অনেকের মতে যানজটের কারণ ও আমার যুক্তি

ফারুক
Published : 9 April 2011, 06:05 AM
Updated : 9 April 2011, 06:05 AM

অনেকের মতামত অনুযায়ী যানজটের কারণ ও আমার মন্তব্যঃ
১। রোডের প্রশস্থতা
২। যেখানে সেখানে গাড়ি স্টপেজ
৩। দূর্ঘটনা এবং গাড়ির যান্ত্রিক সমস্যা
৪। প্রাইভেট কার
৫। জনসংখ্যা

(১) রোডের অপ্রশস্থতা : বর্তমানে ঢাকা সিটির প্রধান সড়ক গুলো মোটামুটি প্রসস্থ হিসেবে ধরা যায় এবং অপ্রশস্থ সড়ক প্রসস্থ করা সঠিক। কিন্তু অনেক প্রসস্থ সড়কেও যানজট বিদ্যমান। কারণ কয়েক কিলোমিটার ফাঁকা থাকা স্বত্বেও অন্য গাড়ীকে সুযোগ দিতে গিয়ে ট্রাফিককে সিগন্যাল দিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে পরিদর্শন করলে দেখা যায় যে পরিমাণ যানজট তারচেয়ে বেশি পরিমাণ সড়কই ঐ সময় অব্যবহৃত। সঠিকভাবে ব্যবহার হলে এত গাড়ির যানজট থাকতো না। প্রতিটি ২/৩মিনিট সিগন্যাল মানেই শতশত গাড়ির যানজট। যেখানে প্রতি মিনিটে / ২মিনিটে অন্তত গাড়ি গুলো ১ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারতো, সেখানে সব গাড়িকে জড়ো হয়ে বসে থাকতে হয়। দৃষ্টি দিয়ে দেখুন ঢাকা সিটিতে অনেক সড়কই সিগন্যালের কারণে খালি পড়ে থাকে অনেক সময় তা ধরা যায় না, তাই বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ রূপে রোডের অপ্রশস্থতা / রোডের সংকটকে দায়ী করা যায় না।

(২) যেখানে সেখানে স্টপেজ: বেশির ভাগ গাড়িই মাঝ রাস্তাতেই স্টপেজ দেয় তাই পেছনে একের পর এক গাড়ী গুলো বাধাগ্রস্থ হয়। তাই এমন জায়গায় স্টপেজ দেওয়া উচিত নয় যেখানে গাড়ী বাধাগ্রস্থ হয়। লোকাল গাড়ি বা স্টপেজ দিবে এমন সব গাড়ী সব সময় বাম লেনে সিঙ্গেল লাইনে করলেই হয়। এই জন্য ট্রাফিক পুলিশকে সচেতন থাকতে হবে। ট্রাফিক খেয়াল রাখলেই যেখানে সেখানে গাড়ী করবে না। তাই পার্কি সমস্যাকে সম্পূর্ণরূপে যানজট হিসেবে ধরা যায় না।

(৩) দূর্ঘটনা এবং যান্ত্রিক সমস্যা : কোন কোন সময় দুর্ঘটনার কারনে যানজট সৃষ্টি হয় এবং মাঝ রাস্তায় গাড়ির যান্ত্রিক ক্রটির জন্য পেছনের গাড়ী গুলো চলতে পারে না তাই যানজট সৃষ্টি হয়। কিন্তু সব সময় তো আর গাড়ির যান্ত্রিক ক্রটির / সড়ক দূর্ঘটনা হয় না। তাহলে সম্পূর্ণরূপে ইহাকে দায়ী করা যায় না। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির মূল কারণ পুরাতন গাড়ী। তাই বেশি পুরাতন গাড়ী ব্যস্ততম সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণাই সঠিক।

(৪) প্রাইভেট কারঃ যানজটের জন্য প্রাইভেটকারকে সম্পূর্ণ রূপে দায়ী করা যায় না। এই জন্য যে, প্রাইভেট দ্রুতযান গাড়ী। একটি বাসের চাইতে খুব দ্রুত মুভ / স্বল্প জায়গায় ইউটার্ন এবং দ্রুত চলতে পারে যদি সিগন্যাল না থাকে। সিগনালের দীর্ঘ সময়ের কারনেই এত গাড়িকে এক সঙ্গে দেখা যায়। তবে প্রাইভেটকার আরোহণকারী জনগণ যাতে বাসে যেতে অভ্যস্ত হয় সেই ধরনের উন্নত বাস ঢাকা সিটির জন্য প্রয়োজন। তখন তারাই প্রাইভেটকার বর্জন করবে পার্কিং এর ঝুট ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পেতে।

(৫) জনসংখ্যাঃ অনেকের মতামত জনগণ বেশি হওয়ায় যানজটের এই সমস্যা। আমি মনে করি বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী যানজটের মাত্রা অনেক বেশি। একটু ভাবুন, মানুষ কিন্তু সব একসাথে বের হয়ে যায় না রাস্তায়, সিগন্যাল পয়েন্ট গুলোই মানুষকে একসঙ্গে জড়ো করে। মানুষ রাস্তায় যে সময়টুকু থাকার কথা ছিলনা তার চেয়ে অধিক সময় থাকতে হচ্ছে রাস্তায়। দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গাড়ির আশায়। ১মিঃ – ৩০মিঃ পর্যন্ত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে জড়ো হয়ে যাচ্ছে অনেক মানুষ। আসলে সবাইতো একত্রিত হয়ে এক বারে আসে নাই। একজন ২ জন করে আসতে আসতে এই অনেক লোকের ভিড়। আর গাড়ী আসতে পারছে না, সিগন্যালের কারণে। আর যখন সিগন্যাল ছাড়ে তখন সব গাড়ী আসে একসাথে হুলুস্থূল ভাবে স্বল্প সময়ে সকল গাড়ী হতে লোকজন নামে এবং ওঠে। আর তাই মনে হয় মানুষের ভিড়। কিন্তু যদি নিদিষ্ট সময়ে একের পর এক গাড়ী সিগন্যাল ছাড়া আসতে পারতো তবে যাত্রী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। শৃঙ্খলার সহিত অল্প অল্প লোক স্বল্প সময়ে স্থান ত্যাগ করতে পারতো। তখন এত জনসংখ্যা রাস্তায় দেখা যেত না।

গাড়ী সংকটের কারণ এবং আমার প্রযুক্তিতে এই সংখ্যক গাড়িই যথেষ্ট:

আমার মতে ঢাকা সিটিতে যে প্রকার গাড়ী আছে তাতে জনগণ সুন্দরভাবেই যাতায়াত করতে পারতো। যদি একাধিক ট্রিপ দিতে পারতো। তবে কেন হচ্ছে না, ধরুন গাড়ী গুলো মিরপুর-১০ হতে সায়দাবাদ আপডাউন ট্রিপ দিবে, সে ক্ষেত্রে তার সিগন্যাল ব্যাতিত চিন্তা করলে ভাবা যায় সর্বোচ্চ ১.৩০ ঘন্টা মিনিটে পুনরায় মিরপুর ঘুরে আসতে পারে। মিরপুর-১০ থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে হলে সিগন্যালের চিন্তা করলে তাকে আটকাতে হবে (১) মিরপুর-১০, (২) আগারগাঁও, (৩) বিজয় স্মরণী (সংসদ ভবন রোড), (৪) র‌্যাংকস ভবন (বিজয় স্মরণী রোড), (৫) কাওরান বাজার, (৬) বাংলামটর, (৭) হোটেল শেরাটন, (৮) শাহাবাগ, (৯) পল্টন, (১০) মতিঝিল, (১১) সায়দাবাদ রেলক্রসিং, (১২) জনপথের মোড় (১৩) যাত্রাবাড়ী, তো এই ১৩টি সিগন্যাল অতিক্রম করে যেতে যেতে গাড়িটির সময় লাগে সিঙ্গেল ট্রিপেই ২ থেকে ২.৩০ঘন্টা। আসা যাওয়ায় সেই গাড়ির কমপক্ষে ৪/৫ ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। তাহলে যে সময়টুকু অযথা রাস্তায় ব্যয় হলো, ঐ সময়টিতে সে মিরপুর-১০ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আরও ২/৩ বার ট্রিপ মারতে পারতো। আর যদি বেশি ট্রিপ মারতে পারত তখন গাড়ীর সংকটে যাত্রীকে অপেক্ষা করতে হতো না, এই গাড়ী গুলোই ব্যাক করে এসে যাত্রীবহন করতে সক্ষম ছিল অপরদিকে নতুন গাড়ির প্রয়োজন পড়তো না। যাত্রীরা রিল্যাক্স ভাবে চলতে পারতো যার যার সময়মত অপেক্ষা করতে হতো না দীর্ঘ সময়। এত যাত্রীর ভিড় এবং গাড়ির ভিড়ও দেখা যেত না।

যানজট নিরসনে পূর্বের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ এবং এর ফলাফলঃ

(১) মহাখালী ফ্লাইওভার,
(২) বিজয় স্মরণী লিংক রোড
(৩) খিলগাঁও ফ্লাইওভার।
(৪) এলাকা ভিত্তিক সাপ্তাহিক ছুটি।
(৫) সময় সূচী পরিবর্তন।

(১+২+৩) : এত কোটি টাকায় এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও ফ্লাইওভার গুলোর কারণে আশেপাশের যানজটও সমাধান হয়নি। বরং অন্যান্য সড়কের সিগন্যালের কারণে ফ্লাইওভার, লিংক রোডেও যানজট বিদ্যামান যা সংবাদপত্র/ টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে। যানজটের ভয়াবহ পরিস্থিতি ফ্লাইওভারকেও ছাড় দিচ্ছে না।

(৪) এলাকা ভিত্তিক ছুটির বিষয়টি একটি সুন্দর পদক্ষেপ ছিল। আসলে এলাকা ভিত্তিক ছুটি জনগণের বাড়তি চাপ কমিয়েছে কিন্তু ঐ এলাকার কয়েকটি সিগন্যাল তো আর বন্ধ হয় নি। কারনেই জনসংখ্যার চাপ কমলেও সিগন্যালের শিকার হতে হয়েছে সকলকেই। তবে এলাকা ভিত্তিক ছুটিটি পরবর্তী সময়ে সুফল বয়ে আনবে।

(৫) সময় সূচী পরিবর্তন করে সুফল আসেনি তাও সিগন্যাল পয়েন্ট এর কারনেই। সময় পরিবর্তনের কারনে জনসংখ্যা বিভক্ত হয়ে যানবাহনে চলাচল করেছে। কিন্তু সিগন্যাল পয়েন্টে আটকাতেই হয়েছে। তাই এটাই প্রমাণ করে জনসংখ্যার পরিমাণ কমলে কিছুটা নিরসন হলেও প্রকৃত যানজট নিরসন সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে সিগন্যাল পয়েন্ট। তবে সময়-সূচী পরিবর্তনের ব্যাপারটাও পরবর্তীতে ভাল সুফল আনবে।

আমার প্রযুক্তিতে যানজট নিরসনে,
১। ফারুক-ইকরাম প্রযুক্তির মিনি ফ্লাইওভার
২। কিছু স্থানে শর্ট আন্ডারপাস।
৩। পার্কিং ব্যবস্থার পর্যাপ্ত স্থান
৪। অপ্রশস্ত সড়ক প্রশস্ত করণ। -ই যথেষ্ঠ

প্রযুক্তির সুফল:

* লালবাতি সিগন্যাল থাকবে না / অপেক্ষা করতে হবে না।
* মোড়ে মোড়ে বেশিরভাগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ী চলবে।
* যানজট এবং জনজট থাকবে না।
* যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
* বর্তমান গাড়ী সংখ্যা দিয়ে দিগুণ জনসংখ্যা বহন সম্ভব।
* বর্তমান জ্বালানী সংকটে মূল্যবান তেল/গ্যাস অপব্যয়ের হাত থেকে রেহাই পাবে।
* অন্যান্য।

উপরোক্ত তথ্যাবলি ও ভিডিওটি দেখে এখন আপনারাই নির্বাচন করুন রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ- ১। সড়কের অভাব, ২। রিক্সা, ৩। প্রাইভেটকার, ৪। পার্কিং ৫। নাকি সিগন্যাল পয়েন্ট?

—————————————
ফিচার ছবি: ইন্টারনেট