সোহেল তাজের আত্মসম্মান বোধের জাগরণ এবং…

এ আর খান
Published : 24 April 2012, 12:25 PM
Updated : 24 April 2012, 12:25 PM

সোহেল তাজ, তাজউদ্দীন আহমেদ এর সুযোগ্য পুত্র, আমার এই বিষয়ে কোন সন্দেহই আর নেই। একটা সময় সন্দেহ ছিল, তার কারণ আছে। কোন এক মনীষী মন্তব্য করেছিলেন- বেশিরভাগ সন্তান হয় তার পিতার চেয়ে নিকৃষ্ট, অল্প কিছু হয় তার চেয়ে ভালো আর বাকিগুলো হয় জঘন্য। অর্থাৎ, এই অল্প কয়টাকে বাদ দিলে আলেমের ঘরে যালেম হওয়ার সম্ভাবনাটাই প্রবল। আর আশেপাশেও এরকম উদাহরণ কম দেখছি না (এর মধ্যে আমি নিজেও কিন্তু আছি!)। তবে কি? আমরা এত ছোট, এত ছোট, যে আমাদের ভালো খারাপ খোজাটা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু না। আমরা দেখব তাদের যাদের আমরা আদর্শ হিসেবে মানি, যাদের দেখলে আমরা টিভির পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারি না, যাদের জন্য আমরা রাজপথে নিয়মিত জীবনটাকে বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছি, এর পক্ষ নিয়ে ওকে মারতে গিযে নিজেও ঠ্যাং ভেঙে আসছি, নিজ চর্ম চক্ষু দিয়ে না দেখলে যে আমরা নিজেদের স্ত্রীদের কথা বিশ্বাস করি না সেই আমরা চোখ বন্ধ করে যাদের কথা ঠিকই বিশ্বাস করে ফেলি, অবশ্যই আমরা তাদের কাছ থেকে ১০০% না হোক, হালাল সাবানের মত অন্তত ৯৯.৯৯% চারিত্রিক শুদ্ধতা আশা করব। ১ নম্বর হওয়া অসম্ভব, অন্তত ২ নম্বর হলেও চলবে, কিন্তু ১৪ নম্বর যেন না হয় সেই আশা করব।

সোহেল সাহেব যে আশা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন, সেটা বিশাল ধাক্কা খেয়েছে, সেটা নিজেই স্বীকার করলেন। কিন্তু কাদের কারণে ধাক্কা খেল সেটা কিন্তু দেশ ও "দলের" স্বার্থে স্বীকার করেন নি। আবার, বলতে গিয়ে বিএনপি কেও ছাড়েন নি। যাক, বিএনপি উনার দল নয়, তাদের স্বার্থ দেখার উনার প্রয়োজন নেই। যে দলটা উনার রক্তের সাথে মিশে আছে এবং থাকবে সেই দলটার স্বার্থ দেখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশ ও দরের স্বার্থে সেসব প্রকাশ না করে দেশেরই যে ক্ষতি করলেন আপনি। এসব জানতে পারলে আপনার এবং আমেদের সবার উপকার হত। আপনার উপকার হত যে, আপনি তাহলে মানূষ চিনতেন আরো ভালোভাবে সত্য কথা স্বীকার করার সাথে সাথে আপনার পরাচিত মানুষ গুলো কিভাবে বদলে যেত দেখতে পেতেন, দেখতে পেতেন কিভাবে আপনাকেও এক ঝটকায় যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধ শক্তি বানিয়ে দেয়, যে রকমটা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকির বেলায় করা হয়েছিল। আর আমরা জানোয়ারগুলোকে আরো পরিষ্কার ভাবে চিনতে পারতাম এবং দরকারি ব্যাবস্থা নিতাম। কেন আপনি সব খুলে বললেন না?

আপনি পদের মায়া ও বেতন-ভাতা ছেড়ে আসল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন যে রাজনীতিবিদদের জন্য মন্ত্রীত্ব কোন বিষয় নয়, যেটা সুরঞ্জিত সাহেব আপনার চেয়ে অনেক প্রবীণ হয়েও প্রমাণ করতে পারেন নি। মন্ত্রীত্বের মায়া ছেড়ে থাকতে পেরেছেন মাত্র কয়েকটি ঘন্টা, তারপর নিজের মানসম্মান আরেকটু নামিয়ে নিয়ে প্রধাণ মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন অন্তত দপ্তর বিহীন মন্ত্রিত্ব প্রদান করার! একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের অপূর্ব উদাহরণ সৃষ্টির নমুনা!! তার আগে উনাকে দায় স্বীকার করাতেও কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি আমাদের। ইনি হলেন আমার সেই উপরে বর্ণিত আদর্শ ব্যক্তিত্বদের একজন। এরকম আরো আছে।

সোহেল তাজ সাহেব, আপনি যাদের নিয়ে পথ চলে আপনার স্বপ্নের দেশ গড়তে চেয়েছিলেন, তারা আপনার মত ত্যাগী নয়। এরা টিআর, কাবিখা, কাবিটা মেরে খাওয়া লোক। যাদের খোঁজ পেলে গণ্ডার নিজের গায়ের চামড়া বদলে নেওয়ার জন্য ছুটে আসবে। যে দলটা আপনার রক্তে মিশে আছে সেই দলটা একটা সময় পুরো জাতির রক্তে এমনিতেই মিশে ছিল। এখনকার মত মানুষকে মেরে কেটে রক্ত বের করে আওয়ামীলীগের নাম মেশাতে হত না।

সমস্যাটা হল, আপনার বাবা এবং বঙ্গবন্ধু যে আওয়ামীলীগ রেখে গিয়েছিলেন এটা এখন আর সেই দলটি নেই। কোন নেই সেটা ঐসব "আদর্শ" ব্যক্তিত্বদের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে বুঝবেন। এটা এমন এক দল যেখানে শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলামের ছেলেও নিজের অবস্থান ভুলে সস্তা রাজনৈতিক বুলি আওড়ায়, যে দলটির প্রধান তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজের ছেলেকে বিয়ে দেন এক রাজাকারের মেয়ের সাথে, এমন একজনকে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন যার বড় ভাই ছিল শান্তি বাহিনীর লিডার, সর্বোপরি এটি এমন একটি দল যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কাজে লাগিয়েছে নিজেদের গা বাঁচাতে এবং সেটা দলপতির আচল তলেই!! যে দলটির প্রতিষ্ঠাতার কন্যা নিজের পিতাকে নিয়ে ব্যাবসা করেন, নিজেই নিজের পিতাকে হাস্যকর বানিয়ে তোলেন, নিজের পিতার আদর্শ নিজেই ধরে রাখতে জানেন না, সেখানে আপনি একা ভালো হয়ে থাকবেন কি করে? যা করেছেন, খুব খুব ভালো করেছেন।

আমাদের মত তরুণ সমাজের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে। আমাদের কথা বাদই দিলাম, বঙ্গবন্ধু, ভাষাণি, জেনারেল ওসমানী এবং সর্বোপরি ৩০ লাখ শহীদের আত্মার সাথেই কি প্রতারণা করা হয় নি? এই দেশটা একদিন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের অভিশাপেই ধ্বংস হয়ে যাবে। সেটা যেন আমাদের দেখতে না হয়…………