বাবা যখন পথের ভিখারি

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 13 Nov 2012, 06:01 PM
Updated : 13 Nov 2012, 06:01 PM

নিশ্চয়ই অনেকে ভাবছেন বাবা কেন চাকর কিঙবা মা কেন পরিচারিকা মার্কা ঢাকাই ছবি নিয়ে দুকথা খিতে বসেছি আজ। আসলেই তাই ।আমাদের উপমহাদেশের বাস্তবতায় সমাজে ও পরিবারে সিনিয়র সিটিজেনদের কি দুর্গতি তা আমরা কম বেশী সবাই জানি। তাই বলে কোন অর্থবান বাবা ছেলেদের পাল্লায় পড়ে চাকরে পরিনত হয়েছেন; কিংবা কোন মা চাকরানী_এমন ফিল্মি ঘটনা আদৌ ঘটে কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয় ছিল। ফিল্মের লোকজন কেন এমন অদ্ভুত কাহিনী ফাদেন তা নিয়ে বন্ধুবান্ধব মহলে বেশ সরস আলোচনা শুনেছি। যার যেমন রুচি; যার যেমন অভিজ্ঞতা _ছবিতে ওই আলুপটলের কারবারী ফিল্ম মেকার তাই তুলে ধরেছেন- এমন টিটকিরি অনেকের মুখে শুনেছি। ভেবেছি হতেও পারে। কিন্তু আমার সব সংশয় ভেঙে দিয়েছে বিশ্বের রাজতান্ত্রিক দেশ ধনকুবেরদের দেশ সৌদী আরব। সেদেশে সত্যি সত্যি অমন ফিল্মি ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকায় পড়া খবরে জেনেছি সেকথা।

ছেলেদের প্রতারণায় ৮৮ বছরের আব্দুল্লাহ এখন সত্যিই পথের ভিখিরি।

আব্দুল্লাহ আল দৌসারি জীবনের সিংহভাগ কাটিয়েছেন অর্থোপার্জনে। সাধারণ একজন সৌদি নাগরিক হিসেবে মেষপালন আর ভাঙ্গারি কেনা-বেচার ব্যবসা করে তিনি সঞ্চয় করেন ৮লাখ সৌদি রিয়াল। এর বাইরে স্থাবর সম্পত্তি ছাড়াও তার ছিল গবাদিপশুর বিশাল এক পাল। সবদিকে ভালই চলছিলেন আব্দুল্লাহ। কিন্তু জীবনের ৮৮তম বছর পেরোনোর প
রই শুরু হয় চরম দুর্যোগ। নিজের ঔরসজাত ৫সন্তান তার বিষয়-সম্পত্তি কুক্ষিগত করে জন্মদাতা পিতাকে যাকে বলে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় বাড়ি থেকে।

অশীতিপর আব্দুল্লাহর জন্য সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয়টি হল, আদালত রয়েছে তার ছেলেদের পক্ষে। ওয়াদি আল দাওয়াসির কেন্দ্রীয় শহরের আদালত তার সব সহায় সম্পত্তির ওপর পুত্রদের পূর্ণ আইনগত অধিকার নিশ্চিত করে রায় দিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে বিচারক এই বিষয়টি ভাবেনি যে, এরকম হলে বয়সের ভারে ন্যুব্জ আব্দুল্লাহকে সন্তানরা চাইলেই পথের ভিখিরিতে পরিণত করতে পারে। এবং দুর্ভাগ্যজনক হলো— বাস্তবে ঘটেছে তাই।

আব্দুল্লাহর প্রাপ্তবয়স্ক ৫ পুত্র সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা আর্জিতে জানায়, তাদের পিতা বয়সজনিত কারণে উন্মাদে পরিণত হয়েছেন। এ কারণে তিনি তার সমস্ত অর্থ-কড়ি সম্পদ নষ্ট করে ফেলতে পারেন বলে তারা উদ্বেগে আছে।

আদালতের কার্যক্রম চলাকালে আব্দুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং টানা ৪ মাস এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াদৌড়িতে কাটে। ওদিকে আদালত পুত্রদের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, তার অর্থকড়ির কর্তৃত্ব সন্তানদের হাতে থাকবে। রায় হওয়ার পর পিতা হিসেবে ভৎর্সনা করে ছেলেদের মতি ফেরাতে চাইতেই উল্টো ফল হয়— ক্রুদ্ধ সন্তানরা বাপকে একেবারে বাড়ির বার করে দেয়।

"তারা আমাকে এই বয়সে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি জানি না কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো আর কী খাবো? আমাকে উন্মাদ প্রচার করে তারা আমার মেষগুলো, ভাঙ্গারি মালামাল আর টাকা লুটে নিয়েছে। এরপর তারা আমাকে আমারই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে," অভিমানাহত কণ্ঠে সংবাদ মাধ্যমকে জানান আব্দুল্লাহ দৌসারি।

তিনি আরও বলেন, "আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ দাবি করে ৪ মাস ধরে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে টানা-হেঁচড়া করেছে। তারা আমার অসুস্থতা আর অশীতিপর বয়সকে পুঁজি করেছে। আমি সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকা সত্ত্বেও ছেলেরা আমার সম্পত্তির মালিক হতে চেয়ে এসব করেছে।"

সত্যি করুন এই গল্প। এটা বাংলা ছবির গল্পকেও হার মানাচ্ছে। মনোরোগের চিকিৎসক হওয়ায় দেশে এমন কিছু ভয়ংকর গল্প আমার কানে এসেছে যে- জায়গা জমি হাতিয়ে নেয়ার লোভে কিছু পরিবারে ভাইবোনেরা মিলে কোন ভাইকে ঠকাতে মানসিক রোগী সাজিয়েছে। আদালতে প্রমান হাজির করেছে। কিছু অসৎ চিকিৎসক মানসিক রোগী সাজানোর ষড়যন্ত্রে টাকার বিনিময়ে সাহায্যও করে থাকে। ধিক্কার সেই চিকিৎসকদের। এরা ডাক্তার সমাজের কলঙ্ক। কিন্তু বাবার সম্পদ হাতিয়ে নিতে বাবাকে মানসিক রোগী সাজানোর ঘটনা তেমন শুনিনি। আসলে সম্পদ জীবনে দরকার কমবেশী। এই সম্পদ যখন কোন মুরুব্বির জীবনের চরম দুর্যোগের কারন হয়_তা সত্যিই পরিতাপের। আমরা হয়তো পিতামাতাকে ঠকানোর জন্য এমন জঘন্য নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র করি না_কিন্তু বয়স্ক জনের বেশ অবহেলা করি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা যারা সৌদী আরবের নির্মম কাহিনীটা পড়ে উহু আহা করছি_সবাই কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো আমাদের সঙ্গে যে মুরুব্বি রয়েছেন তার প্রতি যথার্থ ব্যাবহার করছি। তার সঠিক প্রযত্ন নিশ্চিত করতে পারছি কি সবাই। আমাদের দেশেও যারা সত্তুর বছর পেরিয়েছেন ৭৫/৮০ বছর যাদের বয়স তারাও নানা রকম অবহেলার শিকার। তাদের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। বুড়ো মানুষ-হাড় ক্ষয়ে গেছে। পেশী দুর্বল -তাদেরকে তো কষ্ট করতে হবেই। এমন ভুল ধারনার বশে আমরা তাদের কষ্ট দেই। তাদের দরকারি সাপোর্ট দেই না। তারা থাকেন অনাদরে। বিশেষ করে বৃদ্ধদের অবস্থা তো খুবই করুন। তাদের অর্থনৈতিক মালিকানা নেই বলে ;তারা সম্পদের অধিকারী নন বলে বেশ অযত্নের শিকার হন। বিশেষ করে বৃদ্ধরা নানা রকম মানসিক সমস্যার ও রোগের শিকার হন সেসব রোগ একদম ধর্তব্যের আনা হয় না। সোদৗ কাহিনীতে দেখছি ৮৮ বছরের ওই মানুষটাকে মানসিক রোগী সাজান হয়েছে সম্পত্তি হাতানোর জন্য। ভুলে যাওয়ার সমস্যা, বিস্মরণ,এসব তো হতেই পারে। অন্যান্য রোগের পাশাপাশি এসব লক্ষন থাকতেই পারে। আমাদের উচিত এসব রোগকে অবহেলা না করে সুচিকিৎসা করা। কেননা এসব রোগের সুচিকিৎসা রয়েছে। এবং তা খুবই দরকারি। আরেকটা দরকারি ব্যপার হল তাদেরকে সঙ্গ দেয়া। তাদেরকে নিসঙ্গ থাকতে না দেয়া। পরিবারের সমাজের নানা ব্যাপার তাদের সঙ্গে শেয়ার করা। তবে তারা চাঙা থাকবেন। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মত নেয়া উচিত। তা মূল্যায়ন করা উচিত। যদি সেসব সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী না হয় তবে তা বুঝিয়ে বলা উচিত। তারা অবুঝ নন। তাদেরকে আমরা শিশুর মত সরল ভাবতে ভালবাসি। ব্যাপারটা সবক্ষেত্রে তা নয়। সামাজিক পারিবারিক ক্ষেত্রে তাদের শেয়ার না করে আমরা তাদের ফেলনা বানিয়ে ফেলি। ভারতসহ একাধিক দেশে আমরা দেখতে পাই ৮০ বছরের বৃদ্ধ রাষ্ট্র পরিচালনাসহ নানা গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সংসার পরিবারও রাষ্ট্র পরিচালনার মত একটা ক্ষেত্র। সরকারের দেশের সেবা করতে পারলে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পেলে তারা সংসারেও ফেলনা নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

@@@এমিরেটস২৪/৭ এ পকাশিত মূল রিপোর্ট এখানে দেয়া ঞল@@@
Old man robbed of fortune, kicked out of home… by his sons
88-year old Saudi now spends time in mosques and on the street
By

Staff

Published Sunday, November 11, 2012

Abdullah Al Dousari (SUPPLIED)

Abdullah Al Dousari of Saudi Arabia spent most of his life making money by raising sheep and selling scrap until he was able to save nearly SR800,000 (Dh790,000) and have a large herd of livestock. When he retired and reached 88 years of age, his five sons seized all his assets and kicked him out of his own house.

What underscores the ageing man's tragedy is that his sons had the law on their side, with the court in the central town of Wadi Al Dawasir giving them a free hand in their father's assets, apparently not realising he would be thrown out.

In their law suit, the five adult sons claimed their father has become insane because of old age and that they were worried he would waste all his money.

After spending four months jumping from one hospital to another at court orders, Dousari was told by the judge that his sons must be in charge of his funds. Once that verdict was issued, the father tried to rebuke his sons, prompting them to kick him out.

"They threw me out of my house at this age, I don't know where to go, where to stay and where to eat. They said I am insane, stole my sheep, my scrap and my money, then kicked me out of my own house," Dousari told Sharq newspaper.

"They dragged me inside hospitals for four months, claiming I am mentally sick. They took advantage of my weakness and old age. Simply, my sons have decided to inherit me while I am still alive and enjoying good health."

The paper said Dousari, who now spends most of time at mosques and in the street, is appealing for authorities to help restore justice to him.