ভারতের কারাগারে ৫০ বন্দির স্বজনদের আহাজারি- ছাড়িয়ে আনতে আবেদন

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 9 June 2015, 07:10 PM
Updated : 9 June 2015, 07:10 PM

ভাংরির ব্যবসা করার জন্য অবৈধভাবে ভারতের মনিপুরে যাওয়ার কয়েক মাস পর জানতে পারি ভারতের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আমার স্বামী জেলখানায় আছে। তখন থেকে অদ্যাবধি আমার ৪ জন ছেলে মেয়েসহ ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে গরীব পিতা-মাতা যা কিছু দেয় তা দিয়েই কোন রকমে দিনাতিপাত করছি। শুধু তাই নয়, মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত স্বামীকে ছাড়িয়ে আনতে যখন যা লাগছে তাই খরচ করে যাচ্ছি। কিন্তু আজও আমার স্বামীকে পেলাম না। জানিনা আর কখনো পাবো কি-না?   কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা গুলো বললেন, চাঁপাইনববাগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া ৬ ঘরিয়া গ্রামের ভারতে বন্দী শরিফুলের স্ত্রী মোসাঃ পপিয়ারা বেগম ।

গত শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে এ সিটিজেন সাংবাদিকের সাথে কথা হয় পপির ।   তিনি আরো জানান একই এলাকার নাজির, মফিজুল, বাবলু,রহিম,শহিদুল, রফিকুল ও শরিফুল সহ মোট ৭ জনের প থেকে বহু কষ্টে ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে এলাকার শামসুলের ছেলে নজরুলকে পাসপোর্টের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়ে জানা যায়, তাদের ৫মাস ১০ দিন সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল যা কয়েক মাস আগে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু একমাত্র বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারত সরকার তাদের মুক্তি দিচ্ছে না।:

পরিবারের একটু সুখের আসায় শিবগঞ্জ উপজেলার বারোরশিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতের মনিপুরে গিয়েছিলেন ২০১১ সালের দিকে, ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হন, জেলও হয় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে। এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে কয়েকটা বছর, সাজার মেয়াদও শেষ। কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরতে পারেননি আব্দুস সালাম। শুধু সালাম নয় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় বিভিন্ন জেলে বন্দী শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০ জনেও অধিক সাজা ভোগের পরও যথাযথ আইনী সহায়তা ও উদ্যোগের অভাবে দেশে ফিরতে পারছে না।

পরিবারের সুখের আশায় আব্দুস সালাম ভারতে গেলেও সংসারে সুখ আসেনি, বরং সৃষ্টি হয়েছে অন্ধকারের। স্বামীর বন্দী জীবনের অবসান চান সালামের স্ত্রী সেরিনা বেগম। তিনি জানান, ‌একবার ভুল করাছিল হামার স্বামী, ভুল করে ভারত গিছিলো, জেলও দিছে। কিন্তু জেলা খাটার পরও ক্যানে হ্যামার স্বামীকে ওরা ছ্যাড়া দিছে না। আজ ৮ মাসেরও বেশি হয়্যা গ্যালো জেলা খাটা শ্যাস হওয়ার। হ্যামার স্বামী যাতে মুক্তি পায় সে জন্য হ্যামি সরকারের দাবি জানাচ্ছি।

আব্দুস সালামের ভাই আলমগীর হোসেন জানান, ভারতের আসমের মনিপুরে ভাংড়ির ব্যবসা করে বাংলাদেশের অনেক মানুষ। আমি সহ প্রতি বন্দীর আত্মীয়রা বন্দীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য বারবার চেষ্টা করেও কোন কুল-কিনারা পাচিছ না। ভারতের কারাগারে বন্দী জিয়ারুল হকের স্ত্রী মাসিরন বেগম জানান, ৩বছর আগে তার স্বামী হরেক মালের ব্যবসা করতে ভারতে গিয়ে ভারতের পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর গ্রামের লোকজন জানায়।

তিনি অনেক কষ্টে আছে দুইজন ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে, ৩ বছর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নে ভায়ের বাড়িতে আছি, তার উপর ছোট মেয়েটার কিডনিতে পানি জমছে, ডাক্তার দেখানোর টাকা জোগাড় করা নিয়ে চিন্তায় ঘুম আসে না।

বন্দী মফিজুলের স্ত্রী শেরিনা বেগম, শরীফুলের বোন নাসিমা বেগম বাবলুর মা সখিনা বেগমসহ আরো কয়েকজন জানান, আমরা গোপনে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে তারা বন্দী খানায় ভীষণ কষ্টে অখাদ্য- কুখাদ্য খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

বন্দী নাজিরের ছেলে অনার্স পড়–য়া ছাত্র মাসুদ রানা জানান ইতিমধ্যে আমরা ৭ জনের ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র ও অন্যান্য কাগজ-পত্র নিয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী ও ঢাকার মহিলা আইন জীবি সমিতির মানবাধিকার কর্মী দীপ্তিবকে দিয়েছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি।কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা জানান, আমরা ৭ জনের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কাছে পাঠিয়েছি। সে গুলি প্রক্রিয়াধীন আছে। এভাবেই শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, দূর্লভপুর, বিনোদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০ জন ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে এবং বাংলাদেশে তাদের পরিবারগুলোর প্রায় ৩/৪শ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা সামাজিক বা ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহানুভূতিও পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানান।

এ ব্যাপারে দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু আমহেদ নজমুল কবির মুক্তা জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ জন ভারতে বন্দী আছে তাদের প্রায় ২০ জনের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে,

মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাঃ কামাল উদ্দিন জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ২০জন ভারতে বন্দী ও আরো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে।

বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাঃ মোহবুল হক জানান, আমার ইউনিয়নে মাত্র কয়েকজন ভারতে বন্দী আছে। যাদের ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা চলছে।

বৃপ্রেমিক কার্তিক পরামানিক নিজস্ব উদ্যেগে সরকারের মাধ্যমে বন্দীদের ছাড়িয়ে আনতে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রসহ ২৫ জনের আবেদন গত মাসে প্রধান মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে দূর্লভপুর ইউনিয়নের ১৬ জন, মনাকষা ইউনিয়নের ৫জন ও বিনোদপুর ইউনিয়নের ২জন চৌডালার ১জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ১জন।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাঃ জাঙ্গাগীর কবির জানান; ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জনের আবেদন আমার কাছে এসেছে। আমি এ আবেদনগুলোকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে তারা ছাড়া পেয়ে আসবে।