অস্ট্রেলিয়ায় ছোট ভাইয়ের ব্যবসা দখলে ঢাকায় বড় ভাই অপহরণ

আবদুল লতিফ রানা_সাংবাদিক
Published : 16 June 2012, 12:48 PM
Updated : 16 June 2012, 12:48 PM

আব্দুল লতিফ রানা, অস্ট্রেলিয়ায় ছোট ভাইয়ের স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশন কনসাল্টিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য ঢাকায় বড় ভাই আবুবক্কর সিদ্দিক ওরফে পলাশকে (৩৪) অপহরণ করে নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে রমনা থানায় মামলা দায়েরের ১০ দিন পর গতকাল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অফিস শেষে ৬ জুন বিকাল ৬টায় পলাশ মিরপুরের বাসায় ফেরার জন্য কারওয়ানবাজার এলাকার রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় ছিলো। হঠাৎ কয়েকজন লোক নাকে রুমাল চেপে ধরে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরদিন ৭ জুন বেলা ২ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের পাশের রাস্তায় তাকে ফেলে রাখা হয়। মুক্তির পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় মিরপুর ডেল্টা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সন্ত্রাসীদের হুমকীর কারনে তার স্ত্রীও জ্ঞান হারিয়ে প্যারালাইজড অবস্থায় এখন গ্রীণ রোড়ের সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিতসা নিয়েছেন।

সূত্রটি জানায়, মিরপুর মাল্টি প্লান রেডক্রিসেন্ট সিটির ৭/বি নম্বর ফ্যাটের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক। কারওয়ানবাজারের বিজিএমই ভবনের একটি বেসরকারী অফিসে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত। ৬ জুন বিকালে অপহরণ বিষয়ে রমনা থানায় ছোট ভাই মনির হোসেন জিডি করেন। আবু বক্কর সিদ্দিক গতকাল জানান, অপহরণের প্রায় এক ঘন্টার বেশী সময় পরে মাগরিবের আজানের সময় জ্ঞান ফিরে দেখতে পান হাত, মুখ বাঁধা। মনে হলো নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচতলার মেঝে ফেলে রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা মারধর করে বলে, অস্ট্রেলিয়ায় তোর ভাই মো. হোসেন বাবুকে বলে দে ব্যবসার সব মালিকানা পাটনার আশরাফকে বুঝিয়ে দিতে। নইলে তোর নির্ঘাত মৃত্যু এবং সঙ্গে পাঠিয়ে দেবো তোর স্ত্রী-সন্তানকেও। এরপর পুনরায় তাকে গাড়িতে তুলে অন্য জায়গার এক সিঁড়িঘরে নিয়ে পুনরায় নির্যাতন। ওই সময় বক্করের মোবাইল থেকে স্ত্রীর নম্বর নিয়ে স্বামীকে অপহরণ এবং একাধিকবার বিভিন্ন হুমকী ধমকি দিতে থাকে। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে স্ট্রোক করেন। পরে তাকে দ্রুত ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের একাংশ প্যারালাইজড হয়ে অবস্থা শঙ্কাজনক।

অপহরণকারীরা আবু বক্করকে নিজ মোবাইল থেকে অস্ট্রেলিয়া ছোট ভাইকে ফোন করতে বাধ্য করে। পরে ছোটভাই ঘটনা শুনে বড় ভাইকে মুক্ত করতে জীবনের বিনিময়ে হলেও কিংবা আশরাফ যা চায় তাই দিতে রাজী হন। এরপর আশরাফের সঙ্গে কথা বলে পলাশ মুক্তি চান। পরদিন ৭ জুন সন্ত্রাসীরা তাকে চোখ বাধা অবস্থায় খোলা মাঠে ফেলে যায়। সেখানে এক যুবক এসে মোবাইল দুটি তার হাতে দেন। এক ব্যক্তি ফোনে বলেন, তোকে ছেড়ে দেওয়া হলো, দৌড়ে চলে যা। চোখ কচলে মাঠ থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারেন, তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের পাশের মাঠে ফেলে রাখা হয়। তিনি রিকসায় শাহবাগ মোড় এবং সেখান হতে সিএনজি যোগে মিরপুর-১ নম্বর নিজ বাসায় যান। পরিবারের সদস্যরা তখনই আশংকাজনক অব¯'ায় তাকে মিরপুর ডেল্টা হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি মো. হোসেনের শ্বশুর ও আবু বক্কর সিদ্দিকের তালই মেজর (অব.) আনোয়ার হোসেন বলেন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি আশরাফুল হকের ছোট ভাই মাহমুদুল হক সাধন ঢাকায় থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিককে অভিনব কৌশলে অচেতনের পর অপহরণ করেছে। অপহরণের হুকুমদাতা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি আশরাফুল হক ও তার ছোট ভাই সাদনসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রমনা থানায় ১৩ জুন ৩৪ নম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন রমনা থানা এস আই এমাদুল করিম। তিনি জানান, ভিকটিম উদ্ধার হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।