শাষক যখন শোষকঃ ৪০ বছরে কোন সরকার জনগনের অধিকার রক্ষা করেনি, বর্তমান প্রেক্ষাপট আরও নাজুক!

ফজল মাহমুদ
Published : 10 April 2012, 07:55 AM
Updated : 10 April 2012, 07:55 AM

বাজার মূল্য এবং দরিদ্র জনগনের বাস্তব অবস্থানঃ সরকার কোনো রকম পরিকল্পনা ও বাছবিচার ছাড়াই রাতারাতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে তড়িঘড়ির কারণে চরম ভোগানিৱতে পড়ছেন নাগরিক সমাজ।ঢাকা শহরে বর্তমানে প্রায় সাত লক্ষাধিক রিকশা শ্রমিক রয়েছেন। নগরীর যোগাযোগব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা ব্যাপক। শতবর্ষ আগে থেকেই এই ত্রিচক্রযানের প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন রিকশা শ্রমিকেরা। অন্য দিকে নগরীর ভাসমান মানুষের বাস বস্তিতে। স্বল্প আয়ের মানুষ দিনভর পরিশ্রম শেষে বস্তিগুলোতে ঠাঁই নেয়। বস্তিবাসির জীবনমানের উন্নয়ন কিংবা তাদের জন্য বিকল্প আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ২৫-৩০ লাখ লোক রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকার বস্তিগুলোতে বসবাস করেন।পুনর্বাসন না করে গৃহহারা মানুষজন উচ্ছেদের সিদ্ধানেৱও ক্ষুব্ধ তারা।এই শহরে রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি নির্মাণ শিল্পোদ্যোক্তা।বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে এই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে।

উচ্ছেদাভিযান এবং গৃহহীন বস্তিবাসীঃ সদ্য উচ্ছেদকৃত কড়াইল বস্তির সস্ত্রীক বাসিন্দা বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৭০ বছরের বৃদ্ধ হাসমত আলী বললেন পানি থাকে না, বিদ্যুৎ থাকে না, গ্যাস নেই, মশার কামড়, বাথরুমের সমস্যাসহ নানা ধরনের ঝামেলা বস্তিতে। এত কষ্ট পাওয়ার পরও কেন ঢাকায় আছেন জানতে চাইলে তিনি কষ্টের হাসি হেসে বলেন, "বাপের এক কাঠা ভিটাও যদি থাকত তাহলে শহরের এই নর্দমায় পড়ে থাকতাম না। প্রভাবশালীরা টংঘর তৈরি করে আমাদের মতো ভাসমানদের ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করে। ওই অর্থ সরকারের বড় বড় আমলা ও রাজনৈতিক নেতার পকেটেও যায়। কিন্তু তারপরও স্বস্তিতে থাকে না বস্তিবাসি।

যানজট নিয়ন্ত্রনঃ রিকশা ও ভ্যানচালকের বাস্তবতাঃ প্যাডেল চলে না। মাঝে মধ্যে মনে হয় রাসৱায় শুয়ে পড়ি। কিন্তু তাতে যে সংসার চলবে না। না খেয়ে মরে যাবে স্ত্রী-সন্তানেরা। দিনভর কষ্ট করেও যে উপার্জন তা দিয়েই তো সংসার চলছে না। তার ওপর সব রাস্তায় রিকশা চলতে দেয়া হচ্ছে না। রাস্তা যত সঙ্কুচিত হচ্ছে আয়ও ততই কমছে। ট্রাফিক পুলিশের ইচ্ছে হলেই পিটুনি দেয়। রোজ রোজ নতুন নিয়ম। আজ এ রাস্তায় তো কাল ও রাস্তায় রিকশা বন্ধ। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে শরীরের পানি বের হয়ে যায়। একটু এদিক-সেদিক হলে যাত্রীদের হাতেও মার খেতে হয়। কথাগুলো হাজারীবাগের বৌবাজার এলাকার রিকশাচালক শফিকের। ব্যয়ের সাথে আয়ের কোনোই সঙ্গতি নেই। এক বেলা রিকশা চালাতে না পারলেই দুই বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। রিকশা মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে সবাই আমাদেরকে উজাড় করে দিয়ে দেয়। নির্বাচন শেষ হলেই আর কেউ চেনে না। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের রুটি-রুজির ওপরও হাত দেয়।

আইন, বিচার এবং বিবম্বনাঃ গতকাল মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেয়ার সময় তার সামনে রাখা মোটা ভলিউম থেকে কিছু বিষয়ে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা যে ভলিউম থেকে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে রেফারেন্স দিচ্ছিলেন সেই একই ভলিউমের কপি ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সামনেও ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা তার সামনে খোলা ভলিউম থেকে যে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করেন তার সাথে অমিল দেখা দেয় ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের সামনে রাখা ভলিউমের। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও জানান তাদেরকে যে ভলিউম দেয়া হয়েছে তার সাথেও পৃষ্ঠা নম্বরের মিল নেই। এ নিয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়।

পৃষ্ঠা নম্বরের গরমিল নিয়ে ট্রাইব্যুনাল বারবার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য আইনজীবীও চেষ্টা করেন গরমিল নিয়ে সমস্যা দূর করতে।একপর্যায়ে পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক দুই পক্ষের আইনজীবীদের বলেন, আমরা যেভাবে মিলিয়েছি এটার সাথে মিল রেখে আপনারাও পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেন। আমাদের এটা হবে মূল কপি। এর সাথে মিল রেখে আপনারাও মিলিয়ে নিন। তখন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, পৃষ্ঠা নম্বর মিলিয়ে নেয়া কোনো কঠিন কাজ হবে না। কিন্তু তাতে কিছু আইনি সমস্যা আছে। আপনাদের কাছে যে কপিটা থাকবে আইন অনুযায়ী সে কপিটাই আমাদের কাছেও থাকার কথা। কিন্তু এখানে তো তা হচ্ছে না। ভিন্ন ভিন্ন কপি আপনাদের এবং আমাদের কাছে। মাওলানা সাঈদীর অপর আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের কপির সাথে আমাদের কপির পৃষ্ঠা নম্বর মেলালে আরগুমেন্ট পেশের সময় আমাদের সমস্যা হবে। কারণ আমরা যে রেফারেন্স উল্লেখ করব তার সাথে মিল পড়বে না তখন। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এ সময় পাশ থেকে তাজুল ইসলামের প্রতি একটু উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা আপনাদেরটা মিলিয়ে নিন। তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটরের এ আচরণে আপত্তি জানিয়ে বলেন, আমি কি আপনার চাকরি করি। আপনাদের ভুল আমরা মিলিয়ে নেবো কেন। আপনারা মিলিয়ে দিন। তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রসঙ্গে বলেন, তারা কি এভাবে আমাদের বলতে পারেন? তারা এভাবে আমাদের বলতে পারেন না। তিনি আমাদের অনুরোধ করতে পারেন। কিন্তু তিনি আমাকে অর্ডার দিয়ে বলছেন আমাদের মিলিয়ে নিতে হবে। এ সময় বিচারপতি নিজামুল হকও প্রসিকিউশনকে লৰ করে বলেন, আপনারা এভাবে বলতে পারেন না। আপনারা অনুরোধ করতে পারেন।এরপর বিচারপতি নিজামুল হক আবারো আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বলেন, আপনারা একটু কষ্ট করে মিলিয়ে নেন আমাদের কপি অনুযায়ী। তখন তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এভাবে উল্লেখ থাক যে, আপনাদের যে ডকুমেন্ট দেয়া হয়েছে তার এত এত পৃষ্ঠায় উক্ত বিষয়গুলো আছে। আর আমাদের যে ভলিউম দেয়া হয়েছে তার এত পৃষ্ঠায় উক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ আছে। তখন বিচারপতি নিজামুল হক ৰোভের সাথে তাজুল ইসলামকে বলেন, আপনি এটা বললেন তো? আমি মানলাম না। আমাদের কপি অনুযায়ীই মেলাতে হবে। তখন তাজুল ইসলামও ক্ষোভের সাথে বলেন, এভাবে হলে তো আমরা জাস্টিস (ন্যায়বিচার) পাবো না। প্রতি উত্তরে বিচারপতি নিজামুল হকও ক্ষোভের সাথে বলে বসেন 'জাস্টিস (ন্যায়বিচার) করব না আমরা'।

এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, অনুমতি দিলে একটা কথা বলতে চাই। বিচারপতি নিজামুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, আপনাদের অনুমতি দেয়ার দরকার আছে? অনুমতির তোয়াক্কা করেন আপনারা? আপনারা তো বলে যাচ্ছেন। বলেই যাচ্ছন। বলতে থাকেন।

তখন মিজানুল ইসলাম তার আবেদন পেশ করে বলেন, প্রসিকিউশন যেটা বলেছেন সেটা ঠিক হয়নি। আপনিও ন্যায়বিচার করব না বলে যেটা বললেন সেটাও ঠিক হয়নি। তখন বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আই এগ্রি উইথ ইউ।

দলীয় প্রার্থীর বাদ পড়ায় খাদ্য কর্মকর্তাকে মারধর, অফিস ভাঙচুরঃ নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের ফিল্ড সুপারভাইজার ও উপজেলা পরিষদের গাড়িচালক পদে দলীয় প্রার্থীকে না নেয়ায় গতকাল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অফিস ভাঙচুর ও দুই কর্মকর্তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতর জলঢাকা অফিসের পাঁচটি ফিল্ড সুপারভাইজার পদে শুক্রবার ও জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়িচালক পদে শনিবার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিনই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারদলীয় লোকজনের নাম না থাকায় গতকাল সকালে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বাহাদুরের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়নি এ অভিযোগে দুপুর ১২টায় তারা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল কার্যালয় এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল জলিল মণ্ডল বাধা দিলে তাকে বেদম মারদর করা হয়। এ ছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মতিয়ার রহমানকে লাঞ্ছিত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দূল জলিল মণ্ডলকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

নিরাপত্তাহীনতায় সাংবাদীকতাঃ বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। গতকাল সন্ধ্যায় পুরানা পল্টনের ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অফিস দখল করতে অতর্কিত এই হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় বাধা দিতে এসে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ পাঁচজন ফটোসাংবাদিক। সন্ত্রাসীরা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নয়া দিগনেৱর চিফ ফটো সাংবাদিক শফিউদ্দিন আহমেদ বিটুকে হত্যার হুমকি দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ফটো সাংবাদিকেরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের কর্মকর্তাসহ কয়েকজন বসা ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগকর্মী পরিচয় দেয়া রম্নবায়েত ও জয়, আসলাম, তামিম, রাশেদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অফিসে হামলা চালায়। এ সময় তারা অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ের সাইবোর্ড ভাঙার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা এসে হামলাকারীদের কাছে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা অশস্নীল ভাষায় গালাগাল দিয়ে তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা শফিউদ্দিন আহমেদ বিটুকে টানাহেঁচড়া ও হত্যার হুমকি দেয়। তাদের হামলায় আহত হন ইনকিলাবের ফটো সাংবাদিক ইকবাল হাসান নান্টু, বাংলার চোখের রফিক উদ্দিন, আসাদসহ কয়েকজন। সন্ত্রাসীরা এ সময় ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল, কম্পিউটার ও অফিসের আসবাবপত্র ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে। সাংবাদিকদের কয়েকটি ক্যামেরাও ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। হামলার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ ছুটে আসে।

সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা ফটো সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। একপর্যায়ে খবর পেয়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইনসহ অন্যান্য নেতারা ঘটনাস্থলে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

ফাটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ বিটু বলেন, জনৈক মহিলার নেতৃত্বে একদল কুচক্রী কিছু দিন ধরে তাদের অফিস ও সরকার কর্তৃক বরাদ্দ পাওয়া ভবন দখলের পাঁয়তারা করছে। এরই অংশ হিসেবে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা গতকাল দখল করতে এ হামলা চালায়।

পুলিশের বাড়াবাড়িঃ বিচারপতি আবদুর রউফঃ সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেছেন, দেশের রাজনীতি এখন পাতি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। সরকার সব কিছু পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। নীতিহীন রাজনীতিবিদ দিয়ে দেশ চলতে পারে না। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সুশীল ফোরাম আয়োজিত 'সাংঘর্ষিক রাজনীতি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুর রউফ এ কথা বলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এমিপরাঃ বিদ্যুতের তীব্র সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখিতা ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থায় প্রাকবাজেট আলোচনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের পাঁচটি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

কুইক রেন্টালের দায় কার? জনগণের না সরকারেরঃ সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত 'বিদ্যুৎ সংকট: জনস্বার্থ' শীর্ষক গোল টেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, তিন বছরের পরিকল্পনায় চাহিদা ও উৎপাদনের সমন্বয় করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। চাহিদার মোকাবিলা কিভাবে হবে, সেটাও পরিস্কার নয়। এই তিন বছরে জ্বালানি তেলের ব্যয় বেশি হয়েছে। গ্যাসের উৎপাদনের ধারাবাহিকতাও ধরে রাখা যায়নি। সরকারের মনে রাখা উচিত, গালভরা কথায় কাজ হয় না। তাদের উচিত ছিল, ঘাটতি মোকাবিলায় জনগণের কাছে সময় চেয়ে নেওয়া।

তিনি আরো বলেন, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করতে হলে সীমান্ত, সমুদ্রের পানি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রের বাধা অতিক্রম করতে হবে। সর্বোপরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে লুটপাট বন্ধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দলের অন্দোলনে দিন বদলের প্রতিশ্রুতিতে বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবেলার কথা বলা হয়েছিল। আজ অনেক প্রতিশ্রুতি সরকারের জন্য আত্মঘাতী হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আগামী সংসদ ও রাজপথ বিদ্যুৎ ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত থাকবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বিষয়ে গুরুত্ব দেন তিনি।

সড়কপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি t অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, সড়কখাতের বিভিন্ন পর্যায়ে এক শ্রেণীর মালিক-শ্রমিক নেতাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি এবং বিআরটিএ, বিআরটিসি ও সড়ক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সোমবার সকালে রাজধানীর মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট ভবনে নৌ, সড়ক ও রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

এছাড়া কমিটির পক্ষ থেকে অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ, জাল-ভুয়া লাইসেন্সধারী গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, যথাযথভাবে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা ও রুট পারমিট প্রদান, প্রচলিত আইন মেনে গাড়ি চালানো এবং দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

প্রিয় পাঠক,
এগুলো কি আমাদের জাতীয় সমস্যা নয়? তবে এগুলো সমাধানে আমরা কেন আন্তরিক সহনশীল হতে পারছি না? জাতীয় স্বার্থে আমরা কেন মতৈক্যে আসি না? আমরা কেন আজও শুধু বিরোধীতার স্বার্থে বিরোধীতা করছি? আমরা কোন স্বার্থে সত্যকে অনবরত প্রত্যাখ্যান করেই চলেছি? শুধু রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থই কি এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা নয়? তবে সাধারণ ক্ষেটে খাওয়া মানুষের অবস্থান আজ কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব কি বতর্মান সরকারের কাছে রাখা যায়?