যৌতুকলোভী পুরুষ বনাম নারীর অস্তিত্ব

সাঈদা খান
Published : 2 July 2011, 02:44 PM
Updated : 2 July 2011, 02:44 PM

নারী নির্যাতন, নারীর প্রতি অবহেলা, নারীকে পণ্য মনে করা এসবই হচ্ছে যৌতুকলোভী পুরুষ এবং যারা পুরুষ মা (শাশুড়ি) তাদের দ্বারা । সারাদেশে সহস্র লাখো হালিমার মত মেয়েদের কি করুণ পরিণতি ! এর প্রতিকার হয়েছে কি ?

হালিমার শরীর পুড়িয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে । চিকিৎসক বলেছেন অবস্থা সঙ্কটাপন্ন । কি অমানবিকতা ! কদর্য অন্তরের প্রকাশ ঘটানো হয়েছে এভাবে !
যে পিঁপড়াগুলোকে আমরা সামান্য মনে করি (!) তাদের গর্তেও গরম পানি ঢালতে হবে, আগুন দিতে হবে এমনটা কেউ ভাবে না । ভাবতে পারে না । সেখানে মানুষের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারা , এসিডে দগ্ধ করা !!

হালিমাদের জীবনের মর্মন্তুদ ঘটনার বিবরণ যখন আমরা পত্র-পত্রিকায় পড়ি ,তখন শিহরিত হই , ব্যথাতুর হই ,সাথে সাথে ভুলেও যাই । যেন আহা বলে কাতর হওয়াটুকুই আমাদের কতর্ব্য ।

হালিমার গায়ে কেরোসিন ঢেলেছে তার শাশুড়ি । এই শাশুড়িরা এক্ষেত্রে (পুরুষ)মা হয়েছেন । ঐ মা যখন দেখেন তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যৌতুকের জন্য অত্যাচার করে তখন তিনি নিশ্চয় (নারী)মা হয়ে ওঠেন । নাকি পুরুষ(মা) হয়ে নিজের মেয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিতে সাহায্য করবেন ! কস্মিনকালেও না । তখন তিনি সত্যিকার(!) মায়ের ভূমিকা দেখাতে থাকেন । দেখা যায় মেয়ের যৌতুকলোভী অত্যাচারী স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন , প্রতিবাদে খড়গহস্ত হন। কেন এই স্ববিরোধী ও দ্বৈত স্বভাব ? মা তো মা-ই । পুত্র ও পুত্রবধূ দু*জনের জন্যেই কেন ঐ মায়েরা *মা* হতে পারেন না । মা যে সকলের । এ নামের ব্যাপৃতি তো বিশাল । মায়ের বুকে মাথা রাখলে কে না নিরাপদ বোধ করে না ।

হালিমার মত মেয়েরা কেন (শাশুড়ি)মায়ের কাছে নিরাপত্তাহীন ? হালিমার স্বামী(ইমন) ও শাশুড়িদের মত দুর্বৃত্তকে চরমতম শাস্তি দেয়া এতো কঠিন হয়ে পড়ে কেন ? এরা সমাজের সামান্য(!) কীট । এই কীট-পতঙ্গদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের এতো বেগ পেতে হয় কেন ? এদেরকে এতো ভয় কিসের ?

মাত্র তেইশ বছর বয়সে হালিমাকে যৌতুকের বলি হতে হলো । এই বয়সে এখন অনেক মেয়েরই বিয়ে হয় না । এতো অল্প বয়সেই যৌতুক নামক গুপ্ত ঘাতক তাকে নিঃশেষ করে দিলো ! যে মা উদ্যোগী হয়ে ছেলেকে সহজে অন্যায়ের পথে যেতে দেয় তাকে আমরা কোন ধরনের নারী বলব ? যে নারী স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য ছেলেকে পাশবিক অত্যাচার করতে সাহায্য জোগায় , তাকে যদি কঠোর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়া হয় তবে সমাজের অন্তরালে অনেক মাদকসেবী যৌতুকলোভী সন্তানের জন্ম হবে । বার্ণ ক্লিনিকে হালিমা আছে বলে তার পাষণ্ড স্বামী প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি দিচ্ছে । হালিমার আড়াই বছরের অবুঝ কন্যাশিশুকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন তারা । একেতো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ তার ওপর উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত , এ কি সম্ভব ?

ইমনদের মতো যৌতুকলোভী মানুষরূপী নেকড়ে জানোয়ারকে এবং তাকে সাহায্যকারী যেই হোন না কেন তাকেও আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করার দাবীতে কারো চোখ বুজে থাকার সুযোগ নেই ।

আমরা দেখতে চাই সারাদেশে ইমনদের মতো যত দুর্বৃত্ত আছে তাদের হাত আইনের হাতের চেয়ে লম্বা নয় ।
দ্রুত সুস্হ হয়ে উঠুন হালিমা । শুভ কামনা আপনার ও আপনার কন্যাশিশুর প্রতি ।