হাসপাতালের সামনে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 20 Nov 2012, 08:02 PM
Updated : 20 Nov 2012, 08:02 PM

খবরটি পড়ে আমি ভীষন ভাবে লজ্জিত। একজন চিকিৎসক হিসেবে লজ্জিত। একজন মানুষ হিসেবে লজ্জিত। সত্যি এই লজ্জা ও বেদনার ভাষা আমার জানা নেই। আমরা নিজেদের সভ্য শিক্ষিত বলে দাবি করি। এই হল সভ্যতা! ছি এই হল মানবতা!

ছি এই হল আমাদের শিক্ষা!
খবরটি পড়লাম ঢাকার একটি প্রধান দৈনিকে। তারা লিখেছেন_

মানুষটি মারা গেলেন হাসপাতালের প্রধান ফটকে। চিকিৎসা তো দূরের কথা, তাঁকে কেউ হাসপাতালেই নিয়ে যাননি। রাস্তায় পড়ে ছিলেন অন্তত আট ঘণ্টা।

অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সোমবার হাসপাতালের পরিচালক, অধ্যাপক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, রোগী ও রোগীর লোকজন, এমনকি অনেক সাংবাদিকও ওই ফটক দিয়ে হাসপাতাল ও কলেজে ঢুকেছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষটিরও যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তা কারও মনে হয়নি।

মারা যাওয়ার আগে ও পরে মানুষটির পরিচয় জানা যায়নি। বয়স ৩০-৩৫ হবে। হাসপাতালের উপপরিচালক সফিকুল আলমকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, 'রাস্তায় কত লোক পড়ে থাকে, সবার দায়িত্ব তো হাসপাতাল নিতে পারে না।'

যে ভদ্রলোক খবরটি লিখেছেন তিনিও সম্ভবত লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে এটি লিখেছেন। কাউকে তিনি ছাড় দেন নি। তিনি দেখিয়েছেন আমাদের মানবতার মৃত্যু ঘটেছে। আমরা মানুষ হিসেবে পরিচয় হারিয়েছি। সবাই দেখেছে মুর্মূষু মানুষটিকে। কিন্তু কেউ বাচাতে এগিয়ে যায়নি। আমরা চিকিৎসকরা যাই নি। অথচ কত আশা নিয়ে মানুষ আমাদের কাছে আসে বাঁচার আশ্বাস পেতে। জীবনের ঠিকানার সন্ধানে। ঠিক সে হাসপাতালের সামনে এসে মৃত্যুবরণ করে আঙুল তুলে দেখিয়ে গেল এই সমাজ এই সংসার এই নগর এই রাষ্ট্র আজ কত অধঃপতিত হয়েছে। তার মৃত্যু আমাদের বিবেকের মৃত্যু ঘটাল। বিবেক যে আজ লাশ, সেটা অবহেলা অধপতনের লাল সঙ্কেতে প্রমান করে দিয়ে গেল। অনুগ্রহ করে কেউ প্রশ্ন তুলবেন না কোন হাসপাতালের সামনে ঘটনা ঘটেছে! কেননা আপনি আমি সবাই জানি ঢাকার যে কোন হাসপাতালের সামনেই এমন ঘটনা ঘটতে পারত। এবং সেক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটতো। আমরা এভাবেই সবাই নগরজীবনের ব্যস্ততার মুখোশের নেকাব পরে নিজেদের লুকিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতাম।

কিভাবে আমরা দায় শোধ করবো এই মৃত্যুর। কিভাবে জবাবদিহি করবো। ক্ষমা চাইবো ওই প্রাণহীন দেহের কাছে। তার বিদেহী অতৃপ্ত আত্মার কাছে। ক্ষমা কি মিলবে। মিলবে না। এই ক্ষমাহীন সামাজিক অবক্ষয়ের অপরাধের কোন আক্ষরিক অর্থেই ক্ষমা নেই।