গুচ্ছকবিতা

pranji_basak
Published : 4 August 2012, 12:05 PM
Updated : 4 August 2012, 12:05 PM

ভাসানে

সমস্ত বৈভবের পর একটু বিরাম
বেশ কয়েকদিন পর আজ পাতা আসবে
যেখানে থেকে যাত্রা শুরু হবার কথা
সেখানে ঢাক বাড়ছে
রোদ খেলছে তবু আলো নেই

রাত্তির কথা জানে না সারি সারি পিপীলিকা
জানে না শহর অথবা গ্রামের কথাও
গোষ্ঠীবদ্ধতা নিয়ে মন খারাপ নেই
বানের জলে চাঙ্গার ভাসলেও দুঃখ নেই

কঠিন পরিশ্রমের গেরোস্থালি চিনির দানার মতই
সলুউবল্ – তবুও জলের প্রেমে ভাগাভাগি হয়
অবোধ শরীর অনিবার্য গলে যাওয়া নির্মম ভাসানে

শেষ তারিখে

আরো একবার দেখা হল দেয়াল মুখোমুখি
সে দেয়ালে দুলছে ক্যালেন্ডার
ক্যালেন্ডারে স্মিতহাস্যে চারণকবি সদাশিব

তারিখগুলো হড়কে যায় অবিবরত
পথ ও মেঝেয় দৃঢ় পা
অবিশ্বাস্য হয় উপস্থিতি শেষ তারিখে

ওড়াউড়ি

সারাক্ষণ খুঁটে নিচ্ছি অবৈধ ইন্ফো গলিপ্রাপ্ত থেকে
সিঁড়িতে মোতায়েন হাইহিল শব্দশৃঙ্খল
আগুনের গন্ধ পেয়ে মুখর সাইরেন
কেবলই ইঙ্গিতগুলো ভাসায়

পোড়ামাংসের গন্ধে মনোরম সন্ধ্যা
জাগো জাগো জাগতে রহো
কার হাতে জল রেখে ঘুমোতে যাচ্ছ –

অবেলায় পৃথিবী আর তুমি বড়ই অসুস্থ
অন্নজল হাওয়াবাতাস স্নিগ্ধ আলো চাই
ভাসানো ইঙ্গিতগুলো সর্বক্ষণ খুঁটে নিচ্ছি

গলিপ্রান্ত থেকে সিঁড়িতক মোহন-শব্দ খেলা
পাখি হয়ে এসো নীলাভ জ্যোৎনায় উড়ি

ওটুকুই

বহুবার বজ্রপাতে খান খান নগ্নতা
ঘরের কোণটায় জ্বলজ্বল বিজলিচমক
একপলকের স্বর্গ অমূল্য ঐশ্বর্য্য

ওটুকুই সব –

বারবার চমকে উঠি
অসহজ যাপনে শুধুই মিস্কল বিড়ম্বনা
যেন মোহনা থেকে হড়কে যায় ঝাঁকঝাঁক
অলভ্য রূপোলি ইলিশ

প্রসাদ

পাতে রেখেছি প্রসাদ খুলি-মাথার ঘন্ট
পয়োধর নিঙড়ানো পাতলা ক্ষীর গেলাসে
আর ঐ জামবাটিতে রাখা স্খলিত বীর্য

আলো সরিয়ে অন্ধকার-পোশাকে প্রতীক্ষা
সত্য ও মিথ্যা

গ্রহণ করুন গোসাঁইজী গ্রহণ করুন
উন্মুখ পাতে নিয়ত এই মহার্ঘ নিবেদন

খেলা

ফ্লাইওভারের নিচে
হড়কে যায় স্কুল-বালিকা
জল ও আগুন খেলায়

এখনো শেষ হয়নি হোমাটাস্ক-

পলে পলে পুরনো হয় নিবিড় জ্যোৎনা
ক্রমশঃ ক্ষয়ে যায় চোখের জল ও এলাচুল

জয় হো

সিনেমাবাহানায় উষ্ণবাহানা এখন বোতামখোলা
নতুন এলাইনমেন্ট – জয় হো
খাঁচার পাখিদের ঝরাপালক সন্ধের চাঁদ যেন
এক একটা শাশ্বত শব্দচিহ্ন নির্লিপ্ত ঠোঁটে
গোলাপ আসে
বৃষ্টি আসে
জুলাই আসে
নির্বাক সাব-ওয়ের হালকা নরম হাওয়ায় কথারা ভাসে
এই মাত্র চলে গেল গ্রাম্য-পরিচয় গন্ধরাজ জয় হো

কেউ কারো নয়

আরো একবার সেই দুপুর গৃহহীন
সময়ই সময়কে চেনায়
বোলবাল দোলাচল

কেউ কারো নয়

নির্ধারিত বাক্সে উঠে আসে
রাতজাগা মানুষের ভ্রমণ কথা
হুড়মুড়িয়ে আসা আলোর কথা
উৎসবের কথা
আচমকা কেউ এসে পড়লে সংবাদ আগুন ছড়ায়

কেউ কারো নয়

তুলে আনা অবয়ব
পাগল হাওয়া শুধু কী জানলা খোঁজে
দোলাচল বোলবাল
প্রকাশ্যে এসে দাঁড়াল আবহাওয়া
ফুরিয়ে যাবে বলেই আলো এলো অতল খাদান পেরিয়ে

সময়বন্দী

কবিতার লাইনগুলোয় জড়িয়ে জড়িয়ে ভাসে
তরকারিপোড়াগন্ধ
হারমনিয়াম থেকে উঠে আসছে শিক্ষকতা
পরবর্তী লাইনগুলো অপেক্ষায়
আর তক্ষুণি অন-লাইন-এর মত দ্রুত ছুটে আসে
হেলমেট মাথায় ছেলেটি

বলে – আপনার নামে একটি চিঠি আছে

বাড়ীর পাশেই পোস্ট-অফিস
চিঠিটি আসতে সময় নিল ১৫ বছর
হেলমেট মাথায় ছেলেটি আর্কাইভে ক্লিক করে পালাল
রীডের ওপর অমনোযোগী আঙ্গুলগুলো যারপরনাই সময়বন্দী

ভ্রমণ

পাকুড়গাছের এন্ডলেস সখিতায়
জাপটে ধরি মৃদু গোঙানি
আড়মোড়া ভাঙে সর্নিবন্ধ দুপুর

যে জানলার পিঠে ছিল খ–আকাশ
সে জানলার পথে অবিশ্রান্ত প্রতীক্ষা
তবু বেঁচে থাকে স্বপ্ন
আগুন
ভ্রমণ
নেশা
বেস্পতিবারে পাঠানো ফর্দে
চাঁদি-শুক্রবারের বিপন্ন তালুতে
জানলার ওপাশে কে যেন চাবি হাতে

পাকুড়গাছটা জাপটে ধরে হাওয়াবাতাস
টুকরো স্মৃতি
রক্তিম বলয়
আদিম গন্ধ
আর…

ঈশ্বর কণা

প্রোফেসর সত্যেন বোস তোমার টিকি ধরে ফেলেছিলেন বৈ কি
হে ঈশ্বর কণা
তাই তো তুমি বোসন
আর পিটার রিগস্ মশাই তোমার কাপড় ধরে টানলেন বৈ কি
তুমি তীব্র গতিতে ছুটছো বিশ্বব্রক্ষ্মা-

ছুটছো … ছুটছো … ছুটছো

তুমি নিতান্ত গৃহহীন
তোমার বিপিএল কার্ড কোথায়…

খেল্-খেল্-মে

গাপ – সাপটার ফুসলানো মাথা রো-রো
গর্তের এক্কেবারে মুখোমুখি আর একটি মুখ
মুখে রা নেই
সম্মোহন বিদ্যা জানে গর্ত

বিষহীন সাপ খেল্- খেল্- মে ছুঁড়ে দেয় খাম
খামভর্তি অগণন শব্দ
না বলা কথার ভাষা
ভাষা থেকে ভাবান্তর

সাপ বুঝতে পারে না কনুইয়ের জোর
মুখের বিস্ময়
টান

খোলস বদলাতে বদলাতে অবাধ প্রবেশ
অধ্যাপকের লেকচার থেকে নেওয়া নোট
কোনো কাজেই লাগল না – সত্যি!

মর মর মর

এসএমএস আসে, নব্ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পড়ি
নীল আলোয় অক্ষরের মেলা

গরম হই কবিতা পড়ি

শরীরের আঠা ক্রমশঃ গলে যায় নির্ভার স্বপ্নে
উঠে দাঁড়াতে সময় লাগে না খোলাচুলে

ঐ তো বোঁটা বোঁটায় কষ
এক ঝটকায় ডেকে আনি মেঘ
পালাবার সব পথ বন্ধ
শিকল খুলে কে যেন ডাকে আয়

উঠোনে দাঁড়ালে হাফ্-কাঠ চাঁদ
মরতে বলে- মর মর মর

চালু-সকাল

র-চা এলো সকাল সাতটায়
দুধ জমে আছে
জমাদুধের প্যাকেট জলের বোয়ামে
পাকাকাঁঠালের গন্ধে সিক্ত ড্রয়িংরুম ম-ম

আধমরা পিঁপড়েটা ঘুরে মরছে
কাকেদের কা-কা শব্দে ভাঙছে
শব্দহীন আনকোরা সকাল

ভোরবেলার আকাশে বাংলা পা-ুলিপি
আমরা নত হই ফুলের কাছে –
অসহ্য লাগে স্থানীয় সংবাদ
কঠিন-তরল-বাষ্পে থৈ থৈ চালু-সকাল

হাওয়াভোজ

হাওয়া খুলে গরম দুপুর
পিংকি-পিংকি সমারোহ সমাবেশ
রক্ত জানে সহমরণ
এই তো এই তো বলে বিবিক্ত ধমক

কী আশ্চর্য কী নাম হবে এমন অচেনা ভাষা
গরমদুপুর হাওয়াভোজ মগ্ন অনুবাদে