বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুবিধা বঞ্চিত এবং সমাজকল্যাণমূলক ভাবনা

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 9 May 2011, 06:15 AM
Updated : 9 May 2011, 06:15 AM

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তার অবদান স্পর্শ করেনি। সাহিত্যের পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া সমবায় আন্দোলন, কৃষির উন্নয়ন, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণ এ তিনটি বিশ্বজনীন বোধের ওপর তার সৃজনশীল কর্ম প্রতিষ্ঠিত। রবীন্দ্রনাথের অজস্র কবিতা, গান, ছোট গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, পত্র সাহিত্য, অনুবাদ ও ভাষা সাহিত্য সহ সর্বক্ষেত্রে অবদান রেখে আমাদের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯১৩ সালের 'গীতাঞ্জলি' প্রকাশের জন্য নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করে।

তিনি মানবতার কবি, প্রকৃতির কবি। রচনা সমূহ মানব প্রেম, সমাজকর্ম, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি, যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে। 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে' গানটি সাধারণ মানুষকে মহৎ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, জীবনকে করে তুলে আন্দোলিত।

ছোট গল্পের মধ্যে ফুটে ওঠেছে বাংলার গরিব-দুঃখী, শ্রমিক, সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সুখ-দুখের কাহিনী। 'সুভা' নামের ছোট গল্পে বাক প্রতিবন্ধী তরুণী 'সুভাষিনী'র প্রেম বিরহের কথা ফুটে ওঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই যুগে উপলব্ধি করেছিলেন যে, সুভাষিনীর মতো নারীদের রয়েছে প্রেম করার অধিকার, ঘর বাধার স্বপ্নও রয়েছে তাদের। কিন্তু সে যুগের মানুষেরা সুভাষিনীর মতো বাক প্রতিবন্ধী নারীদের সমাজের বোঝা মনে করে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতো। যা আমাদের আজও ভাবতে শেখায়।

আমাদের সমগ্র জাতিকে দেশপ্রেমের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য তিনি বলেছেন,
'সার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে।
সার্থক জনম মা গো তোমায় ভালোবেসে।'

দেশকে ভালোবেসে মানুষ বিশ্বকে ভালবাসতে পারে। ভালো বাসতে পারে বিশ্বের আঠার হাজার মাখলুকাতকে। যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায় আমরা দেখতে পায়।
'ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা।'

তিনি শুধু আমাদের জাতীয় সংগীত ' আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি' এর রচিয়তায় নন। ভারত এবং শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতের রচিয়তা। এ ধরনের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা যুগে যুগে কমই এসেছে। যারা দেশের মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছে। যারা দেখিয়েছে সুবিধা বঞ্চিত , নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পথ। অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানানোর ভাষাও আমাদের শিখিয়েছে।