।
আনোয়ার হোসেনের চার ছেলে ও এক মেয়ে। চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে থাকেন সুইডেনে। অন্য তিন ছেলে উপল, ইরান ও ফিরোজ থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

আনোয়ার হোসেনের জন্ম জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। লাঠিয়াল ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরে অবশ্য আরও দুবার তিনি এ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। গত বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান আসর থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন গুণী এ শিল্পী। বাংলা চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকও পান তিনি।

এবার সামান্য একজন ব্লগলেখক হিসেবে আমার ২/১টা অনুভুতির কথা জানাই। এমন একটা গুনি মানুষকে আমরা তার জন্মদিনে কি যথার্থ সম্মান জানাতে পারলাম। তিনি যে আমাদের মাঝে মহীরুহ বেচে আছেন। বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্রের লোক তারা তাকে সম্মান জানিয়ে নিজেরাই সম্মানিত হতে পারতেন। তাকে সম্মান জানিয়ে অনুপ্রেরনা পেতে পারতেন। তার কাছে গিয়ে অনুভব করতে পারতেন একসময় আনোয়ার হোসেন, গোলাম মোস্তফা,ফতেহ লোহানী, খান আতাউর রহমান,রাজ্জাক, রহমান,খলিলের মত মহান অভিনেতা বাংলা চলচ্চিতকে আলোকোজ্জল করে রেখেছিলেন। এখন সেই সোনালী দিন নেই। সেই সোনালী দিন না থাকা আজকের ধংসপ্রাপ্ত চলচ্ছিত্রের জন্য অভিশাপ। একসময় এই মহান অভিনেতা ও মহান নির্মাতারা কলকাতা বোম্বে লাহোর-এর ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অসাধারণ সব ছবি বানিয়েছেন। এখন তা পারছি না তার কারন হল বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান নেই। যে সমাজে প্রবীনের মর্যাদা নেই সেই সমাজ এগুতে পারে না। প্রবীনরা সব সময় আলোকদিশা। তারা পথ দেখান। সেই পথ ধরেই নবীন সেরা কিছু করে দেখাবার অনুপ্রেরনা পান। ভারতেই তো দেখি দিলীপ কুমার, ধর্মেন্দ্র অমিতাভ বচ্চন-এর মত মহান অভিনেতারা মহৎ সম্মান পাচ্ছেন বলেই সেখানে আজ শাহরুখ খান, আমীর খান ইরফান খান ওমপুরীর মত মহৎঅভিনেতাদের পদচারনায় ইন্ডাস্ট্রি একের পর এক মাইল ফলক পার হচ্ছে।

প্রবীনদের যথা মর্যাদা অবশ্যই দিতে হবে। তা যেমন বৃহৎ ক্ষেত্রে দিতে হবে। তেমনি পারিবারিক ক্ষেত্রেও দিতে হবে। প্রবীনের অমর্যাদা করা যাবে না। আমাদের ফেমিলিতে যারা প্রবীন ; তারা যেন পারিবারিক পরিসরে এমন অবহেলা অমর্যাদার শিকার না হন। তাদের সম্মান গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করে তুলুন।অআপনার সন্তারে জন্মদিন যেমন সুন্দর ভাবে পালন করেন। আপনার বিবাহবার্ষিকী যেমন কেক কেটে পালন করেন। তেমনি আমাদের প্রবীন আত্মীয় মুরুব্বিদের জন্মদিন,পিতা দিবস মা দিবস আমরা আসুন সুন্দর ভাবে পালন করি। এটা প্রবীনদের অধিকার। আমাদের সন্তানদের যেমন অধিকার। তেমনি আমাদের প্রবীন পিতামাতা চাচা মামা ফুপু খালা নানা দাদা দাদী নানীদেরও অধিকার রয়েছে। তাদের প্রতি যেন অবহেলা না করি। তাদেরকে গুরুত্ব দিলে ভালবাসা দিলে তারা মানসিক শারীরিক ভাবে ভাল থাকবেন। এটা করলে আমাদের সন্তানরা শিখবে। আমরা যদি আমাদের মুরুব্বিদের আনন্দ ঘন বন্ধনে রাখতে পারি। তার সুফল একদিন আমরাও পাব। একদিন আমাদের সন্তানরাও আমাদের প্রতি তেমনি সম্মান ভালবাসা দেখাবে।