মিডিয়ার কর্তৃত্ব, প্রতিমিডিয়ার মধ্যস্বত্বভোগিরা

ফকির ইলিয়াস
Published : 16 August 2011, 04:50 AM
Updated : 16 August 2011, 04:50 AM

নিউইয়র্ক থেকে এখন অনেকগুলো ফ্রি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। সাপ্তাহিক দর্পণ, দেশবাংলা, বাংলা টাইমস, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক বর্ণমালা, সাপ্তাহিক আজকাল,সাপ্তাহিক দেশকন্ঠ, সাপ্তাহিক বিদেশ বাংলা এর মাঝে অন্যতম। এই কাগজগুলোর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩২ থেকে ৭২ পর্যন্ত। এগুলো নিউইয়র্কের বাঙালী মালিকানাধীন গ্রোসারি, বিপনিবিতান, মসজিদের করিডোর, রেস্তোরা, বিভিন্ন জনবহুল স্পটে রেখে যাওয়া হয়। প্রকাশের দিনই কাগজগুলো হাতে হাতে চলে।

যেহেতু বিক্রেতারা বিক্রী করে কোনো কমিশন পান না, তাই তারা এসব কাগজ নিয়ে মাথা ঘামান কিছুটা কম।
অন্যদিকে নিউইয়র্কে দেড় ডলার দামে বিক্রী হয় সাপ্তাহিক ঠিকানা । এই কাগজের পৃষ্টা সংখ্যা সপ্তাহে – ১৩২ থেকে ১৫২। ঢাউস সাইজের কাগজটি বহির্বিশ্বে একটা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও এখান থেকে – সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, সাপ্তাহিক এখন সময়, সাপ্তাহিক পরিচয় ও সাপ্তাহিক বাঙালী – বের হয় নিয়মিত। এগুলোর পৃষ্টা সংখ্যা ৬৪ থেকে ৭২ । এগুলো বিক্রী হয় এক ডলার দামে।

বাংলাদেশের মতো বিদেশেও মিডিয়া , বিশেষ করে পত্রিকা প্রকাশ করার, পত্রিকার মালিক হবার একটা হিড়িক পড়েছে। এর কারণ কী ? কেন এই প্রতিযোগিতা ? এ প্রশ্ন গুলো আমাকে বেশ ভাবায়। বিদেশে দেখছি, ফ্রি এই কাগজগুলো সম্পূর্ণই বিজ্ঞাপন নির্ভর। তারা পুরোই পরিচালিত হন পাতায় পাতায় বিজ্ঞাপন ছেপে। হাঁ, এই সময়ে তা একটা ব্যবসাও বটে। এই যে মুনাফা লাভের ব্যবসা, মূলতঃ সেটাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মিডিয়া জগত। তা দেশে কিংবা বিদেশেই হোক।

মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ আইন, কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই শুভ নয়। আমরা জানি 'নিউইয়র্ক টাইমস' এর মতো কাগজে 'সকল সংবাদই ছাপার যোগ্য' এমন একটি কথা থাকলেও এই কাগজও সকল খবর ছাপে না। বিশেষ করে তাদের সমর্থিত গোষ্টী, গ্রুপ, এর বিপক্ষের অথবা স্বার্থ বিরোধী যদি হয়। তাহলে 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা' কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এমন আপ্তবাক্যের মানে কী ?
মানে কিছুই নেই। আইওয়াশ এখন হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বেই কিছু কিছু মিডিয়ার মূল ঢাল-তলোয়ার। বাংলাদেশে তো বটেই, বিদেশেও এই কাজটি কড়ায় গন্ডায় রপ্ত করছেন কিছু কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা। তাদের আয়কর রেয়ায়েত কিংবা রুটি রুজির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন মিডিয়া ব্যবসাকে।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখবো,কিছু কিছু মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণকারীরা বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য মিডিয়ার মাধ্যমেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করছে। প্রায় একই কাজটি করছে জঙ্গীবাদী, মৌলবাদী গ্রুপগুলোও।

বর্তমানে যে মনস্ত্বাত্বিক হামলা চালানো হয়, এর সূচনা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে। এরপর সময়ের সাথে প্রচারের ধরন ও কৌশলে পরিবর্তন এসেছে ব্যাপকভাবে।ইন্টারনেট, ব্লগ, টিভির প্রতি ঘন্টার ব্রেকিং নিউজ এর নতুন সংযোজন। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে পাশ্চাত্যে হাজার হাজার রেডিও-টিভি চ্যানেল চালু হয়েছে। ইন্টারনেট আবিস্কৃত হবার পর মনস্তাত্ত্বিক হামলা আরও বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেমন ওসামা বিন লাদেন রেডিও ভাষণ দিয়েই তার মতবাদীদের চাঙা করে রেখেছিলেন।বিভিন্ন লক্ষ্য হাসিলের জন্য মিত্র,শত্রু ও নিরপেক্ষ গোষ্ঠীগুলোর আচার-আচরণ, আগ্রহ, অনুভুতি ও চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রচার যন্ত্র ও অন্যান্য মাধ্যমকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিখুঁত ভাবে ব্যবহারের নামই হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ বৃহৎ গণমাধ্যম পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে এসব দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। যদিও তারাও বলছে , তাদের দেশে মিডিয়া পুরোপুরিই সরকারি প্রভাবমুক্ত !

।।দুই।।
ফিরে আসি আবার নিউইয়র্ক প্রসঙ্গে। এখানে মূল্যে বিক্রীত কোনো কাগজে একটি বিজ্ঞাপণ ছাপা হলে , ফ্রি কাগজগুলো পরদিনই ঐ বিজ্ঞাপণদাতার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তাকে তারা বার বার ফোন করে। ' ভাই , অমুক কাগজকে বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন, আমাদেরকেও দিতে হবে।' শুরু হয় বোঝাপড়া। বিজ্ঞাপণ এর মূল্য নির্ধারণ। বিপত্তি যে নেই – তা নয়। কেউ বিজ্ঞাপণ না দিলে তার উপর , তার ব্যবসা প্রতিষ্টানের উপর খড়গও নেমে আসতে পারে ঐ মিডিয়ার পক্ষ থেকে। তাই বিজ্ঞাপণদাতা কিছুটা ভয় নিয়েই বিজ্ঞাপণ দেন স্থানীয় কাগজগুলোতে। প্রবাসে, এই যে মিডিয়াপেশী দেকানোর মানসিকতা তা অনেককেই হজম করতে হয়েছে, হচ্ছে। এই যে জিম্মি করে রাখার প্রচেষ্টা , তা এসে পড়েছে বিদেশেও। অন্যদিকে নিউইয়র্কে কিছু মিডিয়া মালিক আছেন যারা অন্য পেশায় মোটা অংকের ডলার কামাই করেন। তাদেরকে বড় এমাউন্ট আয়কর দিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারকে। তাই তারা 'পত্রিকা প্রকাশের খাত' অলাভজনক কিংবা ক্ষতি হচ্ছে –এমনটি দেখিয়ে আয়কর রেয়ায়েত নেন। ঘরের ডলার ঘরেই থেকে গেল। আর তা দিয়ে কম্যুনিটিতে করা গেল কিছুটা তুঘলকি ! আপাততঃ এই আইডিয়া ও উদ্দেশ্য নিয়েই নিউইয়র্কে চলছে মিডিয়াসেবা।

এই যে মিডিয়া দিয়ে দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ চেষ্টা এর মদদ আসছে কীভাবে ? সেদিকে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরা যাক মিডিয়া মোগল রুপার্ট মার্ডক এর কথা। রুপার্ট মার্ডক এমন একজন মিডিয়া সম্রাট-যাকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মার্কিন মুল্লুক এবং ব্রিটেনে প্রনীত হয়েছে বিশেষ আইন। একজন ব্যক্তি একটি দেশের মিডিয়া জগতের কতটুকু মালিক হতে পারবেন-তার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে এই আইনে। রুপার্টকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। তিনি রাজনীতি করেছেন রাজনীতিকদের সঙ্গে। আর তিনি গণ মাধ্যমের প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন সীমাহীন প্রভাব প্রতিপত্তি।

রুপার্ট মার্ডকের জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়, ১৯৩১ সালে। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি মালিক হন পৈত্রিক ছাপাখানা বাণিজ্যের। তারপর আর থেমে থাকেনি তার অগ্রযাত্রা। আকষ্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ছিল তাঁর মিডিয়া জগতের মাত্র ক্ষুদ্র একটি অংশ। আধুনিক বিশ্বের সাংবাদিকতার জৌলুস এবং প্রভাব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনন্য রেকর্ড। ইয়েলো জার্নালিজমের জন্যও তিনি কখনো কখনো নিন্দীত হয়েছেন প্রচন্ডভাবে। যে ব্যক্তি গণমাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকতাকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে তুলে এনেছেন-তিনি এখন নিজেই শিরোনাম হয়েছেন বিশ্ব মিডিয়ায়।টেলিফোনে আঁড়িপাতা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৃটেন ও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায়, তার মালিকানাধীন 'নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড' ১৬৮ বছরের পুরোনো এই পত্রিকা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে সম্প্রতি।
বাংলাদেশেও মিডিয়া এখন একটি বিশেষ শক্তি। কর্পোরেট ব্যবসা এতোটাই ক্ষমতা রাখছে, যার ফলে অনেক অনিয়মই হয়ে উঠছে নিয়ম। অনেক অপশক্তিই হয়ে উঠছে অন্যতম ত্রাতা। আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণ ও প্রচারণার ভাষা দেখলে নিয়মিত গা শিউরে উঠে ! বাহুমূলে ডিওডরেন্ট ব্যবহারের কৌশল-প্রণালী অথবা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ন্যাকামি দেখলে মনে হয় আমাদের সমাজ ও সভ্যতা, অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যেতে আর কত বাকী ! আর মিডিয়া দিয়ে দাপট তৈরির অন্য পৃষ্টাটি হচ্ছে , রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে মিডিয়ার ব্যবহার। প্লট এবং ফ্ল্যাট ব্যবসার নামে নদী, শ্মশান, গোরস্থান, সবই দখলের যে চেষ্টা বাংলাদেশে চলছে, তার রক্ষক হিসেবে মিডিয়াকে রাখা হচ্ছে কবচ হিসেবে। এটা কারা করছে ? এদের পরিচয় কী ? তা সরকার ও জনগণের অজানা নয়।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখন সাড়ে পনেরো কোটি। সেই দেশে দশ লাখ দৈনিক ছাপা হয় কিংবা চলে – এই বলে বড়াই করে দেশের 'সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক' টি। সত্যি কী সেলুকাস !

।।তিন।।
এবার আসা যাক আরেকটি প্রসঙ্গে। আমরা মিডিয়ার বিবর্তন চাইছি। মিডিয়ার নিরপেক্ষতা চাইছি। এই চাওয়ায়,মিডিয়ার সমান্তরালে বিকল্প মিডিয়া বা প্রতিমিডিয়া আমরা কোন গুলোকে বলবো ?
ইন্টারনেট ২৪ ঘন্টার সংবাদমাধ্যম এখন একটি চলিষ্ণু, আলোচিত সংবাদ মাধ্যম।ব্লগ, ফেসবুক, গুগলপ্লাস, টুইটার,ইত্যাদি ইন্টারনেট ভিত্তিক মিডিয়ার প্রসারও আমরা দেখছি খুব দ্রুত। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে সংবাদপত্রের প্রভাব কমবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

মানুষ সবকিছু তাৎক্ষণিকভাবে দেখে ফেলছে। জেনে যাচ্ছে। তাই সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখা সংবাদ পরদিন সংবাদপত্রে দেখলে তা তো বাসি ,ফ্যাকাশে মনে হবেই। অতীতে যা সংবাদপত্রে তরতাজা খবর ছিল এখন তা ইলেকট্রনিক মিডিয়া চ্যানেল টেলিভিশনে চলে এসেছে। তারপরও, প্রতিদিন ভোরে একটি দৈনিকের পাতায় চোখ বুলাবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি পাঠক। তাই প্রিন্ট মিডিয়া , ছাপা মিডিয়ার পুরোপুরি বিকল্প – তা বলা যাবে না।

আমরা দেখছি, কোনো কোনো ইন্টারনেট ভিত্তিক বাংলা মিডিয়া প্রচার করছে, " আপনি যদি প্রতিদিন কাগজের দৈনিক পড়েন – তাহলে জেনে রাখুন আপনিও গাছ কাটছেন ! কারণ গাছ থেকে কাগজ তৈরি হয় ! " এটাও এক ধরণের বানিজ্যিক প্রচারণা মাত্র।

উন্নত দেশগুলো যদি শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিক নির্ভর হতো , তাহলে বিশ্বের অনেক দেশেই, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে সংবাদপত্র উঠে যেতো। কারণ ওইসব দেশে টিভি চ্যানেলের ছড়াছড়ি, সেই তুলনায় আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা অনেক কম। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও টিভি চ্যানেলের ছড়াছড়ি। পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, ভারতে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক চ্যানেল রয়েছে। অথচ সেই ভারতে সংবাদপত্রের পাঠকসংখ্যা হ্রাসের পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে এ সংখ্যা বাড়ছে না। দশ লাখ পাঠক নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে নবীন-প্রবীণ দৈনিক গুলো। বাংলাদেশে মিডিয়া হাউস তৈরির যে হিড়িক পড়ছে, তাতে কিছু সিনিয়র সাংবাদিক না না রকম বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু উঠতি, তরুণ, শিক্ষানবিশ সাংবাদিক-সংবাদকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে হাড় ভাঙা খাটুনি দিয়ে। এর মাঝেই আমরা বেশ কজন প্রতিশ্রতিশীল সংবাদকর্মীকে হারিয়েছি। এই যে বিয়োগব্যথা তা উপশমে মিডিয়া হাউসগুলো কী কী করতে পারে তাও ভেবে দেখা দরকার।

আমরা দেখছি , নতুন অনেক মিডিয়ার জন্ম হলেও, গেল দুই দশকে বেশ কিছু সাংবাদিক নেতার জীবনমানের ধারা রাতারাতি বদলে গেলেও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার উন্নয়ন হয় নি। বরং অবনতি হয়েছে। এ অবনতির কারণ সংবাদপত্রকে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রভাব-প্রতিপত্তির হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলা। এ সময় অধিকাংশ পত্রিকায় পেশাদার সম্পাদকের পরিবর্তে আমরা দেখেছি মালিক-সম্পাদক। নয়তো আজ্ঞাবাহী কুশীলব সম্পাদক পদ দখল করে আছেন। যা কোনো দেশ, জাতি, সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়। মঙ্গলজনক নয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ সাধনেও।

বলা খুবই দরকার, সাংবাদিকতার নামে জিম্মি করে রাখা, ভয় ভীতি দেখানো, টোপে ফেলে দেয়া, ব্ল্যাকমেইলিং করা – এমন হীন কাজও করছে 'সাংবাদিক' নামধারী কিছু মানুষ। আশার কথা এরা অতীতেও টেকে নি , ভবিষ্যতেও টিকবে না।

তবে বলে নিতে চাই , কিছু কালো টাকার মালিকরা ' আমি খাবো- তুমিও খাও' এমন নীতির সর্দারি করে এমন কিছু ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করেছেন এবং করছেন তো বটেই। আর ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লগগুলোর মাঝে রয়েছে আরেক ধরনের তস্করবৃত্তি। সেখানে অনেকেই 'ছদ্মনামে' ৩০/৪০ টি একাউন্ট খোলে যাচ্ছেতাই লেখালেখি করে। ব্লগে যেহেতু অন্যের লেখায় মন্তব্য করা যায়, তাই সংঘবদ্ধভাবে এরা হামলে পড়ে অন্য সৃজনশীল কোনো লেখকের উপর। এদের অধিকাংশরাই ক্রিয়েটিভ কোনো মন্তব্য করে না, করতে চায় না। তাছাড়া রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্টার নগ্ন প্রচেষ্টার নামে এরা কেউ কেউ মহান মুক্তিসংগ্রাম, জাতিসত্তা, জাতীয় সংস্কৃতিকেও কটাক্ষ করতে কসুর করে না। ফেসবুক, ব্লগ এমন কিছু কথিত বিক্ল্প মিডিয়া' তাই হয়ে উঠছে কাদা ছুড়াছুড়ির অন্যতম প্লাটফর্ম। যা বেদনাদায়ক , লজ্জাজনক। কেউ কারো বিপক্ষে কিছু বললে তাকে ইমেলে 'ভাইরাস' পাঠিয়ে আক্রমণও করা হচ্ছে । প্রতিমিডিয়ার এই মধ্যসত্ত্বভোগিরা নিজেদের নাম-পরিচয় গোপন করে কর্দমাক্ত করছে ভার্চুয়াল জগতকে। কথায় প্রচলিত আছে, মিডিয়া তিলকে তাল করতে পারে। এই মিডিয়া জগত এখন খলনায়কদের স্বর্গরাজ্য। দেশে – বিদেশে । রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, অর্থনীতি সবই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কিছু মিডিয়া মালিক। পাঠক-পাঠিকাকে সত্য খুঁজতে হবে। সত্যের পক্ষে থাকতে হবে। কারণ বিবেচনাবোধই পারে সামাজিক সকল অপশক্তিকে তাড়াতে।

***
ফিচার ছবি: আন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত