তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সড়ক দুর্ঘটনা, টার্নিং পয়েন্ট ও রোড ডিভাইডার না থাকায় নয়তো?

ফারুক
Published : 21 August 2011, 02:27 AM
Updated : 21 August 2011, 02:27 AM

১৩ আগষ্ট, শনিবার সকাল আনুমানিক ১২.২০ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের সিইও মিশুক মুনির, তারেক, ওয়াসিম, জামাল ও মাইক্রোবাস চালক মোস্তাফিজুর রহমান।

যানজটের যেমন অনেক কারণ থাকতে পারে, তেমন সড়ক দুর্ঘটনারও অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে যেমন : চালকের অন্যমনষ্কতা, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা, হেলপার দ্বারা গাড়ী চালানো এবং ওভারটেকিং প্রবণতাসহ নানা কারণ।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অন্যান্য কারণ গুলোর উপর জোর দিলেও মহাসড়কগুলোর গঠন প্রকৃতি, টার্নিং পয়েন্ট, নির্দিষ্ট স্থানে উপযুক্ত ট্রাফিক সাইন ব্যবহার এবং রোড ডিভাইডারের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয় না অথবা এগুলোকে দায়ী করে কোন ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় না।

চালকের অসর্তকতার পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর গঠন প্রকৃতি, টার্নিং পয়েন্ট, ট্রাফিক সাইন ব্যবহার এবং রোড ডিভাইডার এগুলোও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যোগাযোগ মন্ত্রীর মতে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরসহ ৫ জনের সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি যেভাবে বলা হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত সংবাদপত্র থেকে হুবহু:

প্রাথমিকভাবে জেনেছি, তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি একটি বাসের পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। বাসটিকে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আরেকটি বাস আসলে সংর্ঘষ হয়।

তিনি বলনে, "এভাবে ওভারটেক করা ঠিক হয়নি। রাস্তা বা সিগনালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমরা তদন্ত করে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

জানা যায় সড়ক দুর্ঘটনাটি মুখোমুখি ঘটে। মুখোমুখি সড়ক দুর্ঘটনাগুলো খুবই ভয়াবহ। আমার কথা হচ্ছে মুখোমুখি সংঘর্ষ কেন হয়? কারণ রোড ডিভাইডার না থাকলে মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়। তাহলে কেন রোড ডিভাইডার দেওয়া হয় না। এই কথাটা একজন মন্ত্রী হিসেবে কেন উল্লেখ করেনা বা ব্যবস্থা গ্রহন করেনা, এছাড়া মহাসড়কগুলোতে বেশিরভাগ ভয়াবহ্ দুর্ঘটনা গুলো ঘটেই কোন না কোন টার্নিং পয়েন্টে। রোড ডিভাইডার না থাকলে টার্নিং পয়েন্টে সামান্য ক্রটির জন্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা।

== এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হচ্ছে ==
* ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি কি কোন মোড় / টার্নিং পয়েন্টে ঘটেছিল ?
* যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে সর্বোচ্চ কত গতিতে যানবাহন চলবে তার ট্রাফিক সাইন ছিল ?
* সেই সড়কে কি রোড ডিভাইডার ছিল ?

এগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও যোগাযোগমন্ত্রী রাস্তার সমস্যা বা সিগন্যালের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেনি বলে উল্লেখ করেছে। তিনি ওভারটেক করাকেই একমাত্র দায়ী করেছে। আমার কথা হচ্ছে, মহাসড়কে যানবাহন কোন কোন ক্ষেত্রে ধীরগতির গাড়িকে ওভারটেক করতে হয়। ডিভাইডার বিহীন সড়কে ওভারটেক করতে হলে, যাকে ওভারটেক করবে তার গতি, নিজের গাড়ির গতি এবং বিপরীতমুখী গাড়ির গতি চালককে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তবে রোড ডিভাইডার থাকলে এই ধরনের মুখোমুখি সংর্ঘষের আশংকা থাকে না। এছাড়া টার্নিং পয়েন্ট গুলোতে উপযুক্ত ট্রাফিক সাইন এবং সর্বোচ্চ গতিসীমা উল্লেখ করা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়ানো যায়। যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ চালকদের উপর দোষ চাপানোর পাশাপাশি মহাসড়কে রোড ডিভাইডার না থাকা, টার্নিং পয়েন্টে উপযুক্ত ট্রাফিক সাইন ব্যবহার না করা এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো চিহ্নিত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।

আমি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাইনি। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা রয়েছে। কয়েক বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর এলাকার একটি টার্নিং পয়েন্ট / বাঁকে ষ্টার লাইন ও একটি লোকাল বাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে প্রায় ১৮ জন মারা গেছে। অনেকেই পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাশ গুলো দেখতে যাই। মুখোমুখি সংঘর্ষ যে কত ভয়াবহ! তাদের শরীরের অন্যান্য অংশগুলো ও বেশিরভাগ লোকের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল, তাদের পরিবারের সদস্যরা চিনতেও পারছেনা, অনেকে আবার তাদের পোষাক এবং বিভিন্ন চিহ্ন দেখে চিনতে পেরেছে, লাশগুলোর পা এবং মাথা উচু করে তুলবে ধরার জায়গাও নাই। এই করুণ চিত্র দেখে নাকি কিছু লোক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আমিও প্রায় জ্ঞান হারানোর পথে ছিলাম। মহাসড়কের দুর্ঘটনা যে কত ভয়াবহ তা সেদিন বুঝলাম।

আমি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও দিনে যানজটের নগরী ঢাকায় চলেছি কয়েকবছর, তার কিঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে জনস্বার্থে তথ্য গুলো উপস্থাপন করলাম। যদি কোন উপকারে আসে বলে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ সম্পর্কে এই লিংকটি দেখতে পারেন : – গত এক বছরে কুমিল্লায় ৪৯৬টি সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছে ২৫৫ জন কুমিল্লা জেলায় প্রতিনিয়িত সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। এগুলোর বেশিরভাগই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ৯৭ কিলোমিটার অংশের ৬০টি বাঁক ও ভঙ্গুর রাস্তায় ঘটছে।

তাই শুধু চালকদের দোষারোপ করলেই হবে না, সড়ক গঠন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার উপরেও অনেকটা মহাসড়কের ভয়াবহ দুর্ঘটনা গুলো ঘটছে, সেদিকেও দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরী। নয়ত তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মত আরও মূল্যবান সম্পদ আমাদের হারাতে হবে।