অনুভব আহমেদ: কোনো শব্দে তুমি নাই

অনুভব আহমেদঅনুভব আহমেদ
Published : 2 Sept 2011, 03:43 AM
Updated : 31 Dec 2021, 07:42 PM


চিত্রকর্ম: সালবাদর দালি

কোনো শব্দে তুমি নাই

কেনো শব্দে তুমি নাই, কোনো শব্দে তুমি নাই
এইসব সারাদিন অর্বাচীন হয়ে যায়
দোলো হাওয়ায়, দোলো মায়ায়
যেনো সমস্ত জীবন যাতনায়, আমি হায়, কেবলই হায় হায়
বিষাদ হুইপারে, তীর্যক স্নাইপারে, আহা নৃত্য তটিনীর

চোখ ভেসে যায় বিস্তীর্ণ দোহাইয়ে
কেনো ধর না হাত বিসমিল্লাহর সানাইয়ে

নৃত্য, নৃত্য, আত্মা ভেঙে চুরমার, পেঁপের ভেতর পাঁকছে হাহাকার
নৃত্য, নৃত্য, কেনো উল্লাস ছারখার, কেনো অন্তর বেকাকার

কেনো হুকুমে আমি নাই, কোনো হুকুমে আমি নাই
পালন করে যাই, পালন হয়ে যাই

আহা, নৃত্য, নৃত্য, এতো বেসামাল, হীন হাওয়া ভেঙে ফেলে দ্বার
আহা নৃত্য, নৃত্য, জাগে অঙ্কার, গ্রামের সীমারেখা চিড়ে চারধার।

হেনস্তা, তোমাকে বাসি ভালো

যেকোনো হেনস্তার পর দেখেছি রোদ উঠে গেছে
গাছের গায়ে খেলছে আলো
যেকোনো হেনস্তার পর দেখেছি তুমি-আমি
দৃঢ়, হাওয়া বইছে অমলিন

খুলে খুলে মাংস মেদ, ভাঁড়ার ক্লান্ত পীড়ায়
জীবনে বহমান যাপনের কুজ্ঝটিকায়

বঞ্চনার রোদ ঠেলে আলো এসে লাগে
মাংস শ্বাসে হাঁপিয়ে ওঠা প্রদেশে
রোদ ঠেলে আলো আসে তবু
ঋতুর নিনাদ ঘিরে ফুলের কলমকারীতে

যেকোনো হেনস্তার পর যেনো রোদ উঠে যাবে
অন্ধ কুটির পাড়ের ভাঙা ছাউনিতে
যেকোনো হেনস্তার পর জেনো আমি আছি
পথ সঙ্গী করে তুমি যেতে পার বহুদূর।

রাতের অভিধান জুড়ে অন্তর্গত নিনাদ

শুয়ে আছি গভীর রাতের তলায় শরীর নিংড়ে
জীবন থাকে দাঁড়িয়ে বাইরে,দরোজায়
ব্যথা, সে এক পক্ষপাতদুষ্ট দানব
ভেঙে ফেলে মর্তের সমস্ত ঘুম,জেগে উঠি আমি
এই গভীর রাতের তলায়,
বোধের আচকান খামচে বাজে মানুষের অন্তর্গত নিনাদ।

রোজ রাতের গভীর তলায় আমাকে ভর করে পিঁপড়ে হেঁটে যাই,শুয়ে থাকি কদর্য আমার ভেতর
বুক থেকে উঠে দাঁড়ায় কুকুর, দুপায়ে হেঁটে যায়
যেদিকে বনের মর্মরে বয়েস জড়োসরো
যেদিকে অনন্ত হিমে তুমিও একাকী

বাজার ভর্তি বাজারের মূর্ছনায়,
মাছের আড়তে বটিতে ভাগ হওয়া পেটির মত দ্বিখণ্ডিত সত্ত্বায়
শুয়ে থাকি সবজিতে ধরা পচনের অনিবার্যতায়।
শুয়ে থাকি জলে, অতলান্ত

ভীমরুলের চাকে ছোড়া শিশুর ঢিলের ভঙ্গিমায়
জীবন ছুঁড়েছে আমাকে আঁকাবাঁকা, সর্পিল বহুমাত্রিকতায়
আমি শুয়ে থাকি, জেগে ওঠে ঘুম, আমাকে ছিঁড়ে মানুষের অভিধান
রাতের করতল পূর্ণ করে হেসে ওঠে অন্তনিনাদ।

তোমার আমার মাঝে

সন্ধ্যা হল বলে –
তিড়িং বিড়িং বাছুর ছানা মায়ের পেছন ছুটে
তুমি আমি শুয়ে আছি ধানী রঙের মাঠে
সন্ধ্যা হল বলে…..

ক্ষিপ্র কোনো স্বপ্ন দেখে ঘরে ফেরা রাখাল
তার চোখে তাকিয়ে নদী জুড়ে কিনার
তুমি আমি শুয়ে আছি অতল জলের ঢেউয়ে
স্বপ্ন দেখব বলে…

দুঃখ হলে পরে –
পাখিরা সব উড়তে গেলো দূরের কোনো বনে
তুমি আমি কোথায় যাব,সমাহিত হয়ে আছি
সভ্যতার জালে…..
ছুঁয়ে দেখো –
বাজছে বাঁশি তোমার আমার মাঝে
ভীরু শাখা ধীর বায়ে নাচে, ছুঁয়ে দেখো
একই শরীর কাঁদছে তোমার আমার মাঝে।

চলে যেতেই যত আয়োজন

তুমি ডাকছো –
গেরস্থালি সারাদিন পড়ে আছে উঠোনে
উড়ে যাওয়া পাখির পালক ছড়িয়ে চাতালে
ট্রেনে ভেজা শহর দৃ‌ষ্টিকে বাড়িয়ে
কদমের ডাল চুমু খায় ফুলেরে

তুমি ডাকছো –
স্কুল ছুটির ঘন্টা আর কৈশোরে
প্রথম প্রেমে করা ভুলে সাদরে
গোপন তিলে রাখা নিষিদ্ধ বায়োস্কোপে
গাছ ঝুঁকে থাকা ব্যথার ল্যান্ডস্কেপে

তুমি ডাকছো –
তোমার পরাণ গভীর কাঁপা দ্বিধায়
ফিরিয়ে দেবে অবলীলায়
সাজিয়ে সারাদিন তোমার সংসার
যেতে হয় চলে সে এক অন্য পারাপার