ওরা সবাই হৃদয়ের আলোতে আলোকিত: ওদের জীবনে কখন মিলবে আশার আলো?

আজমাল হোসেন মামুন
Published : 24 Jan 2011, 09:47 AM
Updated : 24 Jan 2011, 09:47 AM

মানুষ পৃথিবীতে নিষ্পাপ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিধিবাম কেউ জন্মগতভাবে বা কেউ রোগাক্রান্ত বা দূঘর্টনার শিকার হয়ে শরীরের অঙ্গহানি ঘটে। ফলে প্রতিবন্ধীতা বরণ করে। ইচ্ছে করে কেউ প্রতিবন্ধীতাকে বরণ করতে রাজি এরকম মানুষ নেই।

কিছুদিন পূর্বে ঢাকার রমনা পার্কে দেখা গেল একসাথে কয়েকজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী। এরা সবাই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ হোস্টেলে থাকে। কেউ বাইরের হোস্টেলে থেকে লেখা-পড়া করে। লেখা-পড়ার পাশাপাশি কেউ 'কম্পিউটার' প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কেউবা পার্টটাইম চাকুরি করছে। ওদের হাতে রয়েছে একটি সাদা ছড়ি বা (white can). যাকে বলা হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তার প্রতীক। তাদের কেউ একা চলাফেরা করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে কোন মানুষের সাথে ধাক্কা খান। তবুও একা চলাফেরা করাকে পছন্দ করে ওরা। ওদের সাহস যুগিয়েছে সাদা ছড়ি বা (white can).

স্ক্রীন রিডার সফটওয়ারের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। সানজিদা আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছে। পাশাপাশি একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন কাজ করছে। সে জানায়, আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবহেলা করা হয়। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারীরা বেশি অবহেলিত। এরা একদিকে প্রতিবন্ধী অন্যদিকে নারী। সাথী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করছে। সে জানায়, ছাদা ছড়ি সহায়ক উপকরণের মাধ্যমে আমরা চলাচল করি। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে লেখা-পড়া করে থাকি।

ওসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীদের একটাই আশা লেখা-পড়া শেষ করে একটি চাকুরি জোগাড় করা। যাতে দু'মুঠো ডাল ভাত খেতে পারে সাচ্ছন্দে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ওদের আশা পূরণ হবে কি?

সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষণ করেছেন। যার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, বিধি-১ শাখা (স্মারক নং-সম(বিধি-১)-এস-৮/৯৫(অংশ-২)-৫৬(৫০০), তাং:- ১৭/০৩/১৯৯৭ (ইং) মোতাবেক এক আদেশ বলবৎ আছে (সংযুক্ত-১)। কিন্তু সরকারি চাকুরিতে আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না বললেই চলে। নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠান সমূহ বিভিন্ন অজুহাতে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। অথচ তারা দেশের নাগরিক। সংবিধানের ২৭ ও ২৮ ধারা মতে সকলের রয়েছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার।

পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সরকারি চাকুরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্দিষ্টভাবে সরকারী চাকুরিতে ৩ ভাগ ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে ৫ ভাগ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে নেই বলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হতাশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ন্যাশনাল অ্যালাইয়েন্স অব ডিজএ্যাবল্ড পিপলস্ অর্গানাইজেশনের (ন্যাডপো) সভাপতি আবদুস সাত্তার দুলাল জানান,

দেশের উন্নতি চাইতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকুরিসহ সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এরাও মানুষ। দেশের নাগরিক হিসেবে রয়েছে এদের অধিকার।