আদিবাসী নারী প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 10 August 2015, 05:58 PM
Updated : 10 August 2015, 05:58 PM

৯ আগস্ট 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস'। দিবসটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন বে-সরকারী সংস্থার উদ্যোগে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে, আদিবাসীরা বাংলাদেশে অসহায়ভাবে বসবাস করে। এরা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, মৈমংসিংহ গাড়ো এলাকা, বরেন্দ্রভূমিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভূমি থাকলেও এখন ভূমি দস্যূদের কাছে পরাজিত হয়ে এখন নিঃস্ব। এদের মধ্যে উলেখযোগ্য সংখ্যক জাতিতাত্ত্বিক বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২৫টি অন্যতম। এদেশের কোন আদিবাসী ভূমিজ সন্তান নয়। কয়েক শতাব্দি ধরে বিভিন্ন কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মায়ানমারসহ বিভিন্ন ভূ-খণ্ড পরিত্যাগ করে এদেশে এসে বসতি স্থাপন করেছে। তাদের ভাষায় রচিত গান, তাদের তৈরি বিভিন্ন লোক শিল্প দেশের সম্পদ। কিন্তু তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে আদিবাসী নারীরা এখনও তাদের সংস্কৃতির প্রতি অটুট। চোখে পড়ে তাদের নৃত্য যা আজও বাঙালি জাতিকে মোহিত করে তুলে। তারা পুরুষদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমী। তারা বসে থাকা মোটেই পছন্দ করে না। অনেক আদিবাসী ধর্মান্তরিত হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। ফলে দিন দিন হারিয়ে ফেলছে তাদের ঐতিহ্য ও জীবনধারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের আদিবাসী এলাকায় নারী ও কিশোরীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বিশেষ করে আদিবাসী প্রতিবন্ধী নারীরা খুবই অসহায়।  তাদের জীবন ও জীবিকা নিরাপত্তা প্রয়োজন। তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।  কিন্তু বাস্তবে আশাতীত উন্নয়ন হয় না বললেই চলে। তারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার।
আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আইএলও (আইএল্ও) কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন, কনভেনশন ১৬৯ এবং আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আদিবাসীদের স্বার্থে তা  অনুমোদন করা জরুরী।

আদিবাসীরা পূর্বের তুলনায় শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়েছে অনেক। কিন্তু নারীরা একপর্যায়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে অকালে ঝড়ে পড়ে। প্রায় সকল আদিবাসী সম্প্রদায়দের মধ্যে নারীদের মর্যাদা দেওয়া হলেও কিছুটা সমস্যা রয়েছে। যেমন: গাড়োদের পরিবার মাতৃতান্ত্রিক, চাকমাদের পরিবার পিতৃতান্ত্রিক। তাদের মধ্যে বিয়ে ছিন্ন হওয়ার ঘটনা কম হলেও কোন কোন আদিবাসীদের বিধবা বিয়ের রেওয়াজ নেই। বিয়ে রেজি: হয়না। ফলে ঝামেলা পোহাতে হয় ওদের।   চাকুরির ক্ষেত্রে আদিবসীদের কোটা রয়েছে। কিন্তু আদিবাসী নারীদের বঞ্চিত রাখা হয়। ১৯৮৫ সালের ২৮ জুলাই সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে বিসিএস ক্যাডারে কোটা বণ্টন সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি করা হয়। সেখানে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় আদিবাসী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তাদের আত্মপরিচয়ের পথ স্বীকৃতি পাবে।
আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আদিবাসী নারীদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দুর করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা সমূহকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। বিভিন্ন আয়বর্ধকমূলক কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যাতে তারা আধুনিকতার সাথে খাপখাওয়াতে সক্ষম হয়। তাদের জীবনধারা ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা ও তাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা যেতে পারে। এদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ, এরা দেশের নাগরিক। তাই আসুন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি।