এই বর্বরতার শেষ কোথায়?

মেহেদী হাসান আজাদ
Published : 11 Dec 2012, 06:06 PM
Updated : 11 Dec 2012, 06:06 PM

গতকাল রবিবার, ৯ ই ডিসেম্বর ২০১২ ছিল বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি'র ডাকা অবরোধ কর্মসূচী। হরতাল অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও এর আগেও অনেক দেখেছি আমি, শুধু আমি নই, সারা দেশবাসিই দেখেছে এবং সবারই গা সওয়া ব্যাপার হয়ে গেছে এগুলো যদিও আমরা শংকিত থাকি এই সব কর্মসূচীতে আমাদের পরিবার পরিজনদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ করে যাদেরকে জীবন ও জীবিকার জন্য বাইরে বেরুতে হয় প্রতিদিন। কিন্ত এবার অবরোধটা আমার মনটাকে খুব বেশী ভারাক্রান্ত করে দিল একটি দৃশ্যপট। কি বিভৎস, কি জঘন্য, কি নির্মম একটি মানব সন্তান যে হতে পারে তা দেখলাম আমরা টিভি পর্দায়। সেকি করুন দৃশ্য, একটি ছেলে প্রানভয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে আর তাকে বিষাক্ত হায়েনার মত পেছন থেকে আক্রমন করে যাচ্ছে কিছু নরপশু, কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসছেনা। আহ্ কি নির্মম! কেউ কি চাইলেই পারত না এই নিরীহ ছেলেটিকে বাঁচাতে? দেখছিলাম টিভি পর্দায়,পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে এক দর্জি দোকানী 'বিশ্বজিৎ' প্রানভয়ে দৌড়ে একটি মার্কেটের দোতলায় উঠে কোন একটা দোকানে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিল আর পেছন থেকে সন্ত্রাসীরা চাপাতি, লাঠি, রড নিয়ে তাকে ক্রমাগত মেরে যাচ্ছে এবং দেখলাম একটি ছেলে চাপাতি হাতে তাকে কুপিয়ে যাচ্ছে মাংস কাটার মত করে আর তার পরিহিত শার্টটি রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারলাম এই বীরের নাম রফিকুল ইসলাম শাকিল। ছেলেটি দৌড়ে নিচে নেমে আসতে পারলেও তাদের আক্রমন থেকে সে বাঁচতে পারেনি, অথচ সেই সময় ঘটনাস্থল থেকে খানিক দূরে (২০-২৫গজ) দাঁড়িয়েছিল পুলিশ বাহিনী যাদের কোন একজন চাইলে সহজেই তাকে বাঁচাতে পারত। কিন্ত তারা তা করলেন না। কেন জানিনা। আমরা টিভি পর্দায় দেখে আমাদের প্রান কেঁদে উঠছিল বারবার আর আফসোস করছিলাম আহ! যদি তার সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসত। প্রান বাঁচানোর জন্য কি কাকুতি করছিল সে । আহ! কি বর্বরতা ।

সুধী পাঠক্, একবার ভেবে দেখুন চোখ বন্ধ করে, ছেলেটির জায়গায় ভাবুন আপনার নিজেকে, ভাবুন নিরীহ এক মানবসন্তান আপনি, ভাবুন জীবিকার তাগিদে আপনাকে বেরুতে হল রাস্তায়, আর কপাল দোষে পড়ে গেলেন পিকেটার অথবা হরতালবিরোধীদের কবলে। তারপর হঠাৎই আচমকা আক্রমন। কি করবেন তখন? কোন উপায় কি আছে নিজেকে রক্ষার? অনবরত চাপাতির কোপ খেতে খেতে রক্তাক্ত হয়ে প্রান বাঁচানোর জন্য দৌঁড়ে যাচ্ছেন কিন্ত কেউ আসছেনা আপনাকে বাঁচাতে, কেমন লাগবে তথন?

আমি বলব, যারা এতটা নির্দয় হতে পারে, যারা একটি নিরীহ ছেলেকেও হিংস্র হায়েনার মত করে কুপিয়ে মেরেছে তারা যে দলেরই হোক্ তাদের ক্ষমা নেই। তাদেরকেও ধরে এনে একই কায়দায় রাস্তার উপর ফেলে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা উচিত তাহলেই তারা বুঝবে কতটা কষ্ট ছিল বিশ্বজিতের সেই সকরুন আর্তনাদের। কেন এবং কোত্থেকে সেই শাকিল এত সাহস পেল জনসম্মূখে প্রকাশ্যে একটি ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করার? তার সাথে তো কোন পূর্ব শত্রুতাও থাকার কথা নয় যে এতদিন পর হাতে পেয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মনের আয়েশ পুরন করল? আর তারপর, বিশ্বজিত এর মায়ের শান্তনা কি হবে? কে তার কাছে ফিরিয়ে দেবে তার অতিকষ্টে তিলতিল করে বড় করে তোলা বিশ্বজিৎকে যে ছিল সংসারের উপার্জনের পাত্র।

আমি বলব এই জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী আমদের দেশের অসহিষ্ণু রাজনীতি, হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি যেখানে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। আর এই নিষ্ঠুরতার নির্মম বলি হয় যত নিরীহ নির্দোষ প্রান। আমি বলব সেই সকল পুলিশ সদস্যদেরকেও এই হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত করতে হবে যারা নিকটে অবস্থান করলেও বিশ্বজিতকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। আর হত্যাকারীদেরকে রক্ষার তো কোন সুযোগই নেই। আমাদের সরকার কি পারবেনা এই বর্বরোচিত, নির্মম ও জঘন্য হত্যা কান্ডটি যারা ঘটিয়েছ তাদেরকে সমুচিত শাস্তি প্রদান করতে? যারা স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও যুদ্ধপরাধের বিচার করার মত সাহস দেখাতে পারছে, যারা দেশের গনতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে নিজেদেরকে দাবী করেন, যারা এদেশে গনতন্ত্র ও আইনের শাসন বাস্তবায়ন করার স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন জাতিকে অনবরত, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন সভায় ও সেমিনারে, যারা অসাম্প্রদায়িক শক্তি ও নির্যাতিত মানুষের বন্ধু হিসাবে নিজেদেরকে দাবি করেন তারা কি পারবেনা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডটির যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে? আমরা অপেক্ষায় রইলাম তা দেখার ।

(বিশ্বজিতকে নিয়ে)