বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নিয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা প্রসঙ্গে

আল রশিদ
Published : 20 July 2014, 05:56 PM
Updated : 20 July 2014, 05:56 PM

"আমরা যারা স্বার্থপর" নামে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার যে লেখাটি লিখেছেন সেই সংজ্ঞামতে আমিও স্বার্থপরের কাতারে পড়েছি । তবে এটা ব্যক্তি মুহম্মদ জাফর ইকবালের নিজস্ব মতামত । স্যার  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দৈন্যদশার করুন চিত্রটি সুনিপুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । এজন্য স্যারকে অনেক ধ্যন্যবাদ জানাচ্ছি । একইসাথে স্যারের সাথে আমি কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছি ।

স্যার যে কারনে আমাদের স্বার্থপর বলেছেন তা আমি ব্যাক্তিগতভাবে মেনে নিতে পারছি না একারনে যে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে দাবি তুলেছে। প্রাথামিক শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত হলে দেশ ও জাতির উন্নতি হবে একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব প্রাথামিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সর্বোপরি সরকারের উপরে বর্তায় । এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পরামর্শ দিতে পারেন ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যদি জাতির মেধাবী সন্তান হয় তবে তারা কেন অন্যদের থেকে আলাদাভাবে বেতন-ভাতা পাবেন না? তাদের সতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবি যৌক্তিক যাহা অনেক আগেই জানানো উচিত ছিল । আমলারা মানবেন কি মানবেন না সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার। তাই বলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

তিনি এমনকিছু আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন যা অপ্রাসঙ্গিক এবং বাতুলতা বৈ কিছু নয় । একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক যে বেতন পান তা নাকি একজন গাড়ির চালকের থেকেও কম । কথা সত্য । এখন আপনি বলুন এই অবস্থায় একজন প্রভাষক কিভাবে আত্মসম্মানের সাথে ক্যারিয়ার শুরু করবেন ? আবার আমাদের সমাজ এমনি যেখানে অল্প পয়সাওয়ালাদের পাত্র হিসেবে দামে ভাটা পড়েছে। এমতাবস্থায় একজন প্রভাষক কি সুপাত্রীর আশা বাদ দিবেন?

স্যার আপনি বিভিন্ন পারিতোষিকের নিয়ে কথা বলেছেন । আপনি এখন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি হারে বেতন (যাই হোক না কেন) উত্তোলন করছেন । ফলে আপনাকে আমাদের মত এত যক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। আর যেসকল শিক্ষকেরা পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করেছেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন তাদের তুলনায় সাধারন একজন প্রভাষকের জীবন-মান খুবই নিম্ন যা এই আধুনিক যুগে কল্পনা করা যায় না । সেই ক্ষেত্রে হয়তবা আপনার/ আপনাদের পারিতোষিকের দরকার নাও থাকতে পারে কিন্তু আমাদের দরকার আছে । এটুকুও যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে আমরা কি করব? আমাদের সন্তানেরা কি ভাল স্কুলে পড়তে পারবে না? আমাদের পরিবারকে কি আমরা একটু সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারব না?

আমাদের হাত আবার বাধা। আমরা একজন বেসরকারি কলেজের প্রভাষক থেকে সামান্য কিছু বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। তাছাড়া তাহারা কোচিং সেন্টারে ( যদিও আমি এই কোচিং সেন্টার পদ্ধতির ঘোর বিরোধী) পড়িয়ে অনেক বেশি আয় রোজগার করে থাকেন। আমরা কোথায় যাব? আমরা কি আমাদের ন্যায্য দাবিগুলোও আদায়ের জন্য একত্রে কাজ করতে পারি না?

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বয়সসীমা ৬৭ করার যে দাবি উঠেছে তার সাথে আমি স্যারের যুক্তির সমর্থন করছি । একজন শিক্ষক যদি তার গবেষণা কর্ম, শিক্ষকতার সুনাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য উপযোগী হন সেক্ষেত্রে আজীবন শিক্ষক হিসবে যেকেউ থাকতে পারেন । কিন্তু দলীয় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কেউ যদি উক্ত দাবি করে থাকেন তা হলে সেটা বিবেচনার বিষয় হতে পারে না ।