বিনোদনে পরনির্ভরশীলতা

দেবব্রত বিশ্বাস
Published : 22 August 2012, 06:21 PM
Updated : 22 August 2012, 06:21 PM

আমরা বাংলাদেশিরা বিনোদনের ক্ষেত্রে অনেক পর নির্ভরশীল । বিনোদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা নিজের যা তার থেকে অন্যের টার ব্যবহার অনেক বেশি করি । আমাদের বিনোদনের মাধ্যমগুলো তাই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ছে । কিন্তু তার জন্য দায়ী কে বা কারা?

প্রথমেই ধরুন টিভি চ্যানেল এর কথা । আমাদের দেশে অনেকগুলো টিভি চ্যানেল আছে বর্তমানে ২৩ টা অন-এয়ারে আছে । অথচ আমাদের দর্শকেরা ইন্ডিয়ান চ্যানেল বেশি উপভোগ করে । তবে ইন্ডিয়ান বাংলা চ্যানেল এর দর্শক এর পরিমাণটাই বোধহয় বেশি এরপরই হিন্দি ও ইংলিশ চ্যানেলের অবস্থান । বাংলাদেশের দর্শকেরা বেশিরভাগ স্টার জলসা , ই টি ভি বাংলা , জি বাংলা, রুপসী বাংলা সহ ভারতীয় চ্যানেলগুলো এবং সাথে এরা বাংলাদেশের কয়েকটি চ্যানেল ও হয়ত দেখে থাকে । যারা বাংলায় বিনোদন পিয়াসী তারা বাংলাদেশী চ্যানেল দেখে না বললেই চলে আর হিন্দি ও ইংলিশ চ্যানেলের দর্শক হলে তো কথাই নেই । অনেক দর্শককে দেখা যায় শুধুমাত্র বাংলাদেশের নিউজ চ্যানেলগুলো একটু দেখে তাও নাকি কয়েক মিনিট দেখলেই নিউজ শেষ মানে স্ক্রল পরেই কাজ চালিয়ে নেয় অনেকে । তার মানে কোনরকম নিউজ জানার জন্য বাংলাদেশের চ্যানেলে ডু মারা ছাড়া সমস্ত সময় ভারতীয় চ্যানেলে পরে থাকা । কেন এমনটি হয় ?

আমাদের দর্শকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগটা হল বিজ্ঞাপনের আধিক্য আর সময়সূচির সংগে অনুষ্ঠানের প্রচার সময় মিল না থাকা । এই কথাগুলো অনেকদিন ধরেই শুনে আসছিলাম । আজ পর্যন্ত কোন চ্যানেল ই এই ব্যাপারটা ঠিক করে উঠতে পারল না । এটা আমাদের অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে টিভি চ্যানেলের দর্শক না পাওয়ার জন্য । আমরা যেখানে নিজেদের দর্শক ধরে রাখতে পারছিনা সেখানে অন্যদের দর্শক কি আমরা পাবো ? বাংলাদেশের নিউজ প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কোন প্রোগ্রাম নাকি সঠিক সময়ে শুরু হওয়া দর্শকদের জন্য অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা অথচ ভারতীয় এই সকল চ্যানেলের দিকে তাকিয়ে দেখুন প্রতিটা প্রোগ্রাম শুরু ও শেষ এর সময় কতটা নির্দিষ্ট থাকে । তাহলে কেন একজন দর্শক কখন অনুষ্ঠান শুরু হবে কখন শেষ হবে জানা থাকা অনুষ্ঠান না দেখে কোন একটা অনুষ্ঠানের জন্য একটার পর একটা বিজ্ঞাপন দেখে যাবে? তাতে আমাদের অনুষ্ঠানের মান যাই থাকুক না কেন সেটার কিন্তু কোন দায়ভার থাকছে না । যেনতেন প্রকার একটা অনুষ্ঠান দেখলেই হল । দর্শক তো আর দেখছে না তাই এই সকল অনুষ্ঠান ভাল না খারাপ তা নিয়েও কারো মাথাব্যথা থাকছে না । আর দর্শক যে সকল অনুষ্ঠান বা নাটক দেখে থাকে তা নিয়ে সমালোচনা করে আমাদের দেশের অনেক গুনীজন থেকে শুরু করে অনেকেই আমিও করি । তার কারণ অনুষ্ঠানটি বা নাটকটি ভাল না খারাপ না জানলে তো সমালোচনা করতাম না বা করতে পারতাম না । যা দেখি তার তো ভাল মন্দ বলতেই পারব আর যা দেখিনা তা ভাল না মন্দ তা জানার কোন পথ ই তো নেই তাই তার সমালোচনাও নেই। অথচ এই সব সমালোচনা দেখে আমাদের অনেক মিডিয়াই মনে করে যে তারা ভাল আছে এটলিস্ট তাদের কোন সমালোচনা তো নেই । তারা এটুকু যে কেন ভেবে দেখেনা মানুষ তার কথা জানে না বলেই তার কথা আলোচিত হয় না ? তাই আমার মনে হয় শুধু অনুষ্ঠান বা নাটকের মান বাড়ালেই হবে না দর্শক ধরে রাখতে হলে সময়সূচী সঠিক ভাবে মেনে নির্ধারিত বিজ্ঞাপন বিরতি দিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করলে অন্তত পক্ষে কিছু দর্শক হয়ত আমাদের দেশের চ্যানেল গুলো দেখবে । আমারা সকল মিডিয়ার কাছে এটুকুই প্রত্যাশা কি করতে পারি না?

এবার একটু দেখতে চাই সিনেমার দিকে । আমাদের এফডিসি আজ মৃতপ্রায় অবস্তা । আমরা বিদেশী ছবির কপিপেস্ট দেখেছি আমাদের দেশের অনেক ছবিতে । একসময় ময়ুরী, মুনমুন আমাদের এই শিল্পটা কে তাদের মত নগ্ন করতেও দ্বিধা করেনি । আজ আমাদের দেশের হল মালিকেরা লোকসান গুনে গুনে হল গুলো ভাংগার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অথবা নিতে বাধ্য হচ্ছে । আমাদের দেশে হলউডের কিছু ছবি আসে কিন্তু বাড়ীর কাছে বলিউড এর ছবি আসে না । তা কিন্তু শুধু হলের জন্য কিন্তু টিভিতে আমরা তা ঠিকই দেখতে পাই । আমাদের চলচিত্র এর সাথে জড়িতরা তা কিছুতেই এদেশের হলে দেখাতে দিবেন না । তাতে ক্ষতি হয় নাকি আমাদের এই শিল্পের অথচ প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে পাল্লা দেবার মত সাহস এদের নাই যার ফল হল পেক্ষাগৃহ গুলোর চিরতরে হারিয়ে যাওয়া । আমাদের বসুন্ধরাতে যে সিনেপ্লেক্স আছে তার থেকে অনেক গুন বড় ছবিঘর এখনও ঢাকাতে কিছু আছে কিন্তু একদিন এই ছোট সিনেপ্লেক্স টিই হয়ত থাকবে অন্যগুল তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চিরবিদায় নেবে । আলোচিত বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে নাকি কোন টিকিট পরে থাকে না , আমার মতে এই হলটি না ভরলে বলতে হবে বাংলাদেশে সিনেমাহল জাদুঘরের বিষয় হয়ে যাওয়া উচিত । তার পরও দেখবেন এই হলে বাংলা সিনেমার থেকে ইংলিশ সিনেমা বেশি দেখানো হয় । তার মানে হল আমাদের বাংলা সিনেমার অবস্তা খারাপ থাকায় আমাদের দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা বাংলা সিনেমা দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । আমাদের দেশের মানুষ এখন আর সিনেমা হলে যায় না । হল বাঁচাতে হলে হলের পরিবেশ এর সাথে সাথে ভাল ছবি বানাতে অথবা আনতে হবে বাংলার মানুষের কাছে (উচ্চবিত্ত ছাড়া) অবোধগম্য ছবি নয় সর্বসাধারণের বোধগম্য ছবি চালাতে হবে । আর বাংলাদেশের ভাল ভাল প্রযোজনা আসতে হবে যে অন্যদের চ্যালেঞ্জ করতে পারে ভাল গল্প ভাল নির্মাণ হলে অবশ্যই বাংলাদেশিরা বাংলা ছবি আবার দেখবে সাথে সাথে ভাল কিছু নতুন মুখও আসা প্রয়োজন বলে মনে হয় ।

বিনোদনের প্রধান দুটি মাধ্যম নিয়ে একটি ছোট আলোচনা তো হল । এছাড়া আর কিছু কথা যা না বলা ঠিক হবে না বলে মনে হয় তা হল আমাদের অডিও ভিডিও বাজার। এই বাজারটা শেষ হতে চলেছে অনেকের মতে পাইরেটের হাতে । হ্যাঁ পাইরেট একটি অশনিই বটে । কিন্তু এছাড়া একটু ভাল করে দেখবেন কি দেশের বাজারে কতগুলো বাংলাদেশী সিডি আর কতগুলো বিদেশী? আমার মনে হয় এক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি । আর এ থেকে উত্তরনের জন্য আমাদেরকে আরো ভাল ভাল গান, নাটক সিডি আকারে প্রকাশ করতে হবে আর অবশ্যই পাইরেসির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে ।