বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ- কতিপয় প্রশ্ন

বিন্দুবিসর্গ
Published : 23 Oct 2012, 08:09 AM
Updated : 23 Oct 2012, 08:09 AM

বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে দেশের মন্ত্রিসভা। কম্পানি আইন 1994 সংশোধন করে এতে একটি ধারা ও উপধারা সংযোজন করে আইনটি তৈরি করা হচ্ছে। মূলত মাল্টিলেভেল কম্পানির জালিয়াতি ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আইনটি হওয়ার কথা থাকলেও সকল বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যেই আইনটি প্রযোজ্য হবে। ইতোমধ্যেই বেশ ক'জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আইনজীবি এর কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের আশংকা আইনটি পাশ হলে এই ধারাটির রাজনৈতিক অপব্যবহার হবে। আশংকা যে অমুলক নয় তা জনাবা হেনরী কে দিয়েই বিচার করা যায়।

সংশোধিত আইনের নতুন 202ক ধারায় এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, "যদি সরকারের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, (ক)(১) কোম্পানির ব্যবসা ইহার পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার বা অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রতারণার জন্য পরিচালিত হইতেছে অথবা ইহার প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে অথবা কোন সদস্যকে হয়রানির উদ্দেশ্যে অথবা কোম্পানিটি প্রতারণা বা অবৈধ উদ্দেশ্যে গঠিত হইয়াছে, অথবা (২) কোম্পানিটি গঠন বা ব্যবস্থপনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ প্রতারণা, অবৈধ কর্ম সম্পাদন অথবা অন্য কোন সদস্যের প্রতি অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত; (খ) জনস্বার্থে এবং শেয়ার হোল্ডার ও পাওনাদারদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়োজন।

শুধুমাত্র সরকারের নিকট প্রতীয়মান হলেই হবে অন্যকারো কাছে কি মনে হল তা বিবেচ্য নয়। আর জনস্বার্থে এবং শেয়ার হোল্ডার ও পাওনাদারদের স্বার্থ সুরক্ষার প্রয়োজন যেকোন সময়ই হতে পারে এবং তা অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিত হবে।

২০২ক এর ২ নং উপধারায় প্রশাসক নিয়োগের শর্ত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে "শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে কোম্পানির কার্যক্রম বিষয়ে কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে উপধারা (১) এর অধীন কোন প্রশাসক নিয়োগ করা হইবে না।"

দুষ্ট লোকের কারনের যে অভাব হয় না তা সবারই জানা। আর কারণ দর্শানো পরও যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে কারণ মনঃপূত নয়! তখন কি হবে?

তবে সবচেয়ে মজার এবং সেই সাথে ভয়ের বিষয় হল প্রশাসকের দায়মুক্তি। আইনটির (৫) উপধারায় বলা হয়েছে, "এই আইনের অধীনে প্রশাসক বা তাহার অধীনস্থ কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরল বিশ্বাসে সম্পাদিত হইয়াছে এইরূপ কোন কার্যের ফলে কেহ ক্ষতিগ্রস্থ হইলে বা উহার সম্ভাবনা থাকিলে তাহা দেশের প্রচলিত কোন আইনে আমলযোগ্য হইবে না।"

সরল বিশ্বাসে সম্পাদিত হয়েছে কি হয়নি তা প্রমাণ করা কঠিন। তবে কারও যদি কোম্পানি চালানোর যোগ্যতা না থাকে তবে তার প্রশাসক হওয়ার দরকার নেই। আর যদি যোগ্যতা থাকে তবে তার কর্ম কখনোই এমন হবে না যার দরুন কোম্পানি বা তার স্টেক হোল্ডার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কি হতে পারে?

ক. ব্যক্তি উদ্যোগ বাঁধাগ্রস্ত হবে
খ. রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে
গ. বিদেশি বিনিয়োগ শূন্যে চলে যাবে (কেউ চায় না তার প্রতিষ্ঠানে অন্যে নাক গলাক)
ঘ. কিছু স্কুল টিচারদের প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়ার ও টাকা কামাবার সুযোগ সৃষ্টি হবে
ঙ. প্রশাসন ক্যাডারদের প্রশাসক হিসেবে প্রথম বিবেচ্য ধরা হবে (গোপন উদ্দেশ্য, সেনাবাহিনীর মত)
চ. দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।

কতিপয় প্রশ্ন
১. প্রশাসকের বেতন বা অন্যান্য সুবিধাদি কোথা থেকে আসবে তার স্পষ্ট কোন ধারনা নেই। যদি কোম্পানিকে দিতে হয় তবে কোম্পানির জন্য তার পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গিয়ে ব্যবসাটাকে আরো ক্ষতির মুখে ঠেলে দিবে।
২. আবার কতদিনের জন্য বা ঠিক কত সময়ের জন্য প্রশাসকগণ থাকবেন তারও কোন ধারণা পেলাম না। অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য এই বিষফোড়া কেউ মেনে নেবে না।
৩. প্রশাসকের যোগ্যতা কি হবে তারও কোন স্পষ্ট ধারনা নেই?

মু্ক্ত বাজার অর্থনীতিতে এই ধরনের প্রশাসক নিয়োগের দরকার নেই বা নজিরও নেই। শুধুমাত্র আদালতের আদেশে কোন বিলুপ্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে "রিসিভার" নিয়োগের বিধান আছে (কোম্পানি আইন 1994 ধারা 251। আইনটি চুড়ান্ত অনুমোদনের পূর্বে আরো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার তা না হলে ব্যবসায় ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে যা আমাদের জন্যে মোটেই কাম্য নয়। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এ ধরনের আইন করা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। তবে যদি করতেই হয়, সকল পক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আইনটি করা উচিত ।