আমার বন্ধু বেলাল

আল রশিদ
Published : 3 May 2012, 04:09 PM
Updated : 3 May 2012, 04:09 PM

কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যা মানুষ সারাজীবন বয়ে বেড়ায় । জীবন চলার বাঁকে বাঁকে স্মৃতিগুলো এসে ভিড় জমায় । এগুলোই মধুর অথবা বেদনার সাক্ষী হয়ে যায় । আমার কিছু স্মৃতি আছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী "বেলাল" কে ঘিরে । আমার অতিবাহিত জীবনে বেলাল এর মত মানবিক গুণসম্পন্ন চরিত্র দেখিনি বললেই চলে । মানুষ যে কত উদার হতে পারে ওকে না দেখলে হয়ত বুঝতামই না । মানুষ যখন স্রষ্টার সাথে যোগাযোগ অথবা স্রষ্টার প্রতি গভীর অনুরাগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় তখন পার্থিব বস্তু তার কাছে তুচ্ছ মনে হয় । তখন সে স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করতে চেষ্টা করে । আমার কাছে বেলাল মনে হয়েছে এমনই একজন । কখনো হতাশ হতে দেখেনি । অনেক গুছানো স্বভাবের ।ঢাকায় বড় হয়ে ওঠা । কিন্তু এই বস্তুগত পৃথিবী তাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনি । সে ছিল সব কিছুর উর্ধ্বে । জীবনের মোহ তাকে গ্রাস করতে পারেনি । আমরা মাঝে মাঝে মজা করতাম বেলালকে নিয়ে । সৃষ্টিকর্তা ওকে কোথায় স্থান দিবে এই দেশে যেখানে ভাল মানুষের কদাচিৎ দেখা মিলে । তাই আল্লাহ তায়ালা বড় তাড়াতাড়ি ওকে উঠিয়ে নিলেন । পরিবারের বড় ছেলে সংসারের হাল ধরবে মা-বাবা এই আশায় ছিলেন । সড়ক দূর্ঘটনা কাল হয়ে দাঁড়াল, কেড়ে নিল তাজা প্রাণ । এভাবেই হারিয়ে যায় অনেক মেধাবী ছাত্র । দেশকে কিছু দেওয়ার আগেই চলে গেল পরপারে । আমরাও ভুলে যাচ্ছি সময়ের স্রোতে । যে মা-বাবা দিনরাত চোখে চোখে রেখে বড় করেছিল তারা তো ভুলতে পারবে না । প্রতিদিন এভাবেই মারা যাচ্ছে নাম না জানা অগণিত মানুষ । নামকরা কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে সবাই সমবেদনা জানাই । তারপর যে লাউ সে কদু ।

দেশে অনেক ভাল চালক আছে যারা সতর্কতার সাথে গাড়ি চালান । এদের সংখ্যা হাতেগোনা । বাকীরা যেনতেন ভাবে গাড়ি চালানোর নিবন্ধন নেয় । মানুষ কতটা অবিবেচক হলে এই কাজ করতে পারে । যারা চালক তাদেরও তো পরিবার আছে । তারপরও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালান। ওভারটেক করার প্রবণতা কমে না । যেন জীবন নিয়ে মৃত্যু খেলা । জানি না কবে এই খেলা শেষ হবে । আমাদের রাস্তাগুলো অনেক জায়গায় খুব বেশি প্রশস্ত নয় । সড়ক দূর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ । দেশের প্রচলিত আইনও তেমন জোড়ালো নয় । ফলে সহজেই পার পেয়ে যায় দূর্ঘটনা কবলিত চালক । দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত । যদি জরিমানা করা হয় সেটা টাকার অংকে অনেক অনেক বেশি হওয়া উচিত যাতে কেউ দ্বিতীয়বার দূর্ঘটনা করার সাহস না পায়। আমাদেরও সচেতন হতে হবে । সামাজিক আন্দোলন বাড়াতে হবে ।