আর কত দুর্ভোগ পোহালে স্বল্প সময়ে জেলা শহর সুনামগঞ্জে যাওয়া যাবে?

এনামুল হক এনি
Published : 28 Sept 2014, 03:54 AM
Updated : 28 Sept 2014, 03:54 AM

রূপকথার গল্প আর উপজেলা ধর্মপাশা থেকে জেলা শহর সুনামগঞ্জের যাতায়াত ব্যবস্থা একে অপরের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত। এক সময় যারা দাদা-দাদীর নীল পরী, লাল পরী আর দৈত্য দানবের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতেন তাদের কাছে বর্তমানে সেই গল্প গুলোকে খুব কাল্পনিক মনে হলেও ধর্মপাশা থেকে ট্রলার বা লঞ্চ করে যে সময় সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে তাঁরা রওনা হন তখন রূপকথার ডানা কাটা পরী আর দৈত্য দানবের কথাই তাদের বেশি মনে হয়। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে যখন সুনামগঞ্জের মুখ দেখেন তখন বড়ই আক্ষেপ করে মনে মনে বলতে থাকেন 'ইস আমার যদি ডানা কাটা পরী আর দৈত্য দানবের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ থাকতো তাহলে পরীর ডানায় ভর করে অথবা দৈত্যের পিটে চড়ে ধর্মপাশা থেকে নিজের জেলা সুনামগঞ্জে ৮ ঘন্টার পরিবর্তে মুহূর্তের মধ্যেই চলে যাওয়া যেত।'

দেশে বর্তমান সরকার যখন ডিজিটাল নামক গাঙে উতাল বৈঠা নাচাচ্ছে তখন ধর্মপাশাবাসীরা এই দেশের হয়েও যুগ যুগ ধরে পূর্বের পায়ে হাটার পথ, ট্রলার বা লঞ্চে করে নিজের জেলায় যাওয়ার প্রতীক্ষায় পূরাতন বৈঠায় তরী বেয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলার সাথে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বিচ্ছিন্ন। বর্ষাকালে ধর্মপাশা গোদারাঘাট থেকে লঞ্চ বা ট্রলারে ওঠে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। তখন ধর্মপাশা বাজার থেকে রিকশায় করে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে দৌলতপুর বৌলাই নদীর ঘাট থেকে এবং অর্ধ শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মহদিপুর ঘাটে গিয়ে ট্রলার বা লঞ্চে ওঠতে হয়। এর পর দীর্ঘ ৭/৮ ঘন্টার বিরক্তিকর ভ্রমণ। যারা এভাবে সুনামগঞ্জে যাতায়াত করেন তাঁদের সময় ও অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রনাও পোহাতে হয়।

ধর্মপাশার মানুষজন বিশেষ কোনো দরকার বা অফিসিয়াল কাজ ছাড়া জেলা শহরে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। এছাড়াও এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। ওই ৭ ইউনিয়নে বর্ষাকালে যাতায়াতের জন্য ট্রলার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে যোগাযোগ আরও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তখন দূর্ভোগের অন্ত থাকে না। উপজেলাবাসী জানায়, দেশের সরকার বার বার পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবর্তন হয় না এ দূর্ভোগের। বার বার স্থানীয় সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মুখেও আশার বাণী শোনা যায় হাইওয়ে রোড, ফ্লাইওভার করা হবে। কিন্তু তাঁদের আশা আশাই থেকে যায়, দূর্ভোগের কোনো পরিবর্তন হয় না। অথচ স্থানীয় সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধিসহ নেতাকর্মীদের চেহারা ও তাদের জামার পকেটের আকার আকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন হয় বলেও জানান তাঁরা।

নির্বাচনে পাশ করার পর জন প্রতিনিধিদের হাওরবাসীদের উন্নয়নের আশার বাণী হাওরের জলে হাবুডুবু খায়। জন প্রতিনিধিদের যদি সুনামগঞ্জে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে উনারা স্পিডবোর্ডে গায়ে হাওয়া লাগাতে লাগাতে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যান। হাওরবাসীর আশার কথা এখানেই শেষ। তখন হাওরবাসীর করার কিছুই থাকে না। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের ধর্মপাশা উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক জনগণের নীরব ক্রন্দন কারও কানে পৌঁছায় না।  আর কত দূর্ভোগ পোহালে স্বল্প সময়ে জেলা শহর সুনামগঞ্জে যাওয়া যাবে- এমন প্রশ্ন এখন ধর্মপাশা উপজেলার হাওরাঞ্চলের প্রতিটি মানুষের মনে।

এনামুল হক এনি, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ