বিজয়ের উনপঞ্চাশতম বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা

মামুন আল মাহতাব
Published : 4 Feb 2012, 03:21 AM
Updated : 13 Dec 2020, 09:52 AM

সময় পেলেই ফেইসবুকে ঘোরাঘুরির আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার যে সাম্প্রতিক কালচার, আমি নিজেও যে তার বাইরে নই এ কথা অস্বীকার করার জো আমার নেই। এমনই ঘোরাঘুরি করতে গিয়েই সেদিন হঠাৎ খবরটা নজর পড়ল একটি নিউজ পোর্টালে। ক্যাপশনের নিচে একটা ছবি। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশি একজন। প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে বুঝলাম উনি এদেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত। বেচারার জন্য একটু মায়াই হলো। কী কঠিন চাকরিটাই না তার! যে দেশ থেকে নাকে খৎ দিয়ে আজ থেকে উনপঞ্চাশটি বছর আগে তাদের পাততাড়ি গোটাতে হয়েছিল, সেদেশে নিজ দেশের হয়ে দূতিয়ালি করা যে কত কঠিন এটা তার চেয়ে ভালো বোধহয় আর কারো বোঝা সম্ভব নয়।

তবে সে কারণে না, সত্যি বলতে কি খবরটা আমার দৃষ্টি কেড়েছিল একটা মৃৎপাত্রের ছবির জন্য। চমৎকার একটি মৃৎ পাত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওই ছবিটি আমার ঠিক পছন্দ হয়নি। কেমন যেন কিছুটা বিকৃতি শেখ হাসিনার অবয়বে। খবরটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম পাকিস্তানি দূত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদায়ী স্বাক্ষাৎকারে ওই জিনিসটি তাকে উপহার দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন শেষে কর্মস্থল ত্যাগের আগে সরকার প্রধানের সাথে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ সাধারণ কূটনৈতিক রীতি। এ ধরনের বৈঠকে সাধারণত ধন্যবাদ বিনিময় টাইপের কথাবার্তাই হয়। এর আগে এ ধরনের নানা বৈঠকের খবর পত্রিকায় পড়ে আমার তেমনটাই ধারণা হয়েছে। তবে এই বৈঠকটি নানা কারণে বিশেষ গুরুত্ববহ। এটি যে শুধু আমার উপলব্ধি তাই নয়, রুটিন এই বৈঠকটি নিয়ে দেশি মিডিয়া ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যে আলোচনা তা থেকেই এটি স্পষ্ট।

পাকিস্তানি অর্থপুষ্ট দেশি এবং পাকিস্তানি মিডিয়াগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নেয়ায় তার পাকিস্তানি কাউন্টার পার্ট ইমরান খানের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এসব রিপোর্ট পড়ে মনে হতে পারে এই বৈঠকটি এ দু-দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা মাইলফলক টাইপের কাছাকাছি কিছু একটা বোধহয়। তবে আসল সত্যের কিছুটা কাছাকাছি প্রতিবেদনগুলো চোখে পড়ল আল জাজিরায়। পাকিস্তানি পক্ষপাতদুষ্ট মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রীক এই আন্তর্জাতিক মিডিয়াটি বৈঠকটির পাকিস্তানি ভার্সনটি তুলে ধরার পাশাপাশি অন্য সত্যটিও প্রকাশ করেছে। আর বৈঠকটির এই প্রেক্ষাপট নিয়ে সঙ্গত কারণেই অনেক বেশি লেখালেখি আর বলাবলি ভারতের মূলধারার মিডিয়াগুলোতে। দ্য ইন্ডিয়া টুডে আর দ্য হিন্দুস্তান টাইমসের মতো নামজাদা পত্রিকা হেডলাইন করেছে বৈঠকটি নিয়ে। কারণটা সহজবোধ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকে পাকিস্তানি দূতকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের ওপর পাকিস্তানিদের যে নির্যাতন তা আমাদের স্মৃতি থেকে কখনোই হারিয়ে যাবে না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তানকে সেই অপরাধের জন্য ক্ষমাও করবে না।

বৈঠকটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন ভারতের বুদ্বিজীবীরাও। দেশটির শীর্ষস্থানীয় থিংকট্যাংক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রী রাধা দত্তের মতে এই বৈঠকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরো একবার পাকিস্তানিদের কাছে তার আদর্শিক অবস্থানটা পরিষ্কার করে দিলেন। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় ওয়ার ভেটেরান এবং বর্তমানে ভারতের নামকরা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল হর্ষ কক্কর এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির এক সময়কার হাইকমিশনার শ্রী মুচকুন্দ দুবের বক্তব্যও একই ধরনের।

কে কী বলল কিংবা লিখল সে জন্য নয়, খবরটি পড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধায় আমি আরো একবার অবনত হয়েছি অন্য কারণে। 'শেখের বেটি' বুঝিয়ে দিয়েছেন তার ধমনীতে কার রক্ত। চৌদ্দ বছরের কারাবাস, গান্ধারা ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কিংবা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব – এই নানামুখি চাপ বা প্রলোভন কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। আদর্শে অটল ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তি এসেছিল তার হাতে ধরেই। আজ বঙ্গবন্ধুর সাধের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির গুরুদায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও আবারো বুঝিয়ে দিলেন, উন্নয়ন আসবে ঠিকই, কিন্তু তার মূল্য চুকাতে গিয়ে কোন আপস হবে না আদর্শের জায়গাটায়। এই করোনাকালে কত যে বিভ্রান্তি কতকিছু নিয়ে আর কত গুজবের কত না ওড়াউড়ি – সে সব অশুভ চর্চার বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয়ার জন্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি নিশ্চিত তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা আর শুভাশীষ স্বাধীনতাকামী এদেশের প্রতিটি অসাম্প্রদায়িক নাগরিকেরও। ভালো থাকুন শেখ হাসিনা। দীর্ঘজীবী হন আপনি। আপনি আছেন বলেই নিরাপদ আমরা আর আমাদের আগামী। বাংলাদেশ যখন তার বিজয়ের আরেকটি উৎসবের দ্বারপ্রান্তে তখন এর চেয়ে বড় স্বস্তির আর কী হতে পারে!