দিল্লি-আফ-পাকিস্তান-ঢাকা সর্বত্র নারীই কেন টার্গেট!!

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 3 Jan 2013, 06:15 PM
Updated : 3 Jan 2013, 06:15 PM

ভারত বলুন, আফগানিস্তান-পাকিস্তান বলুন সর্বত্র নারীই কেন টার্গেট!এমন কি আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশও নারীর জন্য নিরাপদ নয়। নারী নির্যাতন বাড়ছেই। একদল অন্ধকারের জীব আবার আকারে প্রকারে সেই নারী নির্যাতক-ধর্ষকদের পক্ষে সাফাই গাইছে। বলছে নারীর এই দোষ; নারীর ওই দোষ। নারী এমনটা করলে এই পরিনতি হত না। ভাবুন একবার অবস্থা। এত দেখছি নারীর ওপর সংঘবদ্ধ নির্যাতন। তা ক্রমেই বেড়েই চলেছেেকোথায় নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠবে। উল্টা দেখছি নারী নির্যাতন যাতে আরো হয় সেজন্য অন্ধকারের জীবেরা তৎপর। যাই হোক ব্যাপারটা খুবই দু:খজনক। তারপরও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। যারা আমরা আলোর সন্ধানী -নারীই হোক পুরুষই হোক সম্মিলিত ভাবে সামাজিক সচেতনতা তৈরির আন্দোলনে শরীক হতে হবে।

দিল্লির আমানত(ছদ্মনাম)ধর্ষনের নিষ্ঠুর ঘটনার পর সেখানে আমরা ভারত বাসীকে জেগে উঠতে দেখেছি। তারা ব্যাপারটিকে নিখিল ভারত সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করতে পেরেছে। দেরীতে হলেও আমরা টাংগাইল ধর্ষন ঘটনার প্রতিবাদে মিডিয়াকে পাশে পেয়েছি। মেয়েটিকে নিয়ে সবাই কনসার্ন জানাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও মিন মিন করে হলেও কথা বলছে। এটা মন্দ নয়ভোরতে আমানত ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো্র ঐক্যের উথ্থান দেখেছি। সবমত সেখানে ধর্ষণ রুখতে একমত হয়েছে। সেই হাওয়া কিছুটা হলেও বাংলাদেশেও দেখছি। এটা শুভলক্ষণ। অথচ আফগানিস্তান-পাকিস্তানের অবস্থা দেখুন। সেখানে রাষ্ট্র সমাজ সমাজপতি সবই যেন নারীর প্রতিকূলে। আর তাই মালালা আজ আলোচিত মালালা হয়েছে আমেরিকার সহায়তায়। সে চিকিৎসা পেয়েছে আমেরিকার সমর্থনে। এটা না হলে তালেবানরা হয়ত ওকে মেরেই ফেলত। আর আফগানিস্তানের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। ওখানে নারীর জন্মই যেন আজন্ম পাপ।

এবার মাদারীপুরের নির্যাতিত কিশোরীর কথা না বললেই নয়। তার দোষ সে মাত্র ২ বছর বয়েসে বিয়ে করতে চায় নি। মিডিয়ায় খবরটি এসেছে। মেয়েটির বিয়ে রোখা গেছে। খবরে পড়লাম_

বালিকাবধূ শৃঙ্খলমুক্ত

জোর করে বিয়ে দেওয়ার পর স্বামীর সঙ্গে সে বসবাস করতে রাজি না হওয়ায় মাদারীপুরে কুলসুম (১১) নামের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে শিকলে বেঁধে রেখে তিন দিন ধরে নির্যাতন চালিয়েছেন মা, মামা, বড় ভাই ও বোন। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের কালীবাড়ি এলাকায়। বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার স্থানীয় সাংবাদিক ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। এ সময় কুলসুমের ভাই বাধা দিলে বিষয়টি পুলিশসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঝুমুর বালা পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে কুলসুমকে উদ্ধার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বড় বোন ফাতেমা, মামা আলী আজগর এবং কুলসুমের কথিত স্বামী রেজাউল করিমকে আটক করেন। তাদের প্রত্যেককে এক মাসের কারাদ ও ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদ াদেশ দেওয়া হয়। কুলসুমের মা অভিযুক্ত ফিরোজা বেগম ও বড় ভাই সোহাগ পলাতক। কুলসুম মাদারীপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকার রহমান খানের মেয়ে এবং শহরের উকিলপাড়া রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী।

নির্যাতিত কুলসুম জানায়, ২২ ডিসেম্বর তার মায়ের কথামতো বড় ভাই সোহাগ কালকিনির গোপালপুরের আজিজ শিকদারের ছেলে মাদারীপুর পাবলিক লাইব্রেরি এলাকার মোটরসাইকেলের দোকানের মেকানিক রেজাউল করিমের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেন। সে (কুলসুম) বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এবং কথিত স্বামীর সঙ্গে না থাকায় তিনদিন আগে তার মা ফিরোজা বেগম, মামা আলী আজগর, বড় ভাই সোহাগ ও বড় বোন ফাতেমা তাকে পায়ে শিকল বেঁধে ঘরের খুঁটির সঙ্গে তালা লাগিয়ে রাখেন। গত মঙ্গলবার কুলসুমের কথিত স্বামী তার সঙ্গে আবার থাকার চেষ্টা করলে কুলসুমের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে সে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় কুলসুমের ভাই ও বোন তাকে বেদম মারধর করে আহত করেন। ভাই-বোনের এলোপাতাড়ি মারধরে কুলসুমের মাথা ফাটে এবং হাত কেটে যায়। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় এনে আবারও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। কুলসুমকে আদালতের মাধ্যমে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

এমন নির্যাতন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলছে। শিশুনারীর বিয়ে ছেলে খেলা চলছে। আফগানিস্তনে এটা ডালভাত। ১০ বছরের শিশুনারীর বিয়ে হচ্ছে ২৩/২৪ এমনকি ২৮/৩০ বছর বয়সী পুরুষের সঙ্গে। কি ভয়ংকর অবস্থা। আমাদের অবস্থা অতটা শোচনীয় না হলেও অপ্রাপ্তবয়স্কার বিয়ে হচ্ছে গ্রামে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঢাকায় বস্তিতে ও শহরে নিম্নবিত্তের মধ্যেও হচ্ছে। এব্যাপারে কোন দেখভাল নেই। মনিটরিং নেই। মাদারিপুরের ঘটনা তারই সাক্ষ্য। এই খবরটি মিডিয়ায় এসেছে বলে সমাজ ও প্রশাসন সেখানে এগিয়ে গেছে। অন্তরালে আরও ঘটনা ঘটছে। এসব প্রতিরোধ করা দরকার।অপ্রাপ্ত বয়েসে গর্ভধারণ খুবই রিস্কি ব্যাপার। ব্যাপক মাতৃমৃত্যুর এটাই একসময় প্রধান কারণ ছিল। মা হওয়ার ভাল সময় হল ২২ থেকে ২৮ বছর বয়স। এর নীচেও ঝুকি।উপরেও ঝুকি। বিশেষ করে ২২ বছরের নীচে- আরও পরিষ্কারর করে বললে ১৯ এর নীচে সন্তানধারণ একটি মেয়ের মানসিক শারীরিক স্বাস্থের জন্য অতি পিদজনক। এসব চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা আমল না করে কোন উপায় নেই। মা হতে শুধু শারীরিক সক্ষমতাই নয়। মানসিক সক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই।

নারীকে নিয়ে নানা তামাশা

নারীকে নিয়ে নানা তামাশা করে অনুন্নত দেশ ও অন্ধকারেরজীবেরা। নীচের খবরটি পড়লে তার ধারনা পাব। খবরটি ইনটারনেট থেকে নেয়া।

হবু রাজার আইন!
মিনিস্কার্ট পরা যাবে না, তবে…
শিরোনামে খবরে বলা হচ্ছে-

"সময়টা এখন নারী জাগরণের। বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত প্রায় সব দেশেই নারীরা দিন দিন অধিকার সচেতন হয়ে উঠছেন— খুব দ্রুত না হলেও অধিকার প্রসঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে তাদের ফারাকটা দ্রুত কমে আসছে। তবে আফ্রিকার রাজতান্ত্রিক দেশ সোয়াজিল্যান্ডে যে নয়া আইনটির প্রয়োগ চলছে তা মানবাধিকারকর্মীদের দৃষ্টিতে নারীদের জন্য অবমাননাকর।

ঔপনিবেশিক ওই আইনে সোয়াজিল্যান্ডের নারীরা মিনিস্কার্ট এবং যৌন আবেদন সৃষ্টিকারী (সেক্স্যুয়াল ক্লোদিং) পোশাক পরতে পারবে না। আইনটি সম্পর্কে দেশটির পুলিশ কর্মকর্তাদের মন্তব্য হচ্ছে, এ ধরনের পোশাক পুরুষদেরকে ধর্ষণে উৎসাহিত করে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আফ্রিকার ক্ষুদ্র ওই রাষ্ট্রটির নারী টিনএজারদের দুই তৃতীয়াংশই ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

আফ্রিকার সর্বশেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের এই দেশটিতে এখন ১৮৮৯ সালের ‌ঔপনিবেশিক যুগের বাতিল হয়ে যাওয়া আইনের আদলে জারি করা মিনিস্কার্ট বিরোধী ওই আইনের মূল তত্ত্বটি হচ্ছে— নারীরা শরীর প্রদর্শিত হয় এমন পোশাক পরতে পারবে না। ওই আইন মোতাবেক নারীদেরকে মাটিতে কোনো কিছু পড়ে গেলে তা ঝুঁকে তোলার ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

রাজার চালু করা ওই আইনের সমর্থনে বলতে গিয়ে সোয়াজিল্যান্ড পুলিশের নারী মুখপাত্র ওয়েন্ডি হলেটা জানান, নারীদের জন্য এটা খুব সুশীল একটি আচরণ হয় যদি তারা পড়ে যাওয়া জিনিস তুলতে গিয়ে মাথা না ঝুঁকিয়ে পিঠ সোজা রেখে বসে তারপর তা তোলেন।

তিনি আরও বলেন, নারীদের ক্ষুদ্র পোশাক ধর্ষকদের কাজকে সহজ করে দেয়। মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমরা এ ধরনের কাজকে উৎসাহিত করি না। কিন্তু একইভাবে লোকজনকেও সভ্যভব্য আচরণের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে।

'উত্তেজক' পেশাক সংক্রান্ত এ আইন ভঙ্গকারীদের ৬ মাসের জেলদণ্ড দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত মাসে দেশটির দ্বিতীয় প্রধান শহর মানজিনিতে নারী অধিকারের দাবিতে আয়োজিত তরুণীদের এক সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়। কারণ, বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মিনিস্কার্ট পরে ছিলেন।

তবে অতি রক্ষণশীল সোয়াজিল্যান্ডের এই কঠিন আইন একটি ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর তা হচ্ছে দেশটির রাজা এমসোয়াতি-৩ বা অভিজাতদের সামনে বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে 'ইন্ডমালু' পোশাক পরা টপলেস উর্বশী তরুণীদের সমবেত নৃত্য এ আইনের আওতামুক্ত থাকবে। ইন্ডমালু পোশাক বলতে বোঝায় কোমড়ের সামনের দিকে জড়ানো পুঁতির নকশা করা ক্ষুদ্র একটি বেল্ট। এই পোশাক (!) পড়া নারীদের গায়ে এই বেল্টের বাইরে বড়জোর দু'একটি রুমাল সদৃশ রঙ-বেরঙ কাপড়ের টুকরো হাতে, গলায় বা কোমড়ের একপাশে ঝোলানো থাকে। শরীরের ওপরের অংশ এবং পশ্চাদ্দেশ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখা ইন্ডমালু পোশাকের নাচ বেশ উপভোগ করে থাকেন চরম দারিদ্রপীড়িত দেশটির বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী রাজা, ১৩ জন স্ত্রীর স্বামী এমসোয়াতি। "

এমনসব তামাশা করে কোন লাভ নেই।আইন হবে সবার জন্য সমান। কোন ফরমান দিয়ে নারীর ওপর দোষ চাপিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। নারী এটা করতে পারবে না- ওটা করতে পারবে না এসব ফরমান দিয়ে ঝামেলা মিটবে না। বরং বাড়বে। তাই দরকার নারী পুরুষ উভয়ে মিলে সমাজ এগিয়ে নিতে হবে। নারীকে দেখলেই পুরুষ লালসায় ঝাঁপিয়ে পড়বে – সুতরাং তার ঘরবন্দী থাকতে হবে। কিংবা তাকে জোব্বা-বস্তা পরে বেরুতে হবে এসব ঘৃন্য বক্তব্য। পুরুষের পশুত্বকে রুখতে হবে। সে সবসময় নারীর দিকে ; নারীর পোষাকের দিকে নষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকবে- সেটা কেমন কথা। শালীন পোষাকের কথা কেউ কেউ বলছেন। শালীন পোষাক সবারই পরা উচিৎ্। নারীও পুরুষ উভয়েরই। তবে পোষাক ও জোব্বা জুব্বাকে যারা একমাত্র কারণ বলছেন তারা মধ্যযুগে বাস করছেন। সমকালে থাকতে হবে। নারী পুরুষকে ধর্ষন করছে না। ধর্ষণ করছে পুরুষ। সুতরাং সবার আগে ধর্ষকের কঠিন শাস্তি দরকার। সেজন্য কঠিন আইন দরকার। আমি শালীন পোশাকের বিরুদ্ধে নই। শালিনতা ভদ্রতা রক্ষা খুবই চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু কোন নারীর পোষাক পুরুষ-ধর্ষকদের পছন্দের না হলেই তাকে ধর্ষন করা জায়েজ হবে-তাকে লাঞ্ছনা করা জায়েজ হবে তাকে তালেবানরা হত্যা করতে পারবে এটা চরম ঘৃণ্য যুক্তি।