মানুষের মানচিত্র: ৪০ ইঞ্চি লম্বা খুদে মানুষ আবু সামা সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করেন

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 21 March 2018, 02:49 PM
Updated : 16 May 2011, 10:01 AM

দেখে মনে হবে মাত্র কয়েক বছরের ছোট ছেলে। হয়ত: স্কুলে যায়, আর খেলা-ধূলা করে সময় অতিবাহিত করে। স্থানীয় লোকজন ছাড়া দুর থেকে যে কেউ দেখলে অথবা অপরিচিত ব্যক্তি দেখলে একজন শিশু হিসেবে কল্পনা করবে। কিন্তু আসলে শিশু নয়। জীবনের মূল্যবান ৩৬ বছর পার করে দিয়েছে। গায়ে পাঞ্জাবী। মাথায় গোল টুপি পড়ে নামাযে একটু অবহেলা নেই। সে ব্যক্তির নাম হচ্ছে মোঃ আবু সামা (৩৬)। উচ্চতা মাত্র ৪০ ইঞ্চি। এই জন্য অনেকে তাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতো।

আবু সামা'র জন্ম মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাবা হাফেজ আবুল ফজল। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে সে সবার বড় হলেও দেখে মনে হবে সবার ছোট।
মৌলভীবাজার জেলার নলদাড়ীয়া জামে মসজিদের সামনে তার দোকানে কথা হয়। সে জানায়, যখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর তখন থেকে সে নিজের খরচ মেটানোর জন্য বাড়িতে সাবান, সোডা, খাতা-কলম, পেন্সিল, লবন, হলুদসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রি করা শুরু করে। বর্তমানে নলবাড়ীয়া জামে মসজিদের সম্মুর্খে রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান দিয়েছে। দোকানটি তার ভালো চলে। বাবার বড় ছেলে হিসেবে সংসারের দায়িত্ব সে একা নিয়েছে। ভাই বোনদের বিয়ে দিয়েছে। একটি বাড়ি তৈরি করেছে। কিন্তু নিজে বিয়ে করেনি এখনও।

ব্যবসা করার পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) নামক একটি বেসরকারি সংস্থা মৌলভীবাজার জেলায় ২০০২ সালে 'উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্ব-উদ্যোগ (পিএসআইডি)' এপ্রোচ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। সে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে উক্ত সংগঠনের সদস্য হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। নেতৃত্ব বিকাশের ওপরও তার একটি প্রশিক্ষণ নেওয়া রয়েছে বলে জানান। বর্তমানে 'মৌলভীবাজার ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট (মৌলভীবাজার-ডিপিওডি)-এর সাধারণ পরিষদের সদস্য হিসেবে তার এলাকার পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উক্ত সংগঠন থেকে সে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। তিনি নিজে অসচ্ছল নয়, বলে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা চায় না। সে চায় তার পাশের অন্যান্য সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন প্রতিবন্ধী ভাতা পায়।

লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
উন্নয়নকর্মী এবং ফ্রিল্যান্স লেখক