শরিয়া আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের বিক্ষত চেতনা

দেলোয়ার জাহিদ
Published : 18 Nov 2012, 03:42 PM
Updated : 18 Nov 2012, 03:42 PM

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটা সময়োপযোগি, যুক্তিপূর্ণ ও নীতিনির্ভর বর্তমান সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা গভীর বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার দাবী রাখে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় শরীয়া আইনের কোন অস্তিত্ব নেই, কেবলমাত্র পারিবারিক আইন ছাড়া, যেখানে প্রচলিত আইনের সাথে শরীয়া বিরোধপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক, যেখানে শরিয়া আইনের স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্র ও সরকার অনাগ্রহী, সেখানে "যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বিচার বানচালে বাড়াবাড়ি করা হলে প্রয়োজনে ইসলামী শরিয়া বা কিসাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে'- মর্মে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত এ হুমকি বা যদি ধরে নেই এটি কোন প্রতীকী বক্তব্য, তারপরে ও মনে হয় আমার মতো অনেকেই এবিষয়ে চরম হতাশ হয়েছেন। এ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনাহুত আত্মঘাতি এক আঘাত এবং ফলশ্রুতিতে কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের সাবেক উপদেষ্টা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল শরিয়া আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছেন, কোন অধিকারে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের শরিয়া আইনে বিচারের কথা বলেন। এ আইনে বিচারের কথা বলার আগে সংসদে বিল আনতে হবে। সংসদে আলোচনা করে সে আইন পাস করতে হবে। তার পরেই বলা যেতে পারে যে, এই আইনে বিচার হবে। — ১৫ কোটি মানুষের দেশে হয়তো ১ কোটি লোক দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ বা খারাপ প্রকৃতির হবে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে যদি ১৪ কোটি লোক উঠে দাঁড়ায় তবে এরা টিকবে না। দেশে দুর্নীতি হবে না। এখন সময় হয়েছে, এই দুর্বৃত্ত আর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ানোর। তিনি বলেন, যুদ্ধ-দাঙ্গার মতো দুর্নীতিও মানবতাবিরোধী অপরাধ (সূত্রঃ মানবজমিন, ১৮ নবেম্ভর)

আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সহ আরো অনেকেই এবিষয়ে সংবাদপত্রে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সিপিবি সভাপতি ইসলামী শরিয়া আইনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে নেতিবাচক মনে করেন, এবং চলমান প্রক্রিয়ায় দ্রুত যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবী এবং '৭২-এর সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

অপরদিকে ধর্মভিত্তিক কিছু দল ও গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে সতর্ক ও কৌশলী বক্তব্য দিয়েছেন এবং শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যত ও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং ট্রাইব্যুনালের চলমান কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, গ্রহনযোগ্যতা, নৈতিকতা এবং বিচারমান প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন যেকোন বক্তব্য প্রদান করা এমূহুর্তে একান্তই অনুচিত এবং ক্ষতিকারক। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের আশু একটি ব্যাখ্যা প্রদান করা উচিত। যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের মাঝে কোনরূপ ভুলবুঝাবুঝি, অনৈক্য এবং পরস্পর বিরোধীতার সুযোগ সৃষ্টি না হয়।

লেখকঃ দেলোয়ার জাহিদ, রাইটস এডভোকেট, সাংবাদিক, জাতীয় সংবাদপত্রে নিয়মিত প্রবন্ধ, ফিচার ও স্তম্ভ লেখক। সাবেক সভাপতি,জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা কেন্দ্রীয় কমিটি, কুমিল্লা প্রেসক্লাব ও কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে কানাডা'র এডমোনটন সিটি নিবাসী। ফোনঃ(৭৮০) ২০০ ৩৫৯২