স্মৃতিকথা: এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর সাথে যে কায়দায় প্রতারণা করেছিলো একটি সংগঠন

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 2 Jan 2011, 05:30 PM
Updated : 2 Jan 2011, 05:30 PM

২০০৫ সালের দিকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সমিতি (এনডিডিএস) নামক একটি বেসরকারি সংস্থায় ২ বছরের চুক্তিতে যোগদান করি। সেখানে মূলত: কাজ ছিলো মিরপুর ৩, ৫ এবং ১০ নং এর সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে এ্যাডভোকেসি করা। আল্লাহর রহমতে সে বছরই অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা কার্যক্রমে প্রায় ২০০ জনকে ভাতা নেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমি নিজেই অনেক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক ,নারী এবং পুরুষকে ফরম পূরণ করে দিয়েছি। এমনকি কিছু বিহারী প্রতিবন্ধীকেও ভাতার ব্যবস্থা করেছিলাম। নিজে ওদের ফরম সমাজ সেবা অধিদপ্তরে জমাও দিয়ে এসেছি।

সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে আমি নিজে চাকুরি থেকে অব্যাহত নিই আমার মাষ্টার্স পরীক্ষার জন্য। অব্যাহত নেওয়ার পর রেড নামে একটি সংগঠন আমাকে চাকুরির জন্য অফার দেয়। আমি সেখানে জয়েন করি নি। আমার রুমে বরিশালের জিয়া নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী (ক্রাচ ব্যবহারকারী) ১ মাসের জন্য ছিলো। সেও চাকুরি খোঁজার জন্য ঢাকা শহরে পাড়ি জমিয়েছিলো। রেড সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক নিপু নামের এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে বলল, জিয়াকে পাঠাতে পারবেন? আমি বললাম, তাকে চাকুরি দিবেন নাকি? দেখা যাক কি করা যায়। আমি তাকে রিক্সায় তুলে দিলাম। সে ক্রাচে ভর করে মিরপুর সাড়ে ১১ নং এর আববাস উদ্দীন স্কুলের পিছনে এক বাসাবাড়িতে অবস্থিত অফিসে গেলো। সেখানে আসলে তাকে চাকুরি দেওয়ার জন্য ডাকা হয় নি। ডাকা হয়েছে তার ছবি তুলে ডোনারকে দেখিয়ে বাণিজ্য করার নামে। জিয়াকে ওর ক্রাচ দিয়ে ব্রাক ডেটের ব্যানারে ছবি উঠিয়ে হাতে ৫০ টাকা দিয়ে বলে আপনি যেতে পারেন। মনে কিছু করবেন না। আমাদের ফান্ডের টাকা আমরা বেশি খরচ করে ফেলেছি। এখন ব্যাক ডেটে আপনাকে দেখাবো যে, সহায়ক উপকরণ বিতরণ করলাম। ছবিটি শুধু ফিনল্যান্ডের একটি ডোনার এজেন্সি ছাড়া কেউ দেখতে পাবে না।

সে অসহায় হিসেবে ৫০ টাকা নিয়েই চলে এসে ঘটনাটি আমাকে বলল। আমি তাকে বললাম। কাজটি ঠিক করেন নি। আমাকে আগে বলতেন। আমি আপনাকে পরামর্শ দিতাম। পরে অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নিলো। বেশ কিছু দিন পর নিপু সাহেব মোবাইলে বলল, আজমাল ভাই আপনার জানা মতে, কোন শারীরিক প্রতিবন্ধী কি রিক্সা মেরামতের কাজ করে। আমি বললাম আছে। কেন ভাই? সে বলল, একটি ছবি দরকার। আমি বললাম, শারীরিক প্রতিবন্ধীর ছবি দিয়ে কি করবেন। বললো, আমার ছোট ভাই ফান্ডের টাকা খরচ করে ফেলেছে। এখন ডোনারকে প্রকল্প শেষে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। প্রতিবেদন ভালো না হলে এক্সটেন্ড করবে না। আপনি সহযোগিতা করেন। ফান্ড আসলে জিয়াকে নিয়োগ দিবো। আমি তাকে সহযোগিতা না করে কিছু নরম-গরম কথা বার্তা উপহার দিলাম। এর পর থেকে যোগাযোগ হয় নি।
কিমত্মু জিয়া ঠিকই ২০০৯ সালে বরিশালে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেছে। সে মেধা দিয়ে প্রমাণ করেছে প্রতিবন্ধীদেরও যোগ্যতা রয়েছে। করুণা নয়, অধিকার প্রয়োজন। এখন সে স্বাবলম্বী ।

পরিশেষে বলতে চাই, যারা প্রতিবন্ধী বা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের উন্নয়নের নামে টাকা এনে বিলাস বহুল জীবন যাপন করে তারা আজীবন চিটিংবাজি করেই বেড়ায়। আর যাদের ঠকানো হয় তারা একসময় নিজ মেধা, শ্রম এবং যোগ্যতা দিয়ে ঠিকই স্বাবলম্বী তথা আত্মনির্ভরশীল হয়। কিন্তু আমি সেদিন ওই ধান্ধাবাজির বিরুদ্ধে কোন কিছু বলতে পারি নি। শুধু মনে মনে ঘৃণায় করেছি। এ ঘৃণা করা ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না।