কবরেও ঠাঁই হল না পিঙ্কির: ছি এই নষ্ট সমাজ!! ছি!

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 25 Dec 2012, 05:25 PM
Updated : 25 Dec 2012, 05:25 PM

আমরা কি জবাব দেব পিংকির অতৃপ্ত আত্মার কাছে। কিভাবে ক্ষমা চাইবো এই মেয়েটির কাছে। মেয়েটির কি দোষ! সে স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছে মৃত্যুকে। বখাটেদের উৎপাত সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে কদিন আগে। তারপর এই সমাজ এই সমাজপতিরা বার বার হত্যা করছে তাকে। জীবিত অবস্থায় তাকে অপমান অপদস্থ করেছে বখাটে চক্র। আর মৃত্যুর পর অবস্থা আরও ভয়াবহ। পত্রিকান্তরে যে খবর পড়লাম তাতে প্রতিবাদ না করে পারছি না।

পারিবারিক কবরস্থানেও ঠাঁই হলো না পিংকির!

পত্রিকার রিপোর্ট বলছে– লাঞ্ছনা আর অপমানে আত্মহত্যার পরও শান্তি মেলেনি স্কুলছাত্রী সাদিয়া আক্তার পিংকির। পারিবারিক কবরস্থানে স্থান হয়নি তার।

ঢাকার মাণ্ডায় আত্মহত্যার পর পিংকির বাবা তার লাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করতে চাইলে বাধা আসে পরিবারের শরিক ও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে। গ্রাম্য মাতব্বররা এক জোট হলে পরে নির্ধারিত কবরস্থানে নয়, বাড়ির উঠোনের পাশে একটি স্থানে পিংকিকে দাফন করতে বাধ্য হন তার বাবা।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা ওই পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।

ঢাকার মাণ্ডায় বখাটে রনি ও তার সহযোগীদের হাতে অপহৃত হয় পিংকি। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার ও রনিকে গ্রেফতার করার পর ফের রনির সহযোগী ও পরিবারের সদস্যরা হুমকি দিতে থাকে। এ অবস্থায় আত্মহত্যা করে পিংকি।

এদিকে, মেয়ে হারিয়ে শোকে শোকাভিভূত পরিবারটি সোনারগাঁওয়ের গ্রামের বাড়িতে স্থানীয়দের সমাজচ্যুত করার হুমকিতে এখন দিশেহারা। আতঙ্ক আর শোক আঁকড়ে ধরেছে পরিবারটিকে।

পিংকির বাবা বাবুল

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার মেয়ে মরেও শান্তি পেলো না। গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসার পর পাড়ার লোকজন পিংকিকে আমাদের কবরস্থানে কবর দিতে দেননি। নামাজে জানাজাও পড়তে দেননি। আমরা এখন নিজ গ্রামে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় আছি। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে গ্রামের লোকজন আমাদের সমাজচ্যুত করতে চান।"

বাবুল হোসেন বলেন, "পিংকির আত্মহত্যার পর রাতেই মাণ্ডায় বখাটে রনির পরিবার থেকে আমাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা পুরো পরিবার এখন মাণ্ডায়ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যাদের কারণে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।"

যে কারণে আত্মহত্যা
যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুর সিটি করপোরেশন স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আক্তার পিংকি রোববার বিকেলে আত্মহত্যা করে।

সরেজমিনে এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, মুগদা থানার উত্তর মাণ্ডা ছাতা মসজিদ কলোনিতে সাদিয়া আক্তার পিংকি তার দাদীর সঙ্গে থাকতো। সেখানে থাকাকালে এলাকার বখাটে যুবক রনি প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতো। সে পিংকিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে গত ২৮ নভেম্বর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় রনি ও তার বন্ধু জনি পিংকিকে অপহরণ করে।

অপহরণের ঘটনাস্থল যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে পড়ায় পিংকির বাবা বাবুল হোসেন এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার পর যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা পুলিশের সহায়তায় পিংকিকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে রনিকে। বর্তমানে ওই অপহরণ মামলায় রনি জেলহাজতে রয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে রনির পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব মামলা তুলে না নিলে বাবা-মেয়েকে হুমকি হত্যার দিয়ে আসছিল।

রনির পরিবারের হুমকির মুখেই তারা বসবাস করতেন। রোববার দুপুরের দিকে রনির কয়েক বন্ধু বাসায় গিয়ে পিংকিসহ তার দাদীকে ফের হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর বিকেলের দিকে পিংকি দাদীর কাপড় দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ফাঁস লাগায়। এ অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজন দরজা ভেঙে পিংকিকে উদ্ধার করে ভর্তি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যার দিকে মারা যায় পিংকি।

ঘটনার দিন রাতেই পিংকির বাবা বাবুল হোসেন মুগদা থানায় রনির দুই বোন পাখি ও পান্নার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালেহ শেখ মো. মাসুদ বলেন, "পাখি ও পান্নার বিরুদ্ধে মামলার পর তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান চালানো হলেও তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। তবে আমরা তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।"

এই যখন অবস্থা তখন লজ্জায় আমাদের মুখ লুকানোর কথা। দিল্লিতে একটি মেয়ে বাসে ধর্ষিত হওয়ারর পর সারা ভারতবর্ষ জেগে উঠেছে আন্দোলনে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও ভাষন দিয়েছেন জাতির উদ্দেশে। এ নিয়ে ২টি পোস্ট দিয়েছি ব্লগে ।তাতে পাঠক আগ্রহ দেখে আমি অভিভুত। পাঠকরা প্রচুর মন্তব্য করছেন। অনেকে রাজনীতি জড়িয়ে ফেলছেন। আমার নজরে পড়েছে কিছু মন্তব্য কারী বলছেন ভারতে প্রতি ২০ মিনিটে ধর্ষন হয়…ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে বখাটেদের পীড়নে যখন মেয়েরা সুইসাইড করে সেই বখাটেদের শাস্তির জন্য আমারা কি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছি। শুধু রাজনীতি শত্রতা কথাতেই বাঙালির প্রতিবাদ শেষ। কেউ বলবে অমুক আমল তাই এত বখাটে উঃপাত। আরেক দল বলবে আগে বখাটেরা আরও খারাপ ছিল। এসবে আসল অপরাধ ধামাচাপা পড়ে। পাবলিক ইনটারেস্ট নিয়ে কোন সংগ্রাম নেই। অথচ ভারত বর্ষে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। আমরা কোন প্রতিবাদ করছিনা। এই তালেবান মার্কা লোকজন পিঙ্কির লাশ দাফনে বাধা দিল তাতেও কোন বাদ প্রতিবাদ নেই।

জীবিত পিঙকিদের জন্য দুটি কথা

মরে কোন লাভ নেই। বাচতে হবে। বেচে প্রতিবাদ করতে হবে। বখাটেদের রুখতে হবে। মরার চেয়ে প্রতিবাদ ভাল। প্রতিবাদ বাচার ক্ষমতা দেবে। মরে কি লাভ। তখন লাশ নিয়ে আরও কয়েক দফা ধর্মীয় পরিচয়ের বখাটেরা নারীকে অপমান লাঞ্ছনায় মেতে ওঠে। তোমরা কেন মরবে পিঙকি। প্রতিবাদ কর। মেয়েদের বাবারা আপন কণ্যাকে বোঝান। তার প্রতিরোধ আন্দোলনে তার পাশে দাড়ান। মেয়েকে লড়াইয়ের শক্তি দিন। মেয়েকে শিক্ষিত করুন। শিক্ষা বাচার শক্তি দেয়। স্কুলে মেয়েদের সাইকোলজিকাল সাপোর্ট দিন শিক্ষকরা। বিশেষ করে শিক্ষিকাগন। খোজ নিন কেউ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে কিনা বখাটেদের পীড়নে। তাকে প্রতিবাদ করার সাহস যোগান। বখাটেরা থাকবেই। ওরার রাজনীতির আশ্রয়ে ধর্মের আশ্রয়ে বার বার মেয়েদের নির্যাতন করবে। কি বেচে থাকতে। কি মরে লাশ হওয়ার পর। তাই ওদের বড় হওয়ার প্রেরনা দিন।