হোমিওপ্যাথি দ্বারা ডায়াবিটিস সদৃশ অসংখ্য অটোইমিউনিটি জনিত আত্মঘাতী রোগের চিকিৎসা

ডাঃ এস এন রশীদ
Published : 12 March 2015, 03:45 PM
Updated : 12 March 2015, 03:45 PM

অটোইমিউনিটি কী?
প্রথমে আমাদেরকে বুঝতে হবে অটোইমিউনিটি কী।
মানুষের দেহে প্রয়োজনীয় অসংখ্য উপাদানের মাঝে মিশে থাকে ক্ষতিকর জীবাণূ সদৃশ অনেক পদার্থ। দেহের রোপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ঐসকল প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে বাছাই করে কেবলমাত্র ক্ষতিকর উপাদানগুলোকেই ধ্বংস করে থাকে। এভাবে দেহের আভ্যন্তরীন পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে পারলেই মানুষ সুস্থ থাকতে পারে। অন্যথায় মানুষের দেহযন্ত্রগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিন্তু দেহকে পরিস্কার রাখার এই কাজটি করতে গিয়ে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি ভুল করে উপকারী উপাদানগুলোকে ক্ষতিকর উপাদান ভেবে ধ্বংস করতে শুরু করে তাহলে অত্যন্ত মারাত্মক এক ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। যার নাম অটোইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আত্মঘাতী ক্রিয়াজনিত রোগ। এধরনের রোগের মধ্যে ডায়াবিটিস টাইপ-১, একটি অতি সুপরিচিত রোগ। এই রোগের বেলায় দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইনসুলিন নামক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন জাতীয় উপাদানকে ধবংস করে ফেলে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে রোগ জর্জরিত দেহ নিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে।
এমনি আরেকটি রোগের নাম সিস্টেমিক লুপাস এরিথিমেটোসাস বা এসএলই। এটি ডায়াবিটিসের চাইতেও ভয়ংকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এসকল অটোইমিউনিটি জনিত রোগের একমাত্র চিকিৎসা হিসাবে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অথচ ইমিউনোলজি বা রোগপ্রতিরোধ বিদ্যার সঙ্গে হোমিওপ্যাথির যৌথ প্রয়োগের দ্বারা দেহকোষের গভীরের এরকম একটি বিশৃংখলাকে নিয়ন্ত্রণ করে আরোগ্যের কাজটি সাধন করা সম্ভব।

বিষয়টি বুঝতে হলে ইমিউনোলজি বিজ্ঞানের আর একটি কথাকে বুঝতে হবে। দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যে কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকারী উপাদানকে জীবাণুর মতো ক্ষতিকর বলে ভেবে থাকে তার নাম হচ্ছে মলিকিউলার মিমিক্রি। ক্ষতিকর এবং উপকারী দুটি উপাদানের বার্হ্যকি গঠন যদি একই রকম হয় তাহলে দেহের প্রতিরক্ষা বাহিনী (বি এবং টি সেল) ভুলক্রমে উপকারী উপাদানকে ক্ষতিকর বলে ভেবে বসে এবং উপকারী উপাদানগুলোকে ধ্বংস করতে শুরু করে। এরকম একটি ভ্রান্তিমূলক কাজ তখনই ঘটে থাকে যখন দেহের ভিতর ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানের পরিমান খুবই বেশী পরিমানে জমে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রক্রিয়া দেহের ভিতর বিষাক্ত উপাদানকে যদি অধিক মাত্রায় জমা হতে না দেয় তাহলে উপরোক্ত বিভ্রান্তি ঘটতে পারে না।

মানুষের দেহে ইনসুলিন নামক একটি পদার্থ তৈরী হয়, যার দ্বারা মানুষ ডায়াবিটিস রোগ থেকে মুক্ত থাকে। মানুষের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কখনো ভুল করে ইনসুলিনকে জীবাণু সদৃশ ক্ষতিকর উপাদান ভেবে ধ্বংস করে ফেলে। যার ফলে সৃষ্টি হয় ডায়াবিটিস টাইপ-১ নামক রোগ। আরো অনেক কারণের মধ্যে এটি ডায়াবিটিস রোগের একটি প্রধান কারণ। দেহে এরকম ভুল তখনই ঘটে থাকে যখন কোন জীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করে ঐ ইনসুলিন কণাগুলোর সঙ্গে লেগে থাকে। তখন দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ঐ সকল জীবাণুকে মারতে গিয়ে জীবাণুর সঙ্গে সঙ্গে ইনসুলিন কণাগুলোকেও মেরে ফেলে। উদাহরণস্বরুপ- কোন দেশে সন্ত্রাসীদেরকে দমন করতে গিয়ে দেশের রক্ষিবাহিনী সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি অবস্থানরত নিরিহ জনগোষ্ঠিকেও মেরে ফেলে। শত্রুকে ধ্বংস করতে গিয়ে ভুল করে দেহের প্রয়োজনীয় উপাদানকে ধ্বংস করার নাম হচ্ছে অটোইমিউনিটি বা আত্মঘাতী ক্রিয়াজনিত রোগ। এই প্রক্রিয়ার ফলেই সৃষ্টি হয় ডায়াবিটিস নামক রোগ। শুধু ডায়াবিটিস নয়, এমনি শত শত অটোইমিউনিটিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে কারণ কোন এ্যান্টিবায়োটিক দ্বারাই ঐসকল রোগজীবাণুকে প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে পৃথক করে ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র ডায়াবিটিসকে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে রোগকষ্ট সহকারে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কাজ হচ্ছে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পরিচালিত করে দেহে বসবাসকারী জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করা। এই দিক দিয়ে এন্টিবায়োটিক ওষুধের সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে। এন্টিবায়েটিক নিজেই জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেহের রক্ষিবাহিনীকে ব্যবহার করে জীবাণু ধ্বংসের কাজটি সম্পাদন করে থাকে। হোমিওপ্যাথির এই বিশেষ গুণটির কারণে এর কার্যক্ষমতা এ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানের চাইতে শ্রেষ্ঠতর। এ্যালোপ্যাথি বিজ্ঞানে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক অল্পসংখ্যক কিছু নির্দিষ্ট জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার সীমাহীন শক্তিকে ব্যবহার করে এক সঙ্গে বহু ধরনের জীবাণু এবং ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে। শুধু তাই নয় একই সঙ্গে অবস্থানকারী জীবাণু এবং দেহের প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহের মধ্য থেকে বাছাই করে শুধুমাত্র ক্ষতিকর উপাদানসমূহকে ধ্বংস করার কাজটিও করতে সাহায্য করে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ, যা কোন ক্রমেই এ্যালোপ্যাথিক বিজ্ঞানের দ্বারা সম্ভব নয়।

হোমিওপ্যাথির এই কর্মক্ষমতাকে বুঝতে হলে তার আরোগ্য ক্রিয়াকে বুঝতে হবে। সুস্থ দেহের উপর পরীক্ষা করে হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত ভেষজসমুহের দ্বারা কৃত্রিম রোগ উৎপাদনকারী শক্তিকে নির্ধারণ করা হয়। হোমিওপ্যাথির ভাষায় একে প্রুভিং বলা হয়। অসুস্থ দেহে প্রয়োগ করলে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কোন্ রোগটিকে আরোগ্য করতে পারবে তা নির্ধারণ করা হয় এই প্রুভিং নামক পরীক্ষার সাহায্যে। এভাবে প্রাণঘাতী নয় অথচ রোগ সৃষ্টি করার মতো ক্ষমতা সম্পন্ন বিষাক্ত ভেষজের দ্বারা হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়াতে অসংখ্য আরোগ্যকারী ওষুধরাজির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ- ল্যাকেসিস নামক গোখরা সাপের বিষ দ্বারা রক্তের বিষাক্ততাকে দূর করে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করা হয় হোমিওপ্যাথিতে। কিন্তু কিভাবে যে আরোগ্যের কাজটি ঘটে থাকে তার সঠিক ব্যাখ্যা আমরা প্রাচীন হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রের দ্বারা এতদিন বুঝতে পারিনি। বর্তমানে ইমিউনোলজি বা রোগপ্রতিরোধ বিজ্ঞানের দ্বারা আমরা বুঝতে পারছি যে, সূক্ষ্মমাত্রায় ব্যবহৃত সাপের বিষ মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে উত্তেজিত করে এমন এন্টিবডি সৃষ্টি করতে পারে যা সাপের বিষের অনুরূপ বিষাক্ত উপাদান, যার দ¦ারা রোগীর দেহে রক্তের বিষাক্ততা উৎপাদিত হয়েছিল, তাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। হোমিওপ্যাথির এই অভাবনীয় কর্মক্ষমতাকে এযাবত কাল আমরা সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার বা লাইক কিউরস্ লাইক নামক হোমিওপ্যাথিক নীতিমালার দ্বারা বুঝতে সক্ষম হইনি। দেহের মধ্যে বিদ্যমান জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানসমূহকে প্রকৃতি থেকে সংগৃহিত একই চরিত্র বিশিষ্ট বিষাক্ত উপাদান দ্বারা নির্মূল করার এই প্রক্রিয়াটি বিজ্ঞানী হ্যানিম্যানই আবিষ্কার করেন,যাকে আজ অবধি চিকিৎসা বিজ্ঞান সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়নি। আসলে হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞানকে বুঝতে হলে ইমিউনোলজি বা রোগপ্রতিরোধ বিদ্যাকে বুঝা দরকার, যার বিকাশ ঘটেছে ইদানিংকালে।

তাই শুধুমাত্র হোমিওপ্যাথিকে ব্যবহার করে যে কাজটি আমরা সম্পাদন করতে সক্ষম হইনি, ইমিউনোলজিকে ব্যবহার করে আমরা সে কাজগুলোকে সম্পাদন করতে পারছি। বিশেষ করে যেসব রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নন-কমিউনিকেবল বা অসংক্রামক বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে, যেমন- ডায়াবিটিসের মতো ক্যান্সার এবং লিভার, কিডনি, হৃদপিন্ড ইত্যাদির রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞান যেসকল ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা করে আসছেন, তার ফলে রোগগুলো দেহ থেকে চিরতরে নির্মূল হচ্ছে না বরং ক্রমাগত ওষুধ ব্যবহারের ফলে দেহের রোগকষ্টগুলো সাময়িকভাবে কমে যাচ্ছে কিন্তু বিষাক্ত উপাদানগুলো দেহ থেকে দূরীভুত হচ্ছে না। ঐসকল বিষাক্ত উপাদান ক্রমাগত দেহযন্ত্রগুলোর ক্ষতিসাধন করে চলছে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ দেহযন্ত্রগুলো দূর্বল হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অস্ত্রপচারের দ্বারা ঐসব যন্ত্রগুলোকে কেটে বাদ দিয়ে সুস্থ ব্যাক্তির দেহ থেকে সুস্থ যন্ত্র এনে লাগিয়ে মানুষটিকে বাচানোর চেষ্টা করছেন। উদাহরণস্বরূপ, ক্রমাগত জীবাণুর আক্রমনের দ্বারা যখন একটি কিডনি, লিভার, ফুসফুস বা অন্ত্রের একটি অংশ আরোগ্য সীমার বাইরে চলে যায়, তখন সেই যন্ত্রগুলোকে কেটে বাদ দিয়ে একজন সুস্থ ব্যাক্তির দেহ থেকে ঐ যন্ত্রগুলোকে আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে কেটে এনে জোড়া লাগানো হয় যাকে ট্রান্সপ্লানটেশন বা অঙ্গসংযোজন বলে। কিন্তু যদি দেহের ভিতর সক্রিয় জীবাণু থেকে যায় তাহলে সেই জীবাণু নতুনভাবে সংযোজিত যন্ত্রটিকেও আক্রমণ করে ধ্বংস করে ফেলে।

অথচ রোগাক্রান্ত যন্ত্রগুলোকে যখন হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দ্বারা রোগমুক্ত করা হয়, যেমন চেলিডোনিয়াম দিয়ে লিভারের রোগ, বারবেরিস ভালগারিস দ্বারা কিডনির রোগ, ডিজিটালিস, ক্র্যাটেগাস অথবা ক্যাকটাস দ্বারা হৃদপিন্ডের রোগ, থুজা অক্সিডেন্টালিস, রেডিয়াম ব্রোমাইড বা হাইড্রাসটিস দ্বারা নানাবিধ ক্যান্সার রোগকে আরোগ্য করা হয়, তখন উপরোক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলোর সাহায্যে দেহের গভীরে আশ্রিত রোগজীবাণুগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে সম্পূর্ণ মানবদেহটি একটি সুস্থ মানব দেহে পরিণত হয়। তখন আর ক্রমাগত ওষুধের ব্যবহার করে রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত মানুষটিকে রোগকষ্ট উপশম করে জীবন্মৃত অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।

বিষয়টিকে একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। একটি রোগী যখন ক্রমাগত পেটের অসুখে ভুগতে থাকে তখন চিকিৎসা বিজ্ঞান রোগটিকে আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম বলে আখ্যায়িত করেন এবং কোন চিকিৎসার দ্বারাই রোগটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা অনুরূপ অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা করে দেখতে পেয়েছি যে, আইবিএস হচ্ছে একটি অন্ত্রের যক্ষ্মা সদৃশ রোগ যাকে হোমিওপ্যাথির এ্যান্টিটিউবার্কিউলার (যক্ষ্মানাশক) ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করলেই রোগটি আরোগ্য হয়ে যায়। তেমনি মেয়েদের শ্বেতপ্রদর নামক রোগটি এবং ছেলেদের স্বপ্নদোষ বা নাইট পলিউশন নামক রোগটিও আসলে একধরনের যক্ষ্মা সদৃশ ক্ষয়রোগ। এদেরকেও হোমিওপ্যাথির এ্যান্টিটিউবার্কিউলার ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করে আরোগ্য করা সম্ভব। তেমনিভাবে বিভিন্ন লিম্ফগ্ল্যান্ডের এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার রোগগুলোকে যদিও এফএনএসি বা বায়োপসি দ্বারা পরীক্ষা করে কারণগুলোকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না, অথচ হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী চিকিৎসার দ্বারা অতি সহজে রোগগুলোকে আরোগ্য করা সম্ভব। এসব ক্ষেত্রে আসলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিতকরন বা ইমিউনোমডুলেশন প্রক্রিয়াটিকেই হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দ্বারা ঘটানো হয়ে থাকে।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ যে, এসএলই নামে একটি রোগ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হিমশিম খেয়ে থাকেন। এই রোগটিকে অটোইমিউন রোগ নামে চিহ্নিত করা হয়। আসলে এই রোগটির জন্ম হয়ে থাকে তখন, যখন বিভিন্ন রোগজীবাণু দেহ কোষের নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকার ভিতর প্রবেশ করে বাসা বাঁধে এবং ডিএনএ'র চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তখন নিউক্লিয়াস এবং ডিএনএ ধ্বংসকারী এন্টিবডি তৈরী করে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নিউক্লিয়াস অথবা ডিএনএকে ধ্বংস করতে শুরু করে।

এসএলই বা সিস্টেমিক লুপাস এরিথিমেটোসাস কিংবা ডিএলই বা ডিসকয়েড লুপাস এরিথিমেটোসাস এ দুটি রোগের বেলায় চিকিৎসা বিজ্ঞান কেবলমাত্র প্রেডনিসোলন নামক ওষুধের দ্বারা এসব রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের নিউক্লিয়াসের গভীরে লুকানো রোগজীবাণু ধ্বংস করতে গিয়ে যে আত্মঘাতী বা অটোইমিউন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় তাকে বন্ধ করে ফেলা। কিন্তু এভাবে জীবাণুকে ধ্বংস না করে কেবলমাত্র জীবাণু ধ্বংসের প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দিলে সাময়িকভাবে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় কিন্তু দেহের গভীরে সঞ্চিত রোগজীবাণুগুলো ধীরেধীরে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলোকে আক্রমণ করে থাকে। এর ফলে দুটি কিডনি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। যখন কিডনি প্রতিস্থাপনের দ্বারা রোগীকে বাচানোর চেষ্টা করা হয়।

এমনি আরেকটি রোগের নাম আইজিএ নেফ্রপ্যাথী। এটি কিডনির একটি রোগ যার শুরু হয় জীবাণু দ্বারা কিডনির নেফ্রন বা ছাকনিগুলো আক্রান্ত হলে। দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন আইজিএ নাম এন্টিবডি বা সৈন্য বানিহীকে জীবাণু ধ্বংস করার জন্য কিডনিতে পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, ঐধরনের এন্টিবডি জীবাণুকে ধ্বংস করতে গিয়ে কিডনিকেই ধবংস করে ফেলে। যখন দেহের ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যেতে থাকে যার ফলে রক্তের চাপ বেড়ে যায়। এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের হাতে তখন একমাত্র রক্তের ডায়ালাইসিস করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ডায়ালাইসিস শুরু করার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে একমাত্র প্রেডনিসোলনের ব্যবহার। অথচ হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দ্বারা অতি সহজে দেহে প্রবিষ্ট জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা যায়, যখন কিডনি আইজিএ নামক এ্যান্টিবডির আক্রমনের হাত থেকে বেচে থাকতে পারে। এমনি ধরনের আরোগ্যের প্রক্রিয়া ঘটেছে হেলেন বেগমের বেলায় ১৯৮৩ সালে যিনি এখনো সুস্থদেহে বেঁচে আছেন। শুধু চিকিৎসার সময় তার বামস্তনে একটি এবসেস বা ফোঁড়ার জন্ম হয়েছিল। যেটি ফেটে পুঁজ রক্ত সহকারে তার দেহের জীবাণুগুলো বেরিয়ে গিয়েছিল। এইকষ্টের বিনিময়ে তার কিডনি দুটো জীবাণুর আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিল। এধরনের রোগের আরেকটি নাম হচ্ছে গ্লোমেরিউলোনেফ্রাইটিস বা জিএন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এইসব রোগের চিকিৎসা একমাত্র স্টেরয়েড বা প্রেডনিসোলন দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে।

উপরোক্ত বক্তব্যগুলোকে থেকে আমরা একটি কথাকে তুলে ধরতে চাচ্ছি যে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিশৃংখলাজনিত অসংখ্য রোগের চিকিৎসার লক্ষ্যে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিষ্কৃয় রাখার যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আসছেন তার চাইকে হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহৃত সূক্ষ্মমাত্রার ভেষজের ব্যবহার মানবজাতিকে রোগমুক্ত সুস্থজীবন দান করতে পারে, যা হচ্ছে একাধারে নিরাপদ, সম্পূর্ণ আরোগ্যকারী এবং কম ব্যয়বহুল। এর ব্যবহার চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে অনেকগুণ বেশী ক্রিয়াক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলতে সক্ষম।

প্রচারে
ডাঃ এস এন রশীদ ইনোভেটর
হোমিওপ্যাথিক ইমিউনোমডুলেশন রিসার্চ সেন্টার
ঢাকা
মোবাইলঃ0119119704
ওয়েব সাইটঃwww.homeomodulation.wordpress.com