কিস্তি ঋণের সুদ কত হওয়া উচিৎ?

বিন্দুবিসর্গ
Published : 6 August 2012, 05:54 AM
Updated : 6 August 2012, 05:54 AM

কিস্তি ঋণের সুদ বিতর্ক বহুদিনের। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বির্তক টিকে আরো উসকে দিয়েছেন। দেশের মান্যবর অর্থনীতিবিদগণ এমনকি হালের অর্থনীতিবিদগণও বিষয়টি নিয়ে রীতিমত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। আমার মত অর্থনীতির অক্ষরজ্ঞানশূণ্য পণ্ডিতগণও পিছিয়ে নেয়। ব্লগে রীতিমত অর্থনীতির স্কুল চালু করে ফেলেছে। সেই স্কুলের একজন নগণ্য স্টুডেন্ট হিসেবে আমি আজ কলম থুক্কু কি বোর্ড্ হাতে তুলে নিয়েছি। আমি গত কয়েকদিনের ব্লগ এবং খবরের কাগজ পড়ে যা জানলাম তা হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার তা ঠিক অথবা বেঠিক। আমি একটি ব্লগও পেলাম না যেখানে আলোচনা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক বা এ ধরণের ব্যবসা যারা করছে এক কথায় কিস্তি ঋণের সুদ কত হওয়া উচিত। আসলে কত হওয়া উচিত এটা নির্ভর করে ঐ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর তারা কত চায়। একেক জনের চাওয়া একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা যদি অর্থনীতির আলোকে বিশ্লেষণ করি তাহলে মোটামুটি একটি গ্রহনযোগ্য সুদের হারে পৌঁছাতে পারব।.

বর্তমানে বাংলাদেশে এক হাজারেরও বেশী কিস্তি ঋণ ব্যবসায়ী ব্যবসা করছে। সুতরাং এই ব্যবসায়টি এখন আর মনোপলি বলা যায় না। এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়। আর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মূল্য নির্ধারন হয় চাহিদা ও যোগান রেখার মাধ্যমে। যে বিন্দুতে এই দুইটি রেখা পরস্পরকে ছেদ করে সেখানেই মূল্য নির্ধারিত হয়। বাজারের যে কোন পরিবর্তন এই রেখাদ্বয়ের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। সুতরাং বর্তমান বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ধরে বলা যায় সুদ বর্তমানে যা আছে সেটা ঠিক আছে। এখন প্রশ্ন হল কত আছে? সাধারণ হিসেবে ২৭% এর উপরে আছে। তা প্রতিষ্ঠানভেদে ১০০% ও হয়ে থাকে।

এখন আরেকটি বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তা হল কষ্ট অফ ফান্ড। এখন যে কোন ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে ৫% থেকে ১৫% সুদ দেয়। আমরা গড়ে তা ১২.৫% ধরতে পারি। (বেশী টাকা সাধারনত স্থায়ী আমানতেই রাখা হয়) এর সাথে অপারেশনাল কষ্ট ৩.৫% যোগ করলে দাড়ায় ১৬%। এখন আরো ২% খারাপ লোন (শ্রেণীকৃত) যোগ দিলে দাড়াবে ১৮%। আর এর সাথে আমি যদি ৩% ব্যবসায় সম্প্রসারণ (ক্যাপিটালাইজেশন) ধরি তাহলে মোট দাঁড়ায় ২১% । আরো একটি কম্পোনেন্ট আছে তা হল মুল্যস্ফীতি। আজকে যে ঋণটি বিতরণ হচ্ছে তার সর্বশেষ কিস্তিটি আসবে এক বছর পর। তাহলে টাইমভেলু অফ মানি যদি বিবেচনা করি তাহলে আরো ১ থেকে ২% যোগ হতে পারে। এটি একটি মৌখিক হিসাব। এখন আপনারা যে কোন একটি কিস্তি ঋণ ব্যবসায়ীর বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে নিজেই হিসাবটি মিলিয়ে দেখতে পারেন। আমি আশা করি উপরের হিসাবের সাথে খুব বেশি পার্থক্য হবে না।

২০০৬ সালের গ্রামীন ব্যাংকের বার্ষিক হিসাব বিবরনী একটু গভীরভাবে দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছিল । সেখানে আমি যা পেয়েছিলাম মোটামুটি তাই তুলে দিলাম। আমার হিসেবে হয়ত গড়মিল থাকতে পারে তাই জোর গলায় বলতে পারছি না তাদের সুদ ২২% এর বেশী কোনভাবেই হওয়া উচিত নয়। আপনারা চাইলে বর্তমান হিসাব বিবরণী দেখে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।
এখানে আরেকটি বিষয় আলোচনা করা হয়নি তা হল বৈদেশিক সাহায্য। কিছু কিস্তি ঋণ ব্যবসায়ী ফ্রি বা মিনিমাম কষ্ট এ সাহায্য পেয়ে থাকে। যা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে। এতে করে তাদের কস্ট অফ ফান্ড আরো কম হয়। এই হিসেবে গ্রামীন ব্যাংকের সুদ আরো কম হওয়া উচিত। গ্রামীন ব্যাংকের ক্যাপিটালাইজেশন রেট খুব বেশি এই কারনে তাদের সুদের হারও বেশি। দরিদ্র জনগনের জন্য কিছু যদি সত্যিই করতে চায় তবে এতো বেশি সুদ চার্জ্ করা উচিত নয়।

এবার একটু তুলনামুলক আলোচনা করা যেতে পারে। কিস্তি ঋণ যারা নেয় তাদের কে কোন ব্যাংকই জামানত ছাড়া লোন দেয়নি এখনও দেয় না। তাদেরকে মার্কেটে একসেস দেওয়ারও একটা প্রিমিয়াম চার্জ্ করতে পারে কিস্তি ঋণের ব্যবসায়ীরা। তা নৈতিক ভাবে সমর্থনযোগ্য না হলেও ব্যবসায়ীক দৃষ্টিতে আপনাকে সমর্থন করতেই হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই ধরনের ঋণ প্রদান না করলেও তারা কনজুমার ক্রেডিট নামে এক ধরনের কিস্তি ঋন দিয়ে থাকে। ব্যাংক ভেদে এর সুদ ১৭% থেকে ২২% পর্য্ন্ত হয়ে থাকে। এখন আমি যদি নিম্ন রেটও ধরি এবং এর সাথে লোন প্রসেসিং কস্ট ও অন্যান্য কস্ট যেমন যাতায়াত খরচ যোগ করি তাহলে তা ২৫% হয়ে যায়। এবং অনেক সময় কয়েকদিন অফিসে ঘোরার পরও লোন হয় না।

তাহলে কোন কিস্তি ঋণ ব্যবসায়ী যদি মার্কেট একসেস প্রিমিয়ামসহ ২৭% বা তার বেশি চার্জ্ করে তবে তা আমরা যতই গলা ফাটাই না কেন ব্যবসায়ী দৃষ্টিতে তা সঠিক আছে।আর গ্রামীন ব্যাংক বা এ ধরনের কিস্তি ঋণের প্রতিষ্ঠান কোন চ্যারিটি নয়। এরা টোটালি একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

আমরা কি বলব যে কিস্তি ঋণের সুদ ২৭% বা এর কাছাকাছি হওয়া উচিত? যদি ২৭% হয় তাহলে আমাদেরকে খুজে বের করতে হবে বাংলাদেশে এমন কোন কোন সেক্টর আছে যেখান থেকে ২৭% এর বেশি মুনাফা/রিটার্ন্ আসবে। কিস্তি ঋণ ব্যবসায়ীদের উচিত নিজ দায়িত্বে তা খুজে বের করা এবং ঐ সকল সেক্টর ব্যতীত লোন না দেওয়া। এতে কিছু লোকের অন্তত ঋণের যাতাকলে পিষ্ট হওয়া থেকে বাচানো যাবে।

বিঃদ্রঃ আমি অর্থনীতির অক্ষরজ্ঞানশূণ্য এবং এটি একটি একাডেমিক আলোচনা।