ভন্ডপীরের রোষানলে আমাদের দেশের অজ্ঞ নারী ও কিশোরীরা: প্রতিরোধ করতে হবে

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 23 March 2011, 07:22 AM
Updated : 23 March 2011, 07:22 AM

মাঝে মধ্যে বিরক্ত প্রকাশ করতো। একদিন তার মাকে বলে যে, আমি তোমার পীর বাবার সেবা করতে পারবো না। মা বলল, এ কথা মুখ দিয়ে আর কোন দিন বের করো না। পীরকে সম্মান করলে এ জীবনে উপকৃত হতে পারবে অন্যদিকে আখিরাতেও নাজাত পাবে। একদিন সে তার বাবার সামনে ঘটনাটি খুলে বলে। বাবা পীরকে বাড়ি থেকে স্ব-সম্মানে বের করে দেয়। এরপর থেকে কোন দিন সে পরিবারে কোন পীর আসতে পারে নি। কিন্তু কোন শাস্তি দেওয়া হয় নি পীরকে লোক লজ্জার ভয়ে।

গত ২৬ জুলাই শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে থানা পুলিশ ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার গোপদিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ভন্ডপীরকে গ্রেফতার করে। এ সংবাদ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

ভন্ডপীর সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাকিবুল হাসান ওরয়ে রোকনের বাসায় আত্মীয়তার সুবাদে বেশ কিছু দিন যাবত অবস্থান করছিলো। সেখানে এক মহিলা দালালের মাধ্যমে বাসার পার্শ্ববর্তী গোল্ডেন হাইস্কুলের মেসের ছাত্রীদের পীরের তরিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করে। ওই ভন্ডপীর ছাত্রীদের বাইয়াত গ্রহণ করে কারো কাছে না বলার জন্য সতর্ক করে দেয়। পীরের কোন কথা বললে ক্ষতি হবে। এ সব কথা বলার পর ভন্ড পীর তার হাত পা টিপে দেওয়ার জন্য ছাত্রীদের বলে। এমনকি অসামাজিক কর্মকান্ডের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রীরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে স্কুল শিক্ষকদের জানায়। পরে শিক্ষকরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ভন্ড পীরকে গ্রেফতার করে কোর্টে পাঠায়।

এ ধরনের ঘটনা দেশে ঘটেই চলেছে। যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় না। অন্য দিকে গ্রামের মানুষ নিজেদের মান ইজ্জতের ভয়ে ঘটনাটি প্রকাশ করে না। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগেও গ্রাম গঞ্জের মানুষ কুসংস্কার থেকে বের হতে পারে নি। পীরের নাম শুনলে দল বেঁধে যায় পীরের নিকট চিকিৎসা ও আগাম ভবিষৎবাণীর জন্য। এতে ভন্ডপীর বাবা সুন্দরী নারী দেখলে নানা ভাবে যৌন হয়রানি করে থাকে। অনেক নারী ভয়ে তা বলতে পারে না। অথচ ওই ভন্ডপীরদের অধিকাংশ ধর্মীয় জ্ঞান সম্বন্ধে অজ্ঞ। নামায পড়ে না। রোজা রাখে না। শুধু গাঁজা খায়। গাণ গায়। তাবিজ কবজ বিক্রি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেই। ওরস শরীফ ও দরবার তৈরীর নামে অনেক টাকা কথিত ভক্তদের নিকট থেকে বিভিন্ন কায়দায় নিয়ে থাকে। বেশির ভাগই ঠকে নারীরা। তৃণমূল পর্যায়ের কতই না নারী কথিত পীরদের হাতে প্রতিদিন বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে।

আমরা কাজী ইমদাদুল হক রচিত 'আবদুল্লাহ' উপন্যাসে সে যুগের ভন্ডপীরদের বাস্তব চিত্র দেখতে পায়। এ যুগেও সে সময়ের চিত্র ফুটে ওঠছে। ভন্ডপীরেরা অনেক সময় বিভিন্ন নামে সমিতি ও সংস্থা গঠন করে ভক্তদের নিকট থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। ২৪ মার্চ ২০০৮ ইং তারিখে ঢাকা রিপোটার্স এসোশিয়সনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৩০ জন প্রতারণার শিকার নারী লালবাগের তথাকথিত পীর রেশমা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি জানান এনজিওর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে। (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ মার্চ ২০০৮ ইং)।

সাধারণ মানুষকে এ ভন্ডপীরের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা গণ নাটক ও ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে ভন্ডপীরের কুফল সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারে। মসজিদের ইমামগণও জুমআর নামাযের খুতবার সময় এ বিষয়ে বক্তব্য রাখতে পারে ন। আসুন আমরা সবাই এ বিষয়ে এক যোগে কাজ করি।