চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংকটে লাক্ষা চাষ

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 20 August 2021, 03:06 PM
Updated : 20 August 2021, 03:06 PM

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিগত কয়েক বছর আগে লাক্ষা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে। গত তিন-চার বছর আগে পতিত জমি ও ফসলি জমিতেই সাথী ফসল হিসাবে অনেকেই এখন লাক্ষা চাষ করে আলোর মুখ দেখেছিল। লাক্ষা চাষ অন্যান্য কৃষি ফসলের মতো খুব লাভজনক হওয়ায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে লাক্ষা চাষ।

দেখতে অনেকটা উকুনের মতো লাক্ষা পোকার ত্বকের নীচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঁঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়ে পোষক গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। পোষক গাছের ডালের এ আবরণকেই লাক্ষা বলা হয়। পরবর্তীকালে ডালের উক্ত শক্ত আবরণ ছাড়িয়ে ও শোধিত করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের কাছে লাহা হিসাবে পরিচিত এ লাক্ষা  যে সকল প্রজাতির গাছের লাক্ষা ভালো জন্মায় সেগুলোকে লাক্ষার পোষক গাছ বলা হয়। প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছে লাক্ষা জন্মানো গেলেও মাত্র কিছু প্রজাতিতে লাক্ষাপোকা ভালোভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। বাংলাদেশে বরই, শিরিষ বা কড়ই, বট, পাকুড়, পলাশ, খয়ের, বাবলা, ডুমুর, অড়হড়, কুসুম প্রভৃতি গাছে লাক্ষা ভালো জন্মে। তবে আবাদি জমির মধ্যে বরই জাতীয় পোষক গাছ লাগালে লাভজনকভাবে বিভিন্ন ফসলের চাষ করাও সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও এখন নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষক। বিভিন্ন ফসলের একক চাষের ফলে যে পরিমাণ লাভবান হওয়া যায় সে তুলনায় লাক্ষার সঙ্গে সাথী ফসলের চাষ করে ৪ গুণ লাভ পাওয়ার আশায় গম, কচু ও হলুদ সাথী ফসল হিসাবে চাষাবাদ করা যায়।

প্রতিবছর দুই প্রকারের লাক্ষা পোকা দুই বার ফসল দিতে পারে। সেজন্য বছরে ৪টি ফসল পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে কুসুমী পোকার অপর্যাপ্তরার কারণে রঙ্গিনী পোকা দ্বারা লাক্ষা চাষ করা হয়। রঙ্গিনী পোকা থেকে বছরে দুইবার বৈশাখ ও কার্তিক মাসে ছাড়ানো লাক্ষা পাওয়া যায়। রঙ্গিনী পোকা কার্তিকী ফসলের সঙ্গে জুন-জুলাই মাসে লাগানোর পর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এবং বৈশাখী ফসলের সঙ্গে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে লাগানোর পর এপ্রিল-মে মাসে লাক্ষা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এখন লাক্ষার যে পোষক রয়েছে সেখান থেকে বছরে প্রায় ৫০০ টন‌ লাক্ষা উৎপাদন করা সম্ভব। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। এখান থেকে প্রায় ২০ হাজার ভূমিহীন প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থান করাও সম্ভব হলেও  লাক্ষা চাষের অবস্থা হতাশাজনক বলেই জানালেন অনেকে।

লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, "নিঃসন্দেহে লাক্ষা চাষ লাভজনক। কিন্তু নানা সমস্যার জন্য কৃষক লাক্ষা চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

"চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল ও নওগাঁতে পোরশা উপজেলায় কিছু লাক্ষা চাষ হচ্ছে। চারদিকে প্রচুর আমবাগানে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলে লাক্ষা পোষক মারা যাচ্ছে। মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন লাক্ষা চাষীরা।"

ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে লাক্ষা আসায় দেশি উৎপাদিত লাক্ষার ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, অবাধে লাক্ষা উৎপাদিত বৃক্ষ নিধন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তার অভাবেও লাক্ষা চাষ ভেস্তে যেতে বসেছে।

মোখলেসুর রহমান বলেন,  "লাক্ষা গবেষণা কেন্দ্রে মাত্র একজন বিজ্ঞানী রয়েছেন। আরও বিজ্ঞানী দরকার; যাতে লাক্ষা চাষ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করা যায়। সরকারিভাবে ভারত থেকে উন্নত জাতের লাক্ষা পোষক আনা হবে।এতে লাক্ষা চাষিদের আগ্রহ বাড়বে।"