বাঘের নিরামিশ ভোজি হওয়া

বিন্দুবিসর্গ
Published : 2 Dec 2012, 06:17 AM
Updated : 2 Dec 2012, 06:17 AM

অফিসে জামানের বিরাট সুনাম। জামান স্যার কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না। ভাল মন্দ খোজ নেন। জামানের আরেকটা সুনাম সে ঘুষ খায় না। এই ঘুষের যুগে এটি আসলেই বিরাট সুনাম। ঘুষের সাথে তুষের একটা ছন্দ মিল আছে। তবে পার্থক্য হল তুষ গরুতে খাই আর ঘুষ মানুষে খায়।
কথাগুলো তার পিয়ন আমাকে বলল। জামানের বন্ধু হিসেবে নিজেকে বেশ গর্বিত মনে হল। দুপুরে জামানের সাথেই দুপুরের খাবার খেলাম। সাদা ভাত আর মাছের একটি তরকারি। সাথে হল লাইফের মত ডাল ফ্রি। তাদের অফিসের মেসের খাবার। কথায় কথায় ঘুষ প্রসঙ্গটা চলে এল। আমি তার পিয়নের কথার সূত্র ধরে তার মতামত জানতে চাইলাম। জামান তার বিষয়ে কিছু বলল না।
শোন তোকে একটা গল্প শোনায়। এই বলে জামান গল্প বলা শুরু করল। গল্পটা ছিল এমন-
'একদিন অতি প্রস্তুসে বনের ধারের কলা বাগানে ব্যঘ্রমামাকে কলার মোচর ধরিয়া টানাটানি করিতে দেখা গেল। ইহা দেখিয়া শেয়াল পন্ডিত ব্যাপক চিন্তাই পড়িয়া গেল। কোন কুল কিনারা না করিতে পারিয়া শেষমেষ মামার নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল।
-মামা ব্যাপার খানা কি বলেন তো? সাত সকালে কলা বাগানে কলার মোচর নিয়া মোচরামুচরি করণের হেতু টা কি?
-অনেক ভাবিয়া দেখিলাম ভাগিনা। জীব হত্যা মহাপাপ।এ জীবনে অনেক পাপ করিয়াছি।আমিষ আর না। তাই নিরামিশ খাওয়ার বন্দোবস্ত করিতেছি।
উত্তর শুনিয়া শেয়ালের মন ভরিল না। তাই সে প্রাইভেট গোয়েন্দা নিয়োগ করিল। বনের ঝানু গোয়েন্দা মিঃ চামচিকা সাত কার্য্ দিবসের মাথায় রিপোর্ট্ করিলেন যে গত সপ্তাহের প্রথম প্রহরে মামা অসুস্থ হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে দেশের নাম করা প্রাইভেট হসপিতালে ভর্তি করা হইলে বিজ্ঞ ডাঃ গণের সম্মিলিত বোর্ড্ জরুরি সভায় বসিয়া ব্যাপক যন্ত্রপাতি দ্বারা চেক করিয়া জানিতে পারেন মামার হার্টে তিন তিনটি ব্লক ধরা পড়িয়াছে। ডাঃ গণ মামাকে কঠোরভাবে আমিশ তথা মাংস খাইতে নিষেধ করিয়াছেন।
-কি বুঝলি?
-যা বোঝাতে চাইলি তাই বুঝলাম। তোর কি মনে হয়, যে লোকগুলো এখনও সৎ বা ঘুষ খায় না তারা কি সুযোগের অভাবেই খায় না?
-সবাই না। তবে অধিকাংশই। আবার এমনও আছে যারা চাকরির শুরুতে এমন সুযোগের অভাবে ঘুষ খায় নাই বা সৎ তারা পরবর্তীতে সুযোগ পেলেও আর ও পথ মাড়ায় নাই। কেননা ইতোমধ্যেই তাদের একটা আলাদা ইমেজ তৈরি হয়ে গেছে। তারা ও ইমেজটা লজ্জায় পড়েই হোক আর মূল্যবোধের কারণেই হোক তা ভাংতে পারেনি। আর কিছু আছে যারা শুরু থেকেই সৎ। তাদের মধ্যে আবার শ্রেণী ভাগ আছে। এদের কেউ কেউ উত্তরাধিকার সূত্রেই বিত্তশালী। আর কিছু তারা জন্মগত ভাবেই সৎ।
-বুঝলাম। তা তুই কোন দলে?
-আমি? জামানের শুন্য দৃষ্টির মধ্যে অনেক কথার আভাস পাওয়া গেল। আমি হয়ত একদিন ইমেজ রক্ষার দলেই ভিড়ে যাব। তোরা যারা প্রাইভেটে আছিস তারাই মনে হয় ভাল আছিস।
বুঝলাম আসলে নদীর কোন কুলেই সুখ নেই। এটা আপেক্ষিক বিষয়। নিজের মনোভাবের কথা চেপে জামানের অফিসে আবার সময় পেলে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলাম।