ধর্ষণের বিভৎসতার নেপথ্য কারণ: ঢাকা থেকে দিল্লি

ডাক্তার সুলতানা আলগিন
Published : 8 Jan 2013, 05:49 PM
Updated : 8 Jan 2013, 05:49 PM

বিডি নিউজ ব্লগে টুকটাক লিখে এমন সাড়া পাব ভাবিই নি। আসলে আমি লিখতে জানি না। কিছু তেমন লিখিও না। ভেবেছিলাম মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করব। পরে দেখলাম মনের কথা গুছিয়ে লেখা কঠিন কাজ। তাই প্রতিদিন যে খবর পত্রিকায় ও ইনটারনেট অনলাইন পত্রিকায় আসে তা শেয়ার করে টুকটাক মন্তব্য করি। অতি নগন্য কাজ। আমার কোন কৃতিত্বই নেই। তারপরও সম্মানিত ব্লগার ও ব্লগ পাঠকরা কেউ কেউ তা পড়ছেন তাতে আমি বিস্মিত। দিল্লি ধর্ষন নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম একটা সামাজিক ইতিবাচক অঅলোচনা গড়ে উঠছে। আমেকিার নিউ ইয়র্ক থেকে একজন বিশিষ্ট নারী লেনা বেগ বা লেনা বেগম চ্যাটিং-এ জানালেন তিনি আমার ব্লগ পড়েন। নিয়মিত তার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন শুনে খুবই অবাক হয়েছি। লেনা জানালেন তিনি একজন নারী একীটভিস্ট। বললেন ঢাকার আলোচিত এক ধর্ষকামী( লেনার ভাষায়)কে নিয়ে লিখতে। ওই ছেলেটির দুষ্কর্ম নিয়ে ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকার খবর লিঙ্কও আমাকে দিলেন। লেনার খবর পড়ে দেখি সত্যি এত ভয়ংকর কান্ড। ধর্ষন নিয়ে আর লিখব ইচ্ছাই ছিল না।আমার পরিচিত অনেকে বিরক্তি প্রকাশও করেছে। বলছে – আর কোন বিষয় পান না। কিন্তু লেনা বললেন আরও লিখতে। বললেন বেশী লিখলে টনক নড়বে। তার মতে এসব নিয়ে নিয়মিত লিখে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। তিনি বললেন ডাকতার বলে আমি দুরে সরে থাকতে পারি না। তার কথার যুক্তি আমি উড়িয়ে দিতে পারি না।

এবার আসুন লেনার দেয়া লিঙ্কটা পড়ি। সত্যি দুবৃত্তর কত চেহারা। এটা না পড়লে আমি ধারনা করতে পারতাম না।

এভাবেই ওরা হয়ে ওঠে ধর্ষক !

ঢাকার অনলাইন কাগজের খবর নিম্ন রুপ:
নারীদের হেয় করার প্রায় সব কৌশলই জানা সৃজন আহমেদের। এমন-ই সৃজনশীল করিৎকর্মা এই যুবক। এই পুলিশপুত্র বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় অশ্লীল বাক্য ছুঁড়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায়ও বেশ কয়েকবার 'সেরা' হয়েছে। নোংরামির সঙ্গে মেকি প্রেম নিবেদনেও পিছিয়ে নেই। ইংরেজিমাধ্যমে পড়ুয়া এই তরুণের আলোচিত সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ইতোমধ্যে দেখেছেন। কিন্তু এতদিন তার হদিস করা যায়নি। সম্প্রতি বের হয়ে আসে তার পরিচয় ও চাঞ্চল্যকর জীবনযাপন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, 'মানসিক সমস্যার কারণেই সৃজনের মতো যুবকেরা বিপথগামী হচ্ছে। অনেকেই এমন অপরাধ করেও নিজেকে 'বীরপুরুষ' ভাবে। অপরাধীর বন্ধুরাও অনেক ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় উৎসাহ দেয়। বখে যাওয়া এই যুবকেরা পরবর্তীতে ধর্ষণের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের অক্টোবরে সিরাজগঞ্জের একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে তার এক মেয়ে সহপাঠীকে হাতে ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করতে যায় সৃজন। মেয়েটি যখন সৃজনের উপহার দেওয়া ফুলটি নিতে হাত বাড়ায় তখনই সে সজোরে চড় মারে তাকে। এতে হতভম্ভ হয়ে যায় মেয়েটি। ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অপার বিস্ময়ে শুধু চেয়ে থাকে সৃজনের দিকে। এই সেই ভিডিও..

ঘটনাটি সেখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু সম্প্রতি ওই ভিডিও ফেসবুক-ইউটিউবসহ অনলাইন মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দেয় সৃজনেরই এক বন্ধু মাসুদ রানা। ভিডিওটির সঙ্গে আক্রমণাত্মক বার্তাও জুড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপরই শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। ওই যুবকের প্রতি অসংখ্য মানুষ তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে কমেন্ট করতে থাকে। অসংখ্যবার শেয়ার হয় ভিডিওটি। সবাই ওই অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৃজনের বাড়ি পাবনায়। বাবা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বগুড়ার ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এ ব্যাপারে পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তার ছেলের ওই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি কথা বলতে চাননি। যখন বলা হয় সেই ভিডিওটি পরিবর্তন ডট কমের কাছে আছে তখন তিনি মুখ খোলেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, "সে (সৃজন) এখন পড়ালেখা করে না।'' এক পর্যায়ে তিনি আবার বলেন, ''সৃজন এখন কোথায় আছে তাও আমি জানি না।" এর বেশি আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। কথা বলার এ পর্যায়ে ওসি আজাদ ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সৃজনের বন্ধুদের একজন শিবলী শিপু। শিপুই ওই ভিডিওটি ধারণ করেছিল। ঘটনার সময় শিপু ছাড়াও আরো অনেক সহপাঠী সেখানে উপস্থিত ছিল। আগে থেকেই সৃজন ঠিক করে রেখেছিল যে সে এভাবে মেয়েটিকে প্রত্যাখ্যান করবে। শিপু ওই ঘটনা প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। এই অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগও নেয় তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর দপ্তর ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে ই-মেইলের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপটি পাঠানো হয়। সৃজনকেও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। অনলাইনের সুপরিচিত ব্লগার সুশান্ত দাশ গুপ্ত এই উদ্যোগে জোরালো ভূমিকা রাখেন। সুশান্ত দাশ পরিবর্তন ডট কমকে বলেন, রামুর ঘটনাসহ ২০১২ সালে বেশ কয়েকটি সাইবার ক্রাইম ঘটে। এরমধ্যে সৃজনের ঘটনাটি অন্যতম। কিন্তু শুরুতে বড় এই ঘটনাটি গণমাধ্যমের নজরে আসেনি। তিনি জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

লেনা জানালেন তিনি এ নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন সৃজনকে নিয়ে। লিখেছেন_
সৃজন আহমেদ নামের এই শুয়ারের বাচ্চাকে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যায়-চড় দিন। লাথ্থি দিন। পুলিশে দিন। পায়ে পায়ে পদদলন করুন। পেটাতে পেটাতে থানায় নয়; র্যাবের হাতে তুলে দিন। র্যাব ছাড়া অন্য কারও হাতে দেবেন না।
লেনার রাগকে অমর্যাদা করা যায় না। সত্যিই এই বখে যাওয়া ছেলেটিকে প্রথমে আইনের কবজায় নেয়া উচিত। তারপর তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে চিকিৎসা হতে পারে।সমাজে এরা এধরণের কাজ করার সাহস ও আশকারা কেমন করে পায় সেটি বড় গবেষনার বিষয় হতে পারে। এবার আসুন দিল্লির ধষনকান্ডের শিকার দামিনী-ছদ্মনাম-দামিনীর বন্ধুর বকতব্য শুনি। সে কেন দামিনীর পাশে দাড়িয়েও পশুদের রুখতে পারে নি সেই কথা।

'আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি তাকে'

'নৃশংস সে ঘটনার পর দুষ্কৃতকারীরা আমাদের রাস্তায় ফেলে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকলেও প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বা পথচারী কেউই সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। বারবার সাহায্যের আবেদন করেছি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।

এমনকি পিসিআর ভ্যানেও রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুকে তোলার সময়ও এগিয়ে আসেনি পুলিশ। একটাই দুঃখ। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি বন্ধুকে-এভাবেই ভেজা কণ্ঠে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে টিভি পর্দার সামনে মুখ খুললেন দামিনীর সাথে থাকা তরুণ বন্ধুটি।

১৬ ডিসেম্বর নয়দিল্লীতে নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার পর দেশ জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী ২৩ বছরের দামিনীকে নির্মমভাবে নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেন দেশবাসী। এত কিছুর পরেও আড়ালে ছিলেন ঘটনার দিন দামিনীর সঙ্গে থাকা একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তরুণ বন্ধুটি। কিন্তু দামিনী চলে যাওয়ায় নিজেকে আর আড়ালে রাখতে পারলেন না তিনি। মৌনতা ভেঙে ক্যামেরার পর্দার সামনে বর্ণনা দিলেন সে দিনের সেই ঘটনার। জানালেন, সেদিনের দুঃস্বপ্নের বাসযাত্রার কথা। যেখানে বেরিয়ে এলো না জানা আরও অনেক কথা।

শুক্রবার প্রথমবারের মতো দামিনীর তরুণ বন্ধুটি জি নিউজের ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকার দেন। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে দুস্কৃতকারীদের হাতে সেদিন বেধড়ক মার খেয়েছিলেন তিনিও। তিনি বলেন, "'নিপীড়করা একটি লোহার রড দিয়ে মারতে থাকলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর দু'জনকেই বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা। রাস্তায় পড়ে থাকার সময় সাহায্যের জন্য পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীদের অনুরোধ করি। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। প্রাণপণ চিৎকার করলেও পাশ দিয়ে যাওয়া অটো, প্রাইভেট কার থামেনি। ৪৫ মিনিটেরও বেশি সময় রাস্তায় পড়েছিলাম।'"

তিনি আরও বলেন, "ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও আমাদের কোথায় নেয়া হবে তা নিয়ে চলে পুলিশের মধ্যে বিতর্ক। এতে দীর্ঘ সময় পার করেন তারা। কিছু কাপড় দেওয়ার জন্যে চিৎকার করলেও পুলিশ ব্যস্ত থাকে ঘটনার বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা নিয়ে। এতে আরো দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়'।"

সেদিন পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কথা প্রকাশ করেই তরুণ বন্ধুটি বলেন, "আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন দরকার। এর পাশাপাশি প্রয়োজন আইনি এবং পুলিশের আচরণের পরিবর্তনও। সেদিন পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা না হলে আজ হয়তবা দামিনীকে এভাবে চলে যেতে হতো না।"

তিনি বন্ধুর মৃত্যুর জন্যে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি জানান, দোষীদের শাস্তির জন্য তিনি লড়বেন।

এ ঘটনায় প্রতিবাদী ভারতবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "'প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে তা যেন থেমে না যায়। সেটাই হবে মৃত তরুণীর প্রতি একমাত্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।"

মেয়েটির এই বন্ধুর বক্তব্যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে সে বিষয়ে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত জানান, পুলিশের জিপিএস রেকর্ড অনুযায়ী খবর পাওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। আর ২৪ মিনিটের মধ্যে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।

দিল্লির এই গণধর্ষণ শুধু দেশবাসীই নয়, স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু পাশবিক অত্যাচারের যন্ত্রণা ২৩ বছরের দামিনীর মনোবল ভাঙতে পারেনি। হাসপাতালের বেডে শুয়েই বয়ান দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট পরে লিখিতভাবে জানান, চাপের মুখে বয়ান দিয়েছেন দামিনী। এ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। ঘটনার পর টিভির পর্দায় মুখ খুলে এ বিষয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তরুণীর বন্ধুটি।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শনিবার দিল্লির একটি আদালতে অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।