দ্বৈত আদর্শ: ঘটনা ১, ঘটনা ২ এবং ঘটনা ৩!

ইনামুল হাফিজ লতিফী
Published : 13 Jan 2013, 03:08 AM
Updated : 13 Jan 2013, 03:08 AM

ঘটনা ১:
জানতে পেরেছিলাম যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে না, এটা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলাম যে, এবারের মত আমাদের হাজার আবেগ আর কষ্টে গড়ে তোলা আজকের এই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের আমরা অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি না। কিন্তু, সেই চিন্তার গুঁড়ে বালি। আইসিসি এমনকি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে চাপ দিয়ে বলা হলো বাংলাদেশকে পাকিস্তান যেতেই হবে, যদিও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এর কোন ম্যাচ অফিশিয়াল সেখানে নাও যেতে পারে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড না কি শত চেষ্টা করেও আইসিসি এর এই নির্দেশ ফেলতে পারবে না। এই গতদিনও দেখা গেল খবরে, পাকিস্তানে বোমা হামলায় প্রায় ১২৬ জন নিহত। তাই আমার একটি সহজিয়া প্রশ্ন, আইসিসি কি লস্কর- ই- তৈয়্যাবার কোন পেইড এজেন্ট নয়?

ঘটনা ২:
প্রতিদিন বাংলাদেশের কেন্দ্র হতে আনাচে- কানাচে ধর্ষিত- নির্যাতিত- অত্যাচারিত হচ্ছে নারী। তার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই, তাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে, তাতেও সবাই বলা বেড়াচ্ছ- 'নারী তোর চলন বাঁকা'। তারপরও সবাই মিলে বললো না, এসো আমরা নারীকে সম্মান করি, এই নারীই আমাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে, আনবে আমার মত অগণিত ভবিষ্যত 'আমি' নামের মানুষটাকে। তারপরও কতিপয় প্রগতিশীল মানুষ বুঝতে পেরেছিল, প্রতিবাদের জন্য একাট্টা হয়েছিল, দাবি জানিয়েছিল ৯০ দিনের মাঝে ধর্ষকের বিচার করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। কিন্তু, মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে মানবাধিকার সংগঠন এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা দেশে দেশে ধর্ষিতার পাশে না দাঁড়িয়ে, লাফালাফি করে ধর্ষকের যেন মৃত্যুদন্ড না হয়ে মানবিক কোন শাস্তি হয় সেদিক থেকে আইনি লড়াই লড়তে। একসময় পার পেয়ে যায় ধর্ষক, বুকে সাহস সঞ্চার করে মাঝেমাঝে আরও একটা ধর্ষণ করে বসে। আমরা প্রশ্ন, এসব মানবাধিকার সংগঠন কি আসলে ধর্ষক- লুটেরা- মাফিয়াদের দালাল নয়, যেহেতু এরা এদেরকে বাঁচানোর জন্য একটি দেশের সরকারকে চাপ দেয়?

ঘটনা ৩:
তুরস্ক, ঐতিহাসিকভাবে একটি যুদ্ধবাজ জাতি। একসময় পুরো ইউরোপের ত্রাস ছিল এই তুরস্ক। এখন আবার বাংলাদেশের সরকারের কাছে বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখায় দিয়ে আবেদন করেছে যেন এদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করে দেয়া হয়। এই তুরস্কের ফার্স্ট লেডি মিয়ানমারে এই মাস খানেক আগে রোহিংগাদের উপর সেখানকার রাখাইন বৌদ্ধদের হামলার নিন্দা করে তাদের কঠোর শাস্তির অনুরোধ জানান সেদেশের সরকারকে। অথচ তুরস্কের দিকে চেয়ে দেখুন। তারা এখন পশ্চিমা রাষ্ট্রের চামচা হয়ে ন্যাটো বাহিনী সমেত হামলা চালাচ্ছে সিরিয়ায়। অভিযোগ হলো, আল বাশারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্রে করে, তারা মুসলিম অধ্যুষিত সিরিয়ায় প্রতিদিন, প্রতিটা মিনিট প্লেন থেকে বোমা ফেলে, সাঁজোয়া সৈন্য নামিয়ে গণহত্যা রচিত করছে। মুসলিম হয়ে আরেক মুসলিমকে হত্যা করছে। আমার মনে প্রশ্ন, এখন কোথায় গেল তুরস্কের মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ যা তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য দেখিয়েছে, আবার মায়াকান্না দিয়ে নটাংকি দেখিয়েছে মিয়ানমারে?

আমি তাই বলি, জারজদের মনের রং এক। হে প্রভু, মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাদেরকে এসব মনস্তাত্বিকভাবে জারজদের থেকে রক্ষা করো, বুদ্ধি আর সাহস দাও এদেরকে রুখে দাঁড়াবার, দাঁত ভাঙা জবাব দেয়ার। আরও একটা শক্তি দাও- বাঙালি'র বেশে সজোরে এদের গালে ঠাস্‌ করে থাপ্পড় মারার।